নারিকেল কুঞ্জে সূচনা ইউনিটি প্রোমো ফেস্ট ২৫,পর্যটন উৎসব রাজ্যের আর্থিক বুনিয়াদ দৃঢ় করবে: মুখ্যমন্ত্রী!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-ধলাই জেলার গন্ডাছড়া মহকুমার নারিকেল কুঞ্জে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার হাত ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো দুদিনব্যাপী ইউনিটি প্রোমো ফেস্ট ২০২৫।
জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া ও উৎসাহের কারণে উৎসবটি এখন দুদিনব্যাপী চলবে। এই উৎসব কেবলমাত্র একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয় বরং শান্তি সম্প্রীতি এবং ঐক্যের শক্তিশালী বার্তা বহন করে। যা ত্রিপুরার প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক চেতনাকে প্রতিফলিত করে। উদ্বোধনের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত শিশু উদ্যান পার্ক-এর সূচনা করেন। এই পার্ক কচিকাঁচাদের বিনোদন ও শিক্ষার জন্য একটি আধুনিক স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে যা নারিকেল কুঞ্জের পর্যটন আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত ইউনিটি প্রোমো ফেস্টের প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, উপস্থিত ছিলেন পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, ধলাই জেলা সভাধিপতি সুস্মিতা দাস, বিধায়ক রঞ্জিত দাস, বিধায়ক সঞ্জয় মানিক ত্রিপুরা, বিধায়িকা নন্দিতা দেববর্মা রিয়াং, এমডিসি ভূমিকা নন্দ রিয়াং, পর্যটন দপ্তরের সচিব ইউকে চাকমা, জেলাশাসক বিবেক এইচবি, জেলা পুলিশ সুপার সহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,
পর্যটন দপ্তরের কর্মকর্তা, হাজারো পর্যটক এবং স্থানীয় নাগরিক।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নারিকেল কুঞ্জকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি জানান, সরকার ইতিমধ্যে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চার কোটি টাকা ব্যয়ে ডম্বুর জলাশয়ে হাউসবোট সার্ভিস চালু করা। গত বছর প্রোমো ফেস্ট মাত্র ৪ টি স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মানুষের চাহিদার কারণে এ বছর আরও ২টি স্থান যুক্ত করা হয়েছে বিলোনীয়া, উদয়পুর, জম্পুইহিল, নীরমহল, আগরতলা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটন উৎসব রাজ্যের আর্থিক বুনিয়াদ আরও সুদৃঢ় করবে। তিনি বলেন, গত বছর মাত্র নয়জন হোমস্টে মালিককে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছিল যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে একশো পঞ্চাশটি।এদিন হোমস্টে ব্যবসার সাফল্যের ভিত্তিতে তিনজন মালিককে পুরস্কৃত করা হয়। একটি হোমস্টের মালিক জানান এক বছরে বাইশ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছেন। এই ধরনের উৎসব দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করার পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়কে উজ্জীবিত করে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন ডম্বুর জলাশয়কে নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেছেন।
পাশাপাশি কমলপুর হয়ে আমবাসা গন্ডাছড়া শান্তির বাজারের জন্য ন্যাশনাল হাইওয়ের প্রস্তাব রেখেছেন সড়ক পরিবহণ মন্ত্রীর নিকট। তিনি আশাবাদী খুব শীঘ্রই ওই সড়কটি পাবেন।এতে উপজাতি অংশের পরিবারগুলির আত্মসামাজিক বৃদ্ধি পাবে।ওইদিন রাজ্যের শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হাত ধরে আকাশপ্রদীপ ছাড়া হয়।
পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী রাজ্যের সার্বিক পর্যটন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নারিকেল কুঞ্জকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ডম্বুর জলাশয়কে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। উদয়পুর বনদুয়ারে ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক নির্মাণ, ছবিমুড়া, জিরানীয়ায় নিকো পার্ক, উনকোটি, জম্পুইহিল ইত্যাদি স্থানে একাধিকবার পরিকল্পনা সরকার হাতে নিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন শুধু একটি জাতি গোষ্ঠী দিয়ে হবে না। সকলের সহযোগিতায় এলাকার উন্নয়ন সম্ভব। তাই গত বছরে প্রোমো ফেস্ট নামটিকে সংযুক্ত করে ইউনিটি প্রোমোফেস্ট করা হয়েছে।পর্যটন দপ্তরের সচিব ইউকে চাকমা দপ্তরের একাধিক অগ্রগতি ও পরিসংখ্যান তুলে ধরেন যা রাজ্যের পর্যটন খাতের দ্রুত উন্নয়নের সাক্ষ্য দেয়।
ইউনিটি প্রোমো ফেস্ট ২০২৫ শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক আয়োজন নয় বরং ত্রিপুরার ঐক্য সংস্কৃতি এবং অগ্রগতির চেতনা উদ্যাপনের এক মিলনমেলা। সরকারের পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এবং জনগণের অংশগ্রহণ এই উৎসবকে আরও স্মরণীয় করে তুলেছে। ওইদিন রাতভর রাজ্যের এবং বহিঃরাজ্যের শিল্পীদের দ্বারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে রাজ্যের উনিশটি জাতি গোষ্ঠীর চিরাচরিত প্রথায় ড্রেস পরিধান করে প্রদর্শন করা হয়।