October 20, 2025

ব্ল‍্যাক রাইস চাষে নজির গড়ছেন হরেকৃষ্ণ।।

 ব্ল‍্যাক রাইস চাষে নজির গড়ছেন হরেকৃষ্ণ।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুভাষনগর এডিসি গ্রামে কৃষক হরেকৃষ্ণ দেবের আধা হেক্টর জমিতে কালো ধানের সফল চাষ উত্তর জেলার কাঞ্চনপুর কৃষি দপ্তরের এ বছর এক বিরল উদ্যোগে নাম লিখিয়েছে। তার আধা হেক্টর জমিতে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে কালো ধান (Black Rice) চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। এই বিশেষ জাতের ধান যা বর্তমানে পুষ্টিগুণ ও বাজার মূল্যের জন্য রাজ্যজুড়ে আলোচনায় তা মূলত জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়েছে বলে কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। শুকনাছড়া এলাকার হরেকৃষ্ণ দেবের এই উদ্যোগ এখন প্রশংসার বিষয় হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, আমি ছোট পরিসরে শুরু করেছিলাম কিন্তু ফলনের গুণমান ও বাজার চাহিদা দেখে মনে হচ্ছে আগামী বছর আরও বেশি জমিতে এই জাতের ধান চাষ করবো। উল্লেখ্য, কালো ধানকে সাধারণত ‘বিরল পুষ্টি ধান’ বলা হয়। এতে সাধারণ চালের তুলনায় প্রোটিন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও লোহা অনেক বেশি থাকে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের কাছে এই চাল এখন বিশেষ জনপ্রিয়। কৃষি দপ্তরের ক্ষেত্র সহকারী বিদ্যুৎ নাথ জানান এ বছর রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সীমিত আকারে কালো ধানের চাষ শুরু হয়েছে। শুকনাছড়া এলাকার হরেকৃষ্ণ দেব তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান উদ্যোগী। তার ক্ষেত্রটি বর্তমানে দপ্তরের তত্ত্বাবধানে পর্যবেক্ষণাধীন আছে। প্রায় ০.৫ হেক্টর (প্রায় ১.২৫ একর) জমিতে বীজ বপনের পর প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হলেও নিয়মিত সেচ ও প্রাকৃতিক জৈব সার ব্যবহারে ফসলের গুণগত মান বজায় রাখতে সক্ষম হন তিনি।বর্তমানে তার জমির ধান শীষে ভরে উঠেছে যা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই কাটা শুরু হবে। স্থানীয় কৃষি আধিকারিক কবীর দেববর্মা জানিয়েছেন, কালো ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আমরা এর জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি। আগে কৃষকরা আউশ আমন ধান চাষ করতো, কিন্তু কৃষি দপ্তরের পরামর্শে কালো ধান নিয়ে পরীক্ষা করেছে এবার। এই ধান ভবিষ্যতে লাভজনক হতে পারে। কালো ধান বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ জনপ্রিয়। প্রতি কিলোগ্রাম কালো চালের মূল্য সাধারণ সাদা চালের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ বেশি। ফলে এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও যথেষ্ট।কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন এই ধান মূলত অ্যান্থোসায়ানিন নামক এক বিশেষ রঞ্জক পদার্থ ধারণ করে যা মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এলাকার মহকুমা কৃষি উন্নয়ন আধিকারিকের মতে, হরেকৃষ্ণ দেবের এই উদ্যোগ স্থানীয় কৃষিতে বৈচিত্র আনবে। আমরা এই ফসলকে সরকারী ক্রয় প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছি। বর্তমানে তার ক্ষেতের ফলন প্রতি হেক্টরে গড়ে ত্রিশ-বত্রিশ কুইন্টাল পর্যন্ত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে যা স্থানীয় আবহাওয়া ও জমির অবস্থার বিবেচনায় যথেষ্ট ভালো ফলন। উত্তর জেলার কৃষি দপ্তরও এই চাষকে ‘মডেল প্লট’ হিসাবে বিবেচনা করছে। আগামী শস্য মরশুমে এ থেকে বীজ সংগ্রহ করে আশপাশের গ্রামে বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। সুভাষনগর এডিসি এলাকার কৃষকরা বলছে, এই জাতের ধান শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। এলাকার তরুণ কৃষকরাও এ উদ্যোগে উৎসাহিত হয়েছে। অনেকে ইতিমধ্যেই কৃষি দপ্তরের সহায়তায় কালো ধান চাষের প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।কষি আধিকারিক মনে করছেন যদি এই উদ্যোগ ধারাবাহিকভাবে সফল হয় তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উত্তর ত্রিপুরা রাজ্যের কালো ধান উৎপাদনের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। উত্তর জেলার কৃষি দপ্তরও জানিয়েছে এই প্রকল্পের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে রাজ্যের অন্যান্য উপজেলায়ও কালো ধান চাষ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। সর্বোপরি সুভাষনগর এডিসি গ্রামে এই ক্ষুদ্র কৃষকের শ্রম উদ্যোগ ও সাহস এখন গোটা এলাকার কৃষকদের মধ্যে নতুন দিগন্তের আলো জ্বালিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *