November 8, 2025

ড্যামেজ কন্ট্রোলে তৎপর নয়াদিল্লী ফের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী-মথা সুপ্রিমো!!

 ড্যামেজ কন্ট্রোলে তৎপর নয়াদিল্লী ফের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী-মথা সুপ্রিমো!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিজেপি-তিপ্রা মথার মতবিরোধ রুখতে নয়াদিল্লী পুরোপুরি তৎপর হয়ে উঠেছে। নয়াদিল্লীর নির্দেশে তাই ১২ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এবং তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। জানা গিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডাকে আগামী সপ্তাহে বৈঠকের জন্য শনিবার ব্যাঙ্গালোর হয়ে নয়াদিল্লী যাবেন মথা সুপ্রিমো। এর ঠিক আগ মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে মথা সুপ্রিমোর বৈঠক ঘিরে নয়া গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।এদিকে, গত ৪ অক্টোবর নয়াদিল্লীতে মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণকে পাশে বসিয়ে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা ঘোষণা করেছেন, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যেই নর্থ ইস্টের ৮টি রাজ্যকে নিয়ে একটি জনজাতি রাজনৈতিক দল গঠিত হবে। যদি তা হয় তবে রাজ্যে মথা-বিজেপি জোটে প্রভাব পড়তে পারে। নয়া রাজনৈতিক দল ঘোষণার আগেই ত্রিপুরায় বিজেপি-মথার মতবিরোধ নিরসন চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারে যেসব শর্তে তিপ্রা মথা শামিল হয়েছিল এর একটিও পূরণ হয়নি।যদিও সরকারে শামিলের আগে মথার প্রধান শর্ত ছিল সাংবিধানিক সমাধান।মন্ত্রিসভায় মথার তিনজন বিধায়ককে ক্যাবিনেট মন্ত্রী পদে নির্বাচিত করতে হবে। যদিও তা হয়নি। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ২ মার্চ নয়াদিল্লীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পৌরোহিত্যে জনজাতি জনসমাজের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বহুচর্চিত ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে। এমনকী ত্রিপাক্ষিক চুক্তি ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে গত ১ আগষ্ট মথা নেতৃত্বের সর্বশেষ বৈঠকও হয়েছিল। যদিও এখন পর্যন্ত ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে সীলমোহর প্রদান করা হয়নি। তিনজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীও মিলল না মথার।
শুধু তাই নয়, মথার বিধায়ক অনিমেষ দেববর্মাকে যে দপ্তর দেওয়ার প্রতিশ্রতি ছিল তাও দেওয়া হয়নি। এমনকী বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মাকেও পূর্ণমন্ত্রী করা হয়নি। উল্টো এর মধ্যে নয়া মন্ত্রী শপথ নিয়ে নিলেন। যদিও প্রতিশ্রুতি ছিল মথা থেকে তিনজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী করা হবে। এ নিয়ে ঘরে বাইরে একপ্রকার কোণঠাসা মথা নেতৃত্ব। মথার নেতা কর্মীদের ক্ষোভ বর্তমানে এমন পর্যায়ে এসেছে যে গত ১৫ অক্টোবর মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছেন বিজেপি সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা হবে। এরপরই একপ্রকার ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে নয়াদিল্লী।বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সাথে মথা সুপ্রিমোর বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্যের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তারা একসাথে কাজ করবেন। ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনের ইস্যুতে মথার পাশে থাকবে শাসকদল। নয়াদিল্লীতে আসন্ন
ত্রিপাক্ষিক চুক্তি নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শাসকদলের নেতৃত্বরা সমর্থন জানাবেন বলে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিপ্রা মথা নেতৃত্বকেও সরকারবিরোধী মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে। দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যে শান্তি সম্প্রীতি রক্ষায় জোটধর্ম পালন করতে হবে। শুধু তাই নয়, পাহাড়ে এলাকা চলো নীতিও পরিবর্তন করতে হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই পথেই মথা নেতৃত্বকে চলতে হবে। পাশাপাশি বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে শান্তি সম্প্রীতি ঐক্য রক্ষায় বিজেপি সরকারের পাশে থাকবে তিপ্রা মথা। জানা গিয়েছে, এ দিনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্যে পাহাড়ি-বাঙালি জনসমাজ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিজেপি-তিপ্রা মথাকে ঘিরে যেসব বিভ্রান্তিমূলক প্রচার হচ্ছে- এর বিরুদ্ধেও ভারত সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কঠোর আইনি পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গিয়েছে, মথা সুপ্রিমো তরফে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোন্ কোন্ শর্তে তারা বিজেপির সমর্থন করেছিলেন তা তুলে ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেন পদক্ষেপ হয়নি এ নিয়েও দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি, ক্যাবিনেট মন্ত্রী, অবৈধ অনুপ্রবেশ এই তিনটি বিষয়ে তাদের মধ্যে বিশদ আলোচনা হয়েছে। ২৮ নভেম্বর আস্তাবল মাঠে সমাবেশ প্রসঙ্গও বৈঠকে উঠেছে।এদিকে, বৈঠক প্রসঙ্গে মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ সাংবাদিকদের জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সাথে জাতি-জনজাতি মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার দাবি, ভিলেজ কমিটি এবং এডিসি নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আগামী দিনে বিজেপি এবং তিপ্রা মথা জোট সরকার ত্রিপুরার মান উন্নয়নে একসাথে কাজ করতে পারে এ বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সাথে বৈঠকের বিষয়েও কথা হয়েছে। তিনি জানান, আমাদের একটাই লক্ষ্য, ত্রিপাক্ষিক চুক্তির শর্তগুলি যাতে অবিলম্বে পূরণ হয়। রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে রাজ্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব শর্তে আমরা সরকারে শামিল হয়েছিলাম তা কি পূরণ হয়েছে? এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, একটি অংশ রাজ্যের উপজাতি এবং বাঙালি মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে।এই বিষয়গুলির প্রমাণ সহ রিপোর্ট দিয়েছি। বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে এরজন্য ত্রিপুরার মানুষকে আগামী দিনে আরও বিপদে পড়তে হবে।এক্ষেত্রেও ভারত সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজ্যের মানুষ যাতে শান্তিতে ত্রিপুরায় বসবাস করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *