September 16, 2025

ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচারণ চায় উদ্যোক্তারা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-উৎসবপ্রেমী বাঙালিদের সবচে’ বড় পার্বণ দুর্গাপুজো।গোটা বিশ্বের বাঙালিরাই বছরভর অপেক্ষা করে থাকেন এই উৎসবের। সাধারণত আশ্বিন মাসের টানা দশদিন ব্যাপী দুর্গাপুজোর উৎসব পালিত হলেও মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্তই আক্ষরিক অর্থে পুজোর দিনগুলিতে গা ভাসান সকলে। এরপর থেকে আরও একবার যেন শুরু হয়ে যায় কাউন্টডাউন। আসছে বছরের। তবে বছরভর নানা সুখ-দুঃখের ইতিকথা বরাবরের মতোই দাগ কেটে যায় মনে। মায়ের আগমনকে ঘিরে সে সব ইতিকথারই স্মৃতিচারণ করতে চান পুজো উদ্যোক্তারা। এ যেন এক আবদার, ‘অশুভ শক্তি বিনাশ করে শুভ শক্তির উদয় হোক আমাদের মাঝে।’
গত ২২ এপ্রিল, ২০২৫।কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ধর্মীয় পরিচয় জেনে এক-এক করে তাজা বুলেটে এফোঁর ওফোঁর করে দেওয়া হয় অন্তত ২৬টি তরতাজা প্রাণ। পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসবাদের এই হামলা অবশ্য পরবর্তী সময়ে একপ্রকার যুদ্ধমূলক পরিস্থিতিরই সৃষ্টি করে। গোটা দেশবাসীর কাছে আজও জ্বলজ্বল করে ভেসে আসে সেই দিনগুলি। নতুননগর এয়ারপোর্ট রোডের ‘দেশবন্ধু ক্লাব’ এ বছর তাদের পুজোর আয়োজনে তুলে ধরবে গোটা এই থিমটি।স্থানীয় শিল্পীদের সাহায্যে বাঁশ, চট সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সামগ্রীর মিশেলে তুলে ধরা হবে অনুরূপ এক প্রতিচ্ছবি। ক্লাবের পক্ষে পুজো কমিটির সভাপতি সুব্রত দেবনাথ, সম্পাদক ভোলানাথ ভৌমিক, ক্লাব সম্পাদক তপন মিত্ররা জানান, কোনও অবস্থাতেই এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না দেশবাসী। আমরাও মায়ের কাছে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেমন চাই না, সব অংশের মানুষের মধ্যেই শুভ বুদ্ধির উদয় হোক বলে আশীর্বাদ চাইছি।পহেলগাঁওয়ের ঘটনা না হলেও পুজোর আয়োজনে এ বছর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ক্লাবের থিম থাকবে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’। এমনিতে লালকেল্লার ঐতিহাসিক স্থাপত্য তুলে ধরা হবে তাদের মন্ডপ সজ্জায়। এছাড়াও থাকবে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। আর তাতেই ধরা হবে অপারেশন সিন্দুর সহ কার্গিল যুদ্ধ, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে দেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে যারাই শহিদ হয়েছেন, তাদেরকে স্মৃতিচারণ এবং যারা স্বাধীন ভারতকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এখনও রাতদিন এক করে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা নিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যেও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। পুজো কমিটির পক্ষে যুগ্ম সম্পাদক শান্ত পাল জানান, চতুর্থীর সন্ধ্যায় মণ্ডপের সূচনা করতে চান তারা। এ দিন থেকেই তাদের থিম তুলে ধরতে চালু থাকবে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। পশ্চিমবাংলার শিল্পী তাদের প্রতিমা গড়লেও মণ্ডপ সজ্জায় তাদের পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পীরও অবদান থাকবে।
পুজোর আয়োজনে হারাধন সংঘ অবশ্য একটু ভিন্নধর্মী স্বাদ নিয়ে হাজির হচ্ছেন পূজার্চনায়। এ বছর তাদের আয়োজনে থাকবে ফেলে আসা পুতুল খেলা। শৈশবে মোবাইলের আসক্তি থেকে কচিকাঁচাদের বের করে আনাই তাদের মূল লক্ষ্য। স্থানীয় শিল্পীর উপর ভরসা না পেয়ে এ বছর তারা তাদের মণ্ডপ সজ্জায় ডেকে পাঠালো নদীয়ার শিল্পী গিরিশ রায়কে। এছাড়াও তাদের প্রতিমা গড়তে কাঠি থেকে আগত শিল্পী গুরুপদ পাণ্ডা। অন্তত ১২ থেকে ১৫শো পুতুলের সংযোজন থাকবে তাদের প্যাণ্ডেলে। ক্লাব সম্পাদক অনুপম দে জানান, আলোকসজ্জার মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে রং-বেরঙের পুতুল দেখা যাবে গোটা প্যন্ডেলটিতে। এর চূড়ায় থাকবে একটি পরি। এছাড়াও ডিমসাগরের দুই পাশে মোট ছ’টি ফোয়ারার মাধ্যমে গড়ে উঠা তাদের প্যাণ্ডেল এ বছর দর্শনার্থীদের ভালোই মন কাড়বে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
পোলস্টারের আয়োজনে অবশ্য এ বছর থাকবে ঘদেনি বাড়ির এক উপস্থাপনা। বলতে গেলে জমিনদার কিংবা বিত্তশালী অংশের জনগণ আগে কীভাবে দিনযাপন করতো, তাই তুলে ধরা হবে পুজোর আয়োজনে। বাঁশ-বেত, কাঠ এবং কাপড়ের সাহায্যে গড়ে তোলা হবে পুজো মণ্ডপ। ক্লাব সদস্য অপু দেবনাথের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠবে গোটা এই প্যাণ্ডেল। এছাড়াও স্থানীয় শিল্পী চিত্ত পাল এ বছর প্রতিমা গড়বেন তাদের। পুজো কমিটির সম্পাদক অমরেশ দেববর্মা জানান, যষ্ঠীর সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে মণ্ডপ খুলে দিতে চান তারা।
মহারাজগঞ্জ বাজার এলাকার (নেতাজী সুভাষ রোড) ছাত্রবন্ধু ক্লাব অবশ্য একটু ভিন্নধর্মী সাজে হাজির হচ্ছে পূজার্চনায়। এ বছর তাদের থিম থাকবে ‘ঘরের নারীতেই বিরাজে দেবী দুর্গা’। ক্লাবের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত কুমার সাহা জানান, দুর্গোৎসব মানেই নতুন ভাবনা, শিল্পের অভিনব রূপ আর সমাজের কাছে নতুন বার্তা পৌঁছে দেওয়া। এদিক থেকে এ বছর সাধারণ গৃহবধূ কিংবা শ্রমজীবী নারীর রূপে আবির্ভূত হবেন দেবী দুর্গা। সাধারণ শাড়ি, মাথায় ঘরোয়া সাজের দেবী বার্তা দেবেন, যে প্রতিদিনের শ্রমই তার আসল শক্তি। প্রতিমার পেছনে ফুটে উঠবে অসংখ্য নারী মুখ। কখনও হাসি, কখনও বিষণ্ণতা, কখনও প্রতিবাদ। স্থানীয় শিল্পীদের সহায়তায় তাদের এই গোটা মণ্ডপ গড়ে উঠবে।
পুজোর আয়োজনের সেন্ট্রাল রোড যুব সংস্থা এ বছর বিশেষ করে তাদের থিমে রেখেছে দেবী দুর্গার গজে আগমনের বিষয়টি।অন্তত ১০ থেকে ১২টি কৃত্রিম হাতির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে গোটা থিম। নবদ্বীপের প্রতিমা শিল্পী অসিত পাল এবং মণ্ডপ সজ্জায় থাকবেন কুমারেশ পাল। ক্লাবের পক্ষে পুজো কমিটির সভাপতি চুনি দেব, সম্পাদক রঞ্জিত কুমার পাল, কোষাধ্যক্ষ অমিতাভ (শংকর) সাহা এবং ক্লাবের পক্ষে কোষাধ্যক্ষ সুসেন সাহা জানান, তৃতীয়ার সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে মণ্ডপের সূচনা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *