September 9, 2025

রাষ্ট্রপুঞ্জতে মোদির না: প্রশ্ন!!

 রাষ্ট্রপুঞ্জতে মোদির না: প্রশ্ন!!

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার বৈঠকে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন না।আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর তার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার বৈঠকে যোগ দিতে যাবার কথা ছিল এবং ওইদিন ভাষণ দেবারও কথা ছিল।প্রতি বছরই সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা বসে নিউইয়র্কে এবং এই বৈঠকে বিশ্বের তাবড় তাবড় রাষ্ট্রপ্রধানরা তাদের বক্তব্য রাখেন। এর মাধ্যমে গোটা পৃথিবীকে বার্তা দেন রাষ্ট্রপ্রধানরা। বর্তমানে গোটা বিশ্বে চলছে এক অস্থির পরিস্থিতি। একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে চলছে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধ। মাঝে আবার ইজরায়েল-ইরাক যুদ্ধ হয়েছিল। এতে আমেরিকা অংশ নিয়েছিলো। মাঝে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ হয়েছিল। এর উপর চলছে মার্কিনী দাদাগিরি। ভারতের উপর পঞ্চাশ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপিয়ে দেবার পর ভারত-মার্কিন সম্পর্ক এখন অনেকটা দৃঢ় হয়ে আছে। এরই মধ্যে চিন সফরে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যন্ত্রণায় কিছুটা হলেও নুনের ছিটে দিয়ে এসেছে ভারত। শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে হারানোর আক্ষেপ করলো। আবার পরক্ষণেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর স্তুতিও শোনা যায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের গলায়।
এহেন অবস্থায় এবার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ভারত অত্যন্ত উঁচু গলায় তার বক্তব্য এবং অবস্থান তুলে ধরতে পারতো।বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরতে পারতেন রাষ্ট্রসংঘে।কিন্তু হঠাৎ কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার যাত্রা বাতিল করলেন তা বোধগম্য হচ্ছে না কারো।মোদির পরিবর্তে নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় যোগ দেবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর।সাধারণত দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশ সফরে যেতে খুব পছন্দ করেন। কিছুদিন পরপরই তিনি বিদেশ সফরে যান। ছোট ছোট দেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরের রেকর্ড গড়ছেন মোদি। বিভিন্ন দেশের সর্বোচ্চ সম্মানও তাকে দেওয়া হয় বিভিন্ন সময়। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় মোদি কেন এ বছর যাচ্ছেন না এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে কূটনৈতিক মহলেও জোর আলোচনা চলছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর কিছুদিন আগেও কনফার্ম করেছিল যে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় যোগ দেবেন এবং বক্তব্য রাখবেন।এটি একটি প্রেস্টিজিয়াস প্লেস।এখানে বিশ্বের তাবড় তাবড় রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রতি বছর যান এবং ভাষণ রাখেন।বিশ্বের বহু রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে দেখা হয়। মতবিনিময় হয়। বিভিন্ন বিষয়ে মতামত আদানপ্রদান হয়। কিন্তু এ বছর কেন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রসংঘের মতো প্রেস্টিজিয়াস অধিবেশনে যাচ্ছেন না তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, ট্রাম্পকে কৌশলে এড়ানোর জন্য মোদি নিউইয়র্ক যাচ্ছেন না। আবার অনেকে বলছেন আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ৭৫-এ পা দিচ্ছেন। এরপর কী হবে তা এখনও অনেকেরই অজানা। রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল রয়েছে মোদির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। তাই মোদি নিউইয়র্ক অধিবেশন থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। পরিবর্তে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর ভারতের অবস্থান তুলে ধরবেন রাষ্ট্রসংঘে।
সাম্প্রতিককালে ট্রাম্পের একাধিক বিবৃতি বিশেষ করে ভারত-পাক যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্প একাধিকবার নানা মন্তব্য করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেখানে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেননি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চাশ শতাংশ শুল্ক ভারতের উপর চাপিয়েছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদি কোনো কথাই বলেননি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয় বন্দিদের পায়ে শেকল পরিয়ে এদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মোদি চুপ। এবার চিন সফরে গিয়ে শি জিনপিং এবং পুতিনের সাথে মোদির মাখামাখি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ভালো চোখে দেখেননি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতই ভারতের উপর শুল্ক চাপাক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের স্ট্যাটেজিক পার্টনার। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইগনোর করার উপায় নেই ভারতের। সম্প্রতি ট্রাম্পও বলেছেন মোদি তার ভালো বন্ধু এবং ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন রয়েছে। মোদি মার্কিন রাষ্ট্রপতির সেই স্তুতি শুনে মুহূর্তেই প্রতিক্রিয়া দেন। এতদিন মার্কিন রাষ্ট্রপতি এত কথা বলার পরও প্রতিক্রিয়াহীন ছিলেন মোদি। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর আর প্রতিক্রিয়া না দিয়ে থাকতে পারেন নি মোদি। তবে এত কিছুর পরও মোদি নিউইয়র্কে গিয়ে ট্রাম্পকে এবং গোটা বিশ্বকে তার বার্তা এবং ভারতের অবস্থান জানাতে পারতেন। কিন্তু কেন মোদি সেই সুযোগ হাতছাড়া করলেন তা মোদিই জানবেন এবং ভবিষ্যতে জানাবেন।ততদিনে বিশ্ব রাজনীতি এবং কূটনীতির অনেক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *