ড্যামেজ কন্ট্রোলে তৎপর নয়াদিল্লী ফের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী-মথা সুপ্রিমো!!
বিহারে এবারও কি মহিলা ভোটে বাজিমাত?
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিহারে ভোট মানেই জাত-পাতের সমীকরণের উপর নির্ভরশীল।এই মিথ কি ধীরে ধীরে ভাঙতে চলেছে?এই প্রশ্ন নিয়ে কিন্তু এখন জোর জল্পনা ও আলোচনা শুরু হয়েছে। কেননা, বিহারে গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, জাত-পাতের সমীকরণকে পিছনে ঠেলে দিয়ে মহিলারই হয়ে উঠছেন নির্ণায়ক শক্তি। অর্থাৎ মহিলা ভোটাররাই সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিচ্ছেন। আরও স্পষ্ট করে বললে, মহিলারাই শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ভাগ্য নির্ধারণ করছেন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বিহারে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ভোটদানের হার বেশি। গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। মহিলারা বেশি সংখ্যায় ভোট প্রদান করছেন। এ কারণেই কি শাসক-বিরোধী সকলেই ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য মহিলা ভোটারদের হাতিয়ার করেছেন? কেননা,এবারও বিহার বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে নীতীশ কুমার নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবং আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাজোট মহিলাদের কাছে টানার জন্য ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।মহিলা ক্ষমতায়নে এবং মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে এবং সরকারে এলে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অনেকের দাবি এবং অভিমত, গত কুড়ি বছর ধরে বিহারে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ জোটের সরকার শাসন ক্ষমতায় রয়েছে মহিলাদের জন্যই। মহিলারাই নাকি বারবার এনডিএ সরকারকে ক্ষমতায় আনছেন।শুধু তাই নয়,বিহারে মহিলাদের মধ্যেই বিজেপির সমর্থন সবথেকে বেশি।অনেকেই বলেছেন, এর পিছনে নাকি দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। এক, প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং দুই বিহারে মদ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে মদ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নাকি মহিলাদের দারুণভাবে উৎসাহিত করেছে। যে কারণে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও, মহিলারা বেশি সংখ্যায় ভোট দিয়ে বারবার এনডিএ জোটের সরকার ক্ষমতায় আসার পথ মসৃণ করে চলেছে বলে অভিমত।
খুব বেশি পিছনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।২০২০ সালে বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে পুরুষদের ভোটদানের হার ছিলো ৫৪.৬ শতাংশ, আর মহিলাদের ভোটদানের হার ছিলো ৫৯.৭ শতাংশ। সে বছর বিহারে ২৪৩ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় বেশি সংখ্যায় ভোট দিয়েছিলেন।সর্বশেষ ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনেও বিহারে মহিলাদের ভোটদানের হার ছিলো ৫৯.৪৫ শতাংশ এবং পুরুষদের ৫৫ শতাংশ। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, এবার বিহারে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনীর (এসআইআর) পর মহিলা ভোটারের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। এ নিয়েও জল্পনার শেষ নেই। সে যাইহোক, নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী বিহারে এখন মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৪৩ লক্ষ। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ ৯২ লক্ষ এবং মহিলা ভোটার ৩ কোটি ৫১ লক্ষ। এর মধ্যে ১৭২৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও আছেন। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট গ্রহণে গত পঁচিশ বছরের মধ্যে রেকর্ড স্থাপন করেছে। প্রথম দফায় শেষপর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৪.৬৬ শতাংশ। ২০২০ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছিল ৫৬.০১ শতাংশ।গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার প্রথম দফায় প্রায় ৮ শতাংশ বেশি ভোট পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২০০০ সালে বিহারে ভোট পড়েছিল ৬২.৫৭ শতাংশ। পঁচিশ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে এবার নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছেন বিহারের ভোটাররা।যদিও আরও এক দফা ভোট গ্রহণ বাকি আছে।এদিকে,বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, এসআইআর-এর পর বিহারে মহিলা ভোটারের সংখ্যা কমে গেলেও, এবারও প্রথম দফায় ভোট দানের ক্ষেত্রে মহিলারা অনেকটাই এগিয়েছিলেন। অর্থাৎ মহিলারা এবারও পুরুষদের তুলনায় বেশি সংখ্যায় ভোট দিয়েছেন।গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় ১২১ বিধানসভা আসনের প্রায় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সকাল থেকে মহিলাদের যে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে এবারও মহিলারা ভোটদানে পুরুষদের চাইতে এগিয়ে থাকবেন। ভোটের লাইনে মহিলাদের উপস্থিতি দেখে পুনরায় এই জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, ভোটের মাসখানেক আগে এনডিএ সরকারের মহিলাদের দশ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং যেকোনো ব্যবসা বা কাজ করার জন্য মহিলাদের দুই লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। মহিলা কল্যাণে আরও একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা। অন্যদিকে মহাজোট ক্ষমতায় এলে পুনরায় বিহারে মদ চালু করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী- মুখ তেজস্বী যাদবের ঘোষণা এবং মহিলাদের এককালীন ৩২ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, এবারও মহিলাদের ভোটের লাইন দীর্ঘায়িত করছে বলে অনেকের অভিমত। যদিও এখনও দ্বিতীয় দফার ভোট বাকি আছে। এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন হলো, প্রথম দফায় মহিলাদের এই ভোট কার পক্ষে গেছে? এবারও কি মহিলাদের ভোটে সরকার গড়বে এনডিএ?নাকি এবার পরিবর্তন?সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ১৪ নভেম্বর।