October 9, 2025

আরএসএস বন্দনা

 আরএসএস বন্দনা

একদিকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস)-এর শতবর্ষ উদযাপন চলছে দেশজুড়ে।অন্যদিকে, দিকে দিকে চলছে আরএসএস স্তুতি, বন্দনা ইত্যাদি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হঠাৎ করে আরএসএস বন্দনায় মেতে ওঠেছেন। ২০১৪ সালে আরএসএসের পোস্টার বয় হিসাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী বনেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এরপর ধীরে ধীরে দলে এবং সরকারে একশের দ্বিতীয়ম হয়ে ওঠেন মোদি। দূরে সরে যেতে থাকেন আরএসএস থেকে। এরপর তার রাজত্বের এগারো বছরের মাথায় ফের আরএসএসের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করলেন মোদি। কিছুদিন আগে তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে প্রথমবার আরএসএসের সদর দপ্তর নাগপুরে গিয়েছিলেন মোদি। এরপর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেও মোদি আরএসএসের বেজায় প্রশংসা করেন। এবার দুর্গাপুজো চলাকালীন আরএসএসের শতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে ভাষণও দেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ২০১৪ সালে একবার বিজয়া দশমীর দিন আরএসএস নিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন মোদি। এর এগারো বছর পর ফের এবার আরএসএস নিয়ে ভাষণ দিলেন মোদি। আসলে আরএসএসের একটা অজানা ভয় কি তাড়া করছে মোদিকে? কেননা আরএসএসের তত্ত্ব হচ্ছে ৭৫ বছর বয়স হলেই প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে হবে রাজনীতিবিদকে। এই তত্ত্বকে মান্যতা দিয়ে মোদি জমানায় লালকৃষ্ণ আদবানী, মুরলী মনোহর যোশীদের আগেই মার্গদর্শক মণ্ডলীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোদির সবে ৭৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। মোদিও কি মনে মনে ভাবছেন আরএসএস যদি কঠোর মনোভাব নেয় তাহলে তাকেও কি বনবাসে যেতে হবে? এই ভাবনা থেকেই কি হঠাৎ মোদি এবং তার অনুগামীরা আরএসএস প্রেমে একেবারে গদগদ হয়ে পড়লেন? গত এগারো বছরে আরএসএস-কে ধারেকাছে ঘেঁষতেই দেননি মোদি। নিজেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের মতো করে। তাহলে হঠাৎ করে আরএসএসের এত স্তুতি কেন?শুধু তাই নয়, আরএসএসের শতবর্ষ উপলক্ষে এবার বিজেপি রাষ্ট্রবাদকে জিইয়ে রাখতে একেবারে ওঠেপড়ে লেগেছে। দিল্লী সরকার এবার প্রথম শ্রেণী থেকে সিলেবাসে আরএসএসের রাষ্ট্রবাদকে তুলে ধরতে চাইছে। দেশে প্রথম রাজ্য হিসাবে দিল্লীর বিজেপি সরকার সে রাজ্যের সরকারী স্কুলগুলিতে রাষ্ট্রনীতির অন্যতম পাঠ হিসাবে সংঘ – বন্দনাকে স্থান দিতে চলেছে। ফলে একেবারে প্রথম শ্রেণী থেকে বাচ্চাদের আরএসএস স্তুতি মজ্জাগত করে ফেলতে হবে। আরএসএসের শতবর্ষ উপলক্ষে একদিকে সরকার, অন্যদিকে বিজেপি পার্টি আরএসএসকে তুষ্ট করতেও নেমেছে। প্রশ্ন, তাহলে সিলেবাসে গেরুয়াকরণ কি দিল্লী থেকেই শুরু হয়ে গেলে? এরপর কি অন্য রাজ্যের পালা! দিল্লীর ছাত্রছাত্রীদের এবার থেকে সংঘের ইতিহাস, সংস্কৃতি থেকে দেশগঠনে সংগঠনের অবদান – সবই এখন পড়তে হবে একেবারে আদিকাল থেকে। এছাড়াও এ সংক্রান্ত পাঠ্যসূচিতে থাকবে সাভারকর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জীবনীও। ইতোমধ্যেই দিল্লীর সরকারী বিদ্যালয়গুলিতে পঠনপাঠনের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য বিশেষ হ্যান্ডবুক তৈরি হয়ে গেছে। সেই মতো শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণও শুরু হয়ে গেছে।দিল্লী সরকার বলছে, এই রাষ্ট্রনীতি হচ্ছে দিল্লীর সরকারী বিদ্যালয়গুলিতে নয়া সিভিক এডুকেশন কর্মসূচি। দিল্লীতে প্রায় এক হাজারের উপর সরকারী বিদ্যালয়ে আরএসএস প্রবর্তিত এই নয়া সিলেবাস চালু হচ্ছে। তবে আপাতত প্রথমে প্রতি শনিবার এই রাষ্ট্রনীতির বিশেষ ক্লাস হবে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে আরএসএসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে – এই কথা বোঝাতে দীর্ঘদিন ধরেই তৎপর বিজেপি তথা গেরুয়া শিবির। স্বাধীনতা আন্দোলনে আরএসএসের কোনও ভূমিকা ছিল না -আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করেছিলেন খোদ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এ দাবি বিরোধী শিবিরের। তারপরও আরএসএস সংগঠন এখন শতবর্ষ পেরিয়ে দেশের মানুষকে বোঝাতে চাইছেন রাষ্ট্রবাদ কী, রাষ্ট্রনীতি কী হওয়া প্রয়োজন ইত্যাদি ইত্যাদি। এর শুরুয়াত হলো দিল্লীতে সরকারী স্কুলে নয়া সিলেবাসে সংঘের জয়গান দিয়ে। এরপর ধীরে ধীরে গোটা দেশে কি আরএসএস বন্দনা চালু হবে? দেখার এটাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *