উৎসবের দোলা নেই, তবুও উমার জন্য প্রতীক্ষা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পুজো আসছে বলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে উৎসাহ উদ্দীপনাটা ছিলো সেটাই এখন কেমন যেন ফিকে হয়ে গিয়েছে।খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। আজ থেকে দুই-তিন দশক পেছন ফিরে তাকালে একেবারে অবলীলায় সেই সব ছবি ধরা দেবে আপনাকে। শরতের আবহ, কাশ ফুলের দোলা, শিউলি কুড়োনোর মুহূর্ত- এ সবই এখন উধাও। তবুও পুজো আসছে।
ডটকমের যুগ বলে কিনা জানা নেই। নতুন সংযোজন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এ আই)-এর কোনও প্রভাব কিনা তা-ও জানা নেই। তবে এটা ঠিক যে প্রকৃতির স্বাভাবিক ছন্দ থেকে একটু একটু করে কেমন যেন দূরে সরে যাচ্ছি আমরা। উৎসবমুখর দিনগুলি আগেকার মতো আর দোলা দেয় না মনে। পুজো আসছে বোঝার উপায় এখন শুধুই প্যান্ডেলে প্যান্ডেলের কর্মব্যস্ততা। মাঝে একখানা চাঁদার রসিদ ধরানো হলে তো আর কথাই নেই।
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। পূর্ব বাংলা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা সহ প্রায় সর্বত্রই বাঙালিদের মধ্যে এটি একটি প্রচলিত বাক্য। সাধারণত কোনও ধর্মীয় উৎসবের সময়ে এর সার্বজনীতা বোঝাতে একে ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই। বিশেষ করে শারদোৎসবেই এর প্রচলন বেশি বলা চলে। যদিও ইসলামিয় পণ্ডিতরা এই বাক্যের বিরোধিতা করেছেন বহুবার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে,তবে কি
শারদোৎসবকে কেবলই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বোঝাতে চান তারা? জানা নেই। তবে সনাতনি বাঙালি অংশের মানুষ কোনও অবস্থাতেই ধর্মীয়
অনুষ্ঠানের সাথে এর মিল খুঁজে পান না। তারা একে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বলেই যুগ যুগ ধরে উৎসবমুখর দিনগুলিকে শিল্প-সংস্কৃতি, সাহিত্য, সম্প্রদায়ের বন্ধন হিসাবে উদ্যাপন করে আসছে। নানা আচার অনুষ্ঠানের সব অংশের মানুষকে এক করে কাটিয়ে দিচ্ছে গোটা ঋতু, গোটা বসন্ত।
ফি বছর দেবী দুর্গা সাধারণত চার ধরনের বাহনে আগমন ও গমন করে থাকেন। গজ, ঘোটক, নৌকা, দোলা। মায়ের বাহন কোন ক্ষেত্রে কী হবে তা অবশ্য নির্ভর করে প্রকৃতির উপর। হিন্দু পঞ্জিকা মতে তা আবার মহালয়ার দিনের উপর নির্ভর করবে বলে ধরে নেওয়া হয়। সে যাই হোক না কেন, দেবী দুর্গা এ বছর যে গজে আগমন করেছেন আর দোলায় গমন করেছেন, এটা নিশ্চিত। ধরে নেওয়া হয় গজে আগমনের অর্থ শান্তি সমৃদ্ধির বার্তা। দোলায় গমনের ইঙ্গিত কোনও মহামারি কিংবা মড়কতুল্য বিষয়ে ভোগার আশঙ্কা। বলা যায় এ বছর আগমন শুভহলেও দেবী দুর্গার গমন শুভ না-ও হতে পারে। তবে গুগলও অনেক সময় মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
শারদোৎসব নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহে সামান্য ভাটা পড়লেও উদ্যোক্তারা কিন্তু বসে নেই। বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে চলেছে জোর তৎপরতা। মাত্র এক পক্ষকালের ব্যবধান বলে কথা! এরপরই আসছে সেই সন্ধিক্ষণ।
শারদোৎসব। শহর আগরতলার বুকে উৎসবমুখর দিনগুলিতে উদ্যোক্তারা যে যার মতোই করেই ব্যস্ত থাকছে পুজোর আয়োজন। কেউ-বা বিজ্ঞানভিত্তিক কোনও মডেলের উপস্থাপনায়, কেউ-বা দর্শনীয় কোনও স্থানের আদলে মণ্ডপ সজ্জা গড়তে কেউ বা প্রকৃতির সাজে একেবারে সাদামাটা আয়োজন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামাজিকতার ছোঁয়া পেতে চায় তারা সকলেই।মেলারমাঠের এগিয়ে চলো সংঘ এ বছর এদিক থেকে রাজস্থানের একটি প্রাসাদের আদলে গড়ে তুলবে তাদের মণ্ডপ। তবে কোন প্রাসাদ, তা অবশ্য এখনই খোলসা করতে চাইছে না তারা। পুজো কমিটির সম্পাদক অশ্বিনী ধানুক বলেন, পুজোকে কেন্দ্র করে আমরা মহালয়ার পূণ্য লগ্নে হাফ ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজন করেছি। ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে এই ম্যারাথন সোজা ছুটবে রাণীরবাজারের উদ্দেশে এবং ফের সেখান থেকে আসবে ক্লাব প্রাঙ্গণে। রাজ্য এবং বহিঃরাজ্যের বিভিন্ন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সাধারণ অংশের মানুষ, শিল্পী সাহিত্যিক সকলে এই ম্যারাথনে অংশ নেবেন। এতে মোট দেড় লাখ টাকার আর্থিক পুরস্কারও রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়াও পুজোকে ঘিরে মহিলাদের মধ্যে বস্ত্রদান, এমন আরও বহু সামাজিক কর্মকাণ্ড রয়েছে তাদের আয়োজনে।
নেতাজী চৌমুহনীর নেতাজী প্লে ফোরাম-ও এবছর কম্বোডিয়ার উচ্চমত একটি বুদ্ধ মন্দিরের আদলে গড়ে তুলবে তাদের মণ্ডপ। প্রতিমায় আকর্ষণীয় বলতে মহিষাসুর বধের একটি প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হবে। দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে আনন্দমেলার আয়োজনও থাকবে সেখানে। পুজো কমিটির সম্পাদক রাজন আচার্য জানান, এ বছর হোগলা পাতায় গড়ে উঠবে তাদের মণ্ডপ। বসে আঁকো প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে বৃদ্ধাশ্রমে বস্ত্রদান, শিশুগৃহে বস্ত্র, খেলনা, খাদ্য সামগ্রী বিতরণতো রয়েছেই।
প্যারাডাইস চৌমুহনীর প্যারাডাইস সামাজিক সংস্থা- কাটোয়ার একটি কাঠ পুতুলের আদলে গড়ে তুলেছে তাদের মণ্ডপ। প্রতিযোগিতার বাজারে স্বল্প মূল্যের বাজেটে রাজ্যের বাঁশ বেত শিল্পকে কাজে লাগিয়ে হবে মণ্ডপসজ্জা। পুজো কমিটির সম্পাদক অনির্বাণ রায় জানান, পুজোয় নানা সামাজিক কাজকর্মের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে এবছর মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সংবর্ধনা জানাবে তারা। দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে পুজোর আগে চতুর্থীর সন্ধ্যায় মণ্ডপ খুলে দিতে পারেন তারা। আপাতত রাজ্য থেকে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের (জুনিয়র) ম্যানেজার শ্রেয়শী দেবনাথ-কে দিয়ে তারা তাদের মণ্ডপ উন্মোচন করতে চাইছেন।