জলই জীবন!!
জলের অপর নাম জীবন। মানব জীবনে জলের গুরুত্ব অপরিসীম।জল ছাড়া জীবন অচল।বাস্তব হলো,একজন মানুষ কোনও কিছু না খেয়ে শুধু জল পান করে কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পরে। পৃথিবীর মোট ভূখণ্ডের পাঁচ ভাগই জল। দুই ভাগ স্থল। আবার সেই জলের মধ্যে পানের যোগ্য জল মাত্র ১%। সুতরাং এই ১% জল নিয়েই চলে গোটা বিশ্বে হাহাকার। শুধু যে পনীয় জল নিয়ে হাহাকার এমনটা নয়। আমরা বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যে জল নিয়ে কাজিয়া, জল নিয়ে দেশে দেশে কাজিয়া ইত্যাদি দেখতে দেখতে অভ্যস্থ।কেননা জল যে শুধু পান করারই যোগ্য তা নয়, জল ছাড়া চাষবাস হবে না। জল ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ এই জল নিয়ে কাজিয়ার শেষ নেই।
তবে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো গোটা বিশ্বে মাত্র ১% পানের যোগ্য জল থাকলেও সেই ১% জলের উপরই কিন্তু গোটা বিশ্বের প্রায় ৬৫০ কোটি মানুষ নির্ভরশীল। সুতরাং পানের যোগ্য জলের কী রকম ভীষণ চাহিদা ও গুরুত্ব রয়েছে তা বোঝাতে গেলে এই পরিসংখ্যানটিই যথেষ্ট।
এই পানীয় জলকে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে, ঘরে ঘরে পৌঁছাতে অর্থাৎ মানুষকে পানীয় জলের সুব্যবস্থা করে দিতে স্বাধীন ভারতে হাজার হাজার লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প এযাবৎ সরকারী তরফে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও দেশের একটা বিশাল অংশের মানুষ সরকারী তরফে পানীয় জলের সুব্যবস্থা থেকে আজও বঞ্চিত। এখনও প্রতি বছর বাজেটে পানীয় জলের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। আমাদের রাজ্যের অবস্থাও তাই। পানীয় জল পৌঁছে দিতে সরকারী টাকার আদ্যশ্রাদ্ধ হচ্ছে। ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। পানীয় জলের ব্যবস্থার নামে রাঘব বোয়ালরা সব অর্থই পেটে পুরে নিচ্ছে। আদতে একটা অংশের মানুষ বিশেষ করে মফস্সলের একটা অংশের মানুষ, পাহাড়ের একটা অংশের মানুষ পানীয় জল বিশেষ করে সরকারী পানীয় জলের সুব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে হর ঘর, জলসে নল, জল জীবন মিশন কত কি গালভরা সমস্ত মিশন চলছে সরকারী তরফে। কিন্তু বাস্তবে প্রচার আর অর্থের আদ্যশ্রাদ্ধ ছাড়া কিছুই হচ্ছে না কাজের কাজ।
একটা সময় রাজধানী আগরতলা শহরের একটা বিশাল অংশের মানুষের ভরসা ছিল সরকারী জল। অর্থাৎ সরকারী তরফে জলের উপরই সিংহভাগ মানুষ নির্ভর করতেন। পালা করে দু’বেলা জল সরবরাহ করা হতো। এগুলি এখন অতীত। এখন মানুষ বিশেষ করে শহরের মানুষ মনেই করতে পারে না কখন সরকারী তরফে জল সরবরাহ করা হয়। কখন হয় না। দু’বেলা জল সরবরাহ হয় কি না তা কেউ বুকে হাত রেখে বলতেও পারবে না। এককথায় শহরবাসী কিংবা মফফস্বলের শহরবাসীরাও এখন আর সরকারী তরফে জলের আশা করে না। এখন প্রত্যেকের বাড়িতেই জলের নিজস্ব উৎস রয়েছে। তাতেই জলের চাহিদা মেটান তারা। সুতরাং সরকারী জলের উপর এখন আর বিরাট অংশের মানুষ নির্ভর করে না। সরকারী তরফে ডিডব্লিওএস একটি দপ্তর রয়েছে। যারা কিনা পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধানের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে। এতে ইঞ্জিনীয়াররা যেমন রয়েছেন তেমনি টেকনিকেল স্টাফ ও ফিল্ড লেভেলের কর্মীরা রয়েছেন। এই ডিডব্লিওএস দপ্তরের বিরুদ্ধেই ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। মানুষের পানীয় জলের সুব্যবস্থার অর্থ হাপিজ হয়ে যাচ্ছে। এখনও সব মানুষের কাছে পানীয় জলের সুযোগ পৌঁছেনি। বিশেষ করে দুর্গম এলাকায়, পাহাড়ে, উপজাতি জনপদে সুতরাং জল জীবন মিশন, হর ঘর, নল সে জল- দিল্লী থেকে বসে এই সুন্দর বাণীগুলি উদ্ধৃত করলে শ্রুতিমধুর শোনায়। আদতে এর আড়ালে যে সরকারী অর্থের ব্যাপক নয়ছয় হচ্ছে তার খবর কী রাখেন দিল্লীর কর্তাবাবুরা। স্বাধীনতার এতদিন পরও দেশের এক বিশাল অংশের মানুষ পানীয় জলের সুব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত এর দায় কী তারা নেবেন না। একটা বিশাল অংশের মানুষ যে এখন আর সরকারী তরফে পানীয় জলের উপর নির্ভর করে না এ লজ্জা ঢাকবে কী করে সরকার?