আন্তরিক উদ্যোগ চাই
রাজধানী আগরতলা শহরে যানজট নিত্যদিনের সমস্যা।যত দিন রাজধানী যাচ্ছে তা বাড়ছে বৈ কমছে না। এটি সত্যিই উদ্বেগের। ছোট্ট শহর আগরতলা। লোকসংখ্যা প্রায় ৫৫.৫০ লক্ষ হবে। এই শহরে এত ট্রাফিক জ্যাম কেন? উত্তর কারও জানা নেই। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল অবস্থা সকাল, সন্ধ্যা, দুপুর, রাতে। চলে যান মোটরস্ট্যান্ড কিংবা মহারাজগঞ্জ বাজারে কিংবা বটতলা কিংবা জিবি বাজারে। দক্ষিণ দিকে বাধারঘাট, আমতলি বাইপাস পর্যন্ত এই শহরের পরিধি। তাও জ্যামে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রতিদিন জনসাধারণের। এর পেছনে কারণ একটাই -সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। বৈজ্ঞানিক পার্কিং ব্যবস্থা নেই। গাড়ি চালনায় শৃঙ্খলা নেই। মানুষের বৃহদংশের মধ্যে আইন ভাঙার প্রবণতা প্রবল। শুধু ট্রাফিক পুলিশকে দোষ দিলে বিষয়টিকে লঘু করে ফেলা হবে। আসলে সবকিছু কি আইন দিয়ে হয়? একটা সময় ট্রাফিক পুলিশকে টেরিফিক পুলিশ এবং ট্রাফিক দপ্তরকে টেরিফিক দপ্তর বলা হতো। কিন্তু সময়কালে ট্রাফিক দপ্তর কিছুটা ‘মানুষ’ হয়েছে বলা যায়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় লোকবল কম। যেহারে আগরতলা শহরে যানবাহন বাড়ছে প্রতিদিন সেই তুলনায় জায়গায় জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ যান নিয়ন্ত্রণের জন্য নেই। অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা আদায়ের অভিযোগ ওঠে। এটা সরকারের একটা পলিসি। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি চাই। তাই চালান কেটে ফাইন আদায়ও জরুরি। এর জন্য স্মার্ট শহরে এখন শতাধিক ক্যামেরা রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ মাঝে মধ্যেই অভিযান করে। যানবাহন তুলে নিয়ে যায় বেআইনিভবে পার্কিং করার দায়ে। কিন্তু তা জারি করতে হবে ধারাবাহিকভাবে। এছাড়া আগরতলা শহরে পার্কিং ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। পার্কিং ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। আইনকে কঠোর হতে হবে। তাহলেই জনসাধারণ কিছুটা মানবে। একটা সময় সবাই প্লাস্টিকের অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেলমেট পরতো। এরপর সবাই পরতে আরম্ভ করলেন আইএসআই মার্কা হেলমেট। এরপর শুরু হয় পেছনের সিটে বসা (টু হুইলারের ক্ষেত্রে) ব্যক্তির জন্য বাধ্যতামূলক হেলমেট পরিধান করা। ট্রাফিক দপ্তর একে বাধ্যতামূলক করেছে বলেই ৯৯% মানুষ এখন ডবল হেলমেট ব্যবহার করছে। সুতরাং আইন প্রণয়নকারীকে কঠোর হতে হবে। দ্বিতীয়ত যে হারে আগরতলা শহরে গাড়িঘোড়া বাড়ছে এরজন্য প্রচুর ট্রাফিক পুলিশ কর্মী চাই।এরজন্য কর্মী নিয়োগ করতে হবে। প্রয়োজন টিএসআরকে কাজে লাগানো যেতে পারে।পার্কিং ব্যবস্থা আগরতলায় অত্যন্ত ঢিলেঢালা। কোনো শৃঙ্খলা নেই। একে শৃঙ্খলায় আনতে হবে। পুর কর্পোরেশন, বাজার কমিটি এবং প্রশাসন, ট্রাফিক দপ্তরকে যৌথভাবে এই কাজটি করতে হবে। মানুষকে প্রতিনিয়তই সচেতন করতে হবে। একশ্রেণীর মানুষ আইন ভাঙার প্রতিযোগিতা করেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি এবং আইন প্রণয়ন করতে হবে। হাইওয়েতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এজন্য জেলা পুলিশকে হাইওয়ে পুলিশ পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে নজরদারি বাড়াতে হবে।
রাতের বেলা একাংশ গাড়ি চালক, বাইক চালক আইনের সঠিক ব্যবহার করতে জানে না। তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশকে অভিযান করতে হবে। বিশেষ করে রাতের বেলায় যান চালকরা বেপরোয়া হয়ে যায়। তখন ট্রাফিক পুলিশের দেখাই পাওয়া যায় না। ট্রাফিক পুলিশকে রাতের বেলায়ও সক্রিয় থাকতে হবে। না হলে কোনোমতেই বেপরোয়া যান চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে না।
বেপরোয়াভাবে যানচালনার ফলেই বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনার যদিও নানা কারণ থাকে মারাত্মক স্পিড, ওভারটেকিং প্রবণতা, মদমত্ত অবস্থায় গাড়ি চালনা, অসাবধানতাবশত গাড়ি চালনা, রাতে আইনের সঠিক ব্যবহার না জানান, সর্বোপরি ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা – সবমিলিয়ে ট্রাফিক দপ্তরকে একদিকে কর্মীস্বল্পতা দূরীকরণে উদ্যোগ নিতে হবে, অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে রাস্তায় নজরদারি বাড়াতে হবে। যান নিয়ন্ত্রণে শৃঙ্খলা থাকা দরকার। পার্কিং ব্যবস্থাকে বিজ্ঞানসম্পত করতে হবে, তাহলেই যদি রাজধানীর যান নিয়ন্ত্রণে কিছুটা রাশ টানা যায়। এ নিয়ে প্রশাসনকে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।