October 9, 2025

ফের যুদ্ধ উন্মাদনা

 ফের যুদ্ধ উন্মাদনা

‘ফের কি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাধতে পারে? এমন সম্ভাবনা কিন্তু একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কাশ্মীরের পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর, ভারত’ অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। ভারতের এই জবাব যে কতটা নিপুণ ছিল, তা শুধু পাকিস্তানই নয়, গোটা বিশ্ব উপলব্দী করেছে। একই সাথে উপলব্দী করেছে ভারতের সামরিক শক্তি। অপারেশন সিন্দুর’ যখন বন্ধ হয়, তখনই ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে, এই অপারেশন সাময়িক স্থগিত রাখা হচ্ছে। যে কোনও দিন, যে কোনও সময় অপারেশন সিন্দুরের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে পারে। যদি পাকিস্তান ভুল না শুধরে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে, এবং জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যায় তাহলে ভারত পুনরায় পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হবে এবং সেই জবাব হবে আরও ভয়ঙ্কর। যা পাকিস্তান কল্পনাও করতে পারবে না।
খবরে প্রকাশ, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ফের উত্তেজনার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। তবে এবার আর কাশ্মীর উপত্যকায় নয়, এবার ইসলামাবাদের নজর ভারতের গুজরাটের ‘স্যার ক্রিক’ অঞ্চলে। ওই অঞ্চলে পাকিস্তান বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে। যদিও ভারত সরকার গোটা বিষয়ের উপর তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছে। পাকিস্তানের প্রতিটি গতিবিধির উপর কঠোর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং প্রকাশ্যে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘স্যার ক্রিকে পাকিস্তানের যে কোনও আগ্রাসনের জবাব ইতিহাস ও ভূগোল বদলে দেবে। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি, ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী শুক্রবার রাজস্থানের অনুপগড়ে সেনা ঘাঁটিতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে পাকিস্তানকে সরাসরি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান যদি এখনই জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ না করে, তাহলে দ্রুতই পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে দেবে ভারত। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ফের সরগরম হয়ে উঠেছে। তবে এবার নতুন করে উত্তেজনার কেন্দ্র হচ্ছে ‘স্যার ক্রিক’।
স্যার ক্রিক হলো ভারতের গুজরাট রাজ্যের কচ্ছজেলার লবণাক্ত রণভূমিতে অবস্থিত প্রায় ছিয়ানবুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি জনবসতিহীন খাঁড়ি। এই খাড়ির একদিকে ভারতের গুজরাট, অন্যদিকে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ। স্বাধীনতার পর থেকেই এই এলাকা নিয়ে দুই দেশের বিরোধ চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্যার ক্রিক ইস্যুটি কাশ্মীরের থেকেও জটিল। কারণ এখানে কৌশলগত গুরুত্বের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে। বলা হয়, এই এলাকায় বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেলের ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান স্যার ক্রিকের নিয়ন্ত্রণ পেলে তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে আরব সাগরের দিকে প্রসারিত করতে পারবে। ফলে সামুদ্রিক সম্পদের উপর একচেটিয়া দখল গড়তে পারবে ইসলামাবাদ।
ভারতের দিক থেকেও এই অঞ্চলের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। কচ্ছ রণের লবণ উৎপাদন দেশের ঘরোয়া চাহিদার এক তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে। চিংড়ি চাষ, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ এবং পর্যটনের ক্ষেত্রেও কচ্ছ অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ স্যার ক্রিক ভারতের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় সম্পদ। শুধু অর্থনৈতিকই নয়, সামরিকভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে পাকিস্তানের করাচি বন্দরের দূরত্ব মাত্র দুইশ কিলোমিটার। ১৯৬৫ সালে যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান এই অঞ্চল দখলের চেষ্টা করেছিল। সেই সময় পাকিস্তান ‘অপারেশন ডেজার্ট হক’ নাম দিয়ে সামরিক অভিযান চালালেও, ভারতের পাল্টা আঘাতে তারা ব্যর্থ হয়। এরপর ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতীয় নৌ সেনা করাচি বন্দরে বড় আঘাত হানে। খবরে প্রকাশ, ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের বছরই ভারতীয় বায়ুসেনা স্যার ক্রিক এলাকায় অনুপ্রবেশকারী একটি পাক নজরদারি বিমান ধ্বংস করে দিয়েছিল। তারপর থেকে পাকিস্তান সরাসরি হামলার সাহস দেখায়নি। তবে ২০১৯ সালে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নতুন মানচিত্রে স্যার ক্রিক ও গুজরাটের জুনাগড়কে পাকিস্তানের অংশ দাবি করে উত্তেজনা ফের বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি স্যার ক্রিক সংলগ্ন এলাকায় পাক সেনার উপস্থিতি অনেকটাই বেড়েছে। নতুন করে পোস্ট, রাডার স্টেশন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের খবর মিলেছে। পাশাপাশি আরব সাগরে বাড়ানো হয়েছে পাক সেনা নৌ টহল। পাকিস্তানের ক্রিক ব্যাটেলিয়নও সেখানে সক্রিয়। অন্যদিকে ভারতও বসে নেই। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে বিএসএফের বিশেষ ‘ক্রিক ক্রোকোডাইল ইউনিটকে ইতিমধ্যে কচ্ছ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। ভুজে সামরিক কর্মসূচিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কড়া বার্তা এবং রাজস্থানে সেনা কেন্টনমেন্টে সেনা প্রধানের ইঙ্গিতপূর্ণ হুশিয়ারি, দুই দেশের মধ্যে ফের সংঘাতের আশঙ্কা উসকে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘স্যার ক্রিক’ কি ফের ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের কারণ হতে চলেছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *