এএমসির ১৬ কোটি জালিয়াতি কাণ্ড, গ্রেপ্তার হতে পারেন একাধিক ব্যাঙ্ক-নিগম কর্মী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- আগরতলা পুর নিগমের ১৬ কোটি জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার হতে পারেন ইউকো ব্যাঙ্কের একাধিক কর্মী। সে সাথে গ্রেপ্তার হতে পারে আগরতলা পুর নিগমের দুই থেকে তিনজন কর্মী।তদন্তে নেমে শুক্রবার ব্যাঙ্কের কামান চৌমুহনী শাখার কিছু চেক, সিসিটিভি ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।জালিয়াতির মামলার তদন্ত যেতে পারে ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইকনোমিক অফেন্স শাখায়। ইতিমধ্যে ক্রাইম ব্রাঞ্চের পুলিশ অফিসাররা প্রাথমিকভাবে তদন্তে পশ্চিম আগরতলা থানার পুলিশকে সাহায্য করছেন ইউকো ব্যাঙ্কে শুধুমাত্র আগরতলা পুর নিগমের চেক জালিয়াতি করে ১৬ কোটি টাকা গায়েব করা হয়নি। অন্যদের টাকাও জালিয়াতি হতে পারে। এমনই সন্দেহ প্রকাশ করলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার। তিনি পুলিশের কাছে চেক জালিয়াতির ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ইউকো ব্যাঙ্ক থেকে পুর নিগমের হাফিস হয়ে যাওয়া সমস্ত টাকা ফেরত চেয়েছেন। তিনি প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ব্যাঙ্কের গাফিলতির জন্য পুর নিগমের টাকা গায়েব হয়েছে। পুর নিগমের কারও গাফিলতি নেই। এই টাকা ফেরত দিতেই হবে। তবে মেয়র পুর নিগমের কারোর গাফিলতি নেই বলে দাবি করলেও, নিগমের ক্যাশিয়ার, ডিডিও পুলিশের তদন্তের আওতায় রয়েছে বলে খবর।
আগরতলা পুর নিগমের চেক জালিয়াতি মামলায় ইউকো ব্যাঙ্কের কামান চৌমুহনী শাখায় শুক্রবার দিনভর অভিযান চালায় পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে পুর নিগমের নকল চেক, ব্যাঙ্কের ভেতর ও বাইরের সিসিটিভির ফুটেজ। এমনকী কামান চৌমুহনী এলাকার সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করেছে পশ্চিম আগরতলা থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ব্যাঙ্কের একাধিক কর্মীর উপর সন্দেহ করছে। তবে যে প্রতারক ব্যাঙ্কে চেক জমা করেছে তাকে শনাক্ত করেছে তদন্তকারী পুলিশ টিম।এমনকী যে প্রতারক বারবার গিয়ে ব্যাঙ্কে চেক জমা করেছে সেই জালি ব্যক্তিকেও শনাক্ত করা হয়ে গেছে। খুব শিগগিরই ১৬ কোটি টাকার চেক জালিয়াতি মামলায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যাঙ্কের কর্মী সহ অন্য একাধিক ব্যক্তিকে আটক করতে চলেছে।
পশ্চিম আগরতলা থানার ওসি রানা চ্যাটার্জি জানান, প্রাথমিক তদন্তে মূল ষড়যন্ত্রকারীর পরিকল্পনা বোঝা গেছে। তাকে খুব শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে। তদন্তে দেখা গেছে, একই লোক আগরতলা পুর নিগমের কর্মী পরিচয় দিয়ে বারবার ইউকো ব্যাঙ্কের কামান চৌমুহনী শাখায় গেছে। তার কাছেই চেক ছিল। চেকগুলি আরটিজিএস করা হয়েছে। যে কারণে পুর নিগমের অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাঙ্ক থেকে সহজেই প্রতারকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে এই চক্রে বেশ কয়েকজন জড়িত, তা জানতে পেরেছে পুলিশ। এর মধ্যে ইউকো ব্যাঙ্কের গাফিলতি রয়েছে তাও পুলিশের কাছে একপ্রকার স্পষ্ট। এখন শুধু গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর অপেক্ষা।
আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, আমাদের টাকা ইউকো ব্যাঙ্কে রাখা আছে। আমরা টাকা তুলতে চেক পাঠাইনি। যেসব চেক থেকে টাকা গেছে এগুলি পুর নিগমের কাছেই আছে। কাউকে দেওয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে পুর নিগমের অ্যাকাউন্ট থেকে। অথচ ব্যাঙ্ক থেকে ম্যানেজার একবারও ফোন করে জানতে চাননি। কেন এমন হবে? বড় লেনদেনের ক্ষেত্রে তো ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জানতে চান। এক্ষেত্রে কেন জানতে চাইলেন না? এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। দীপকবাবু পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আমাদের টাকা ফেরত দিতেই হবে। পুর নিগম সেপ্টেম্বর মাসে ইউকো ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দেখতে গিয়েছিল। তখন দেখা যায় ১৬ কোটি টাকার উপর বেআইনিভাবে বেরিয়ে গেছে। এরপরই ব্যাঙ্ককে জানানো হয়। থানায় মামলা করেছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ তদন্ত করছে। আমরা আশাবাদী মূল চক্রান্তকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি জানান, তদন্তে পুলিশকে পুর নিগম সাহায্য করবে। আমাদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে পুর নিগমের কর্মীরা অবশ্যই সাহায্য করবেন।
এদিকে পুর নিগম সূত্রে জানা গেছে, যে ছয়টি চেক থেকে টাকা গেছে এগুলিতে চেকের নম্বরগুলি ঠিক ছিল। তবে জালি চেক ছিল। আসল চেক রয়ে গেছে পুর নিগমের অ্যাকাউন্ট বিভাগেই। কোনো সফটওয়ার ব্যবহার করে নকল চেক তৈরি করা হতে পারে। নম্বরগুলি পুর নিগমের পূর্ত বিভাগের ক্যাশিয়ার জানার কথা রয়েছে। তার গতিবিধিও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। সব টাকা পুর নিগমের ০০৯১০২০৫৫৫৬০৫০ এই অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ৫ আগষ্টে গণেশ এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ৯৯ হাজার ৪০০ টাকা তুলে নিয়েছে। এতে চেক নম্বর ছিল নং ০০০৪৪১। একই তারিখে শ্রী সাই বালাজি অ্যাসোসিয়েট প্রাইভেট লিমিটেড ২ কোটি ১৭ লক্ষ ৪৮ হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছে। চেকের নম্বর ছিল ০০০৪৩৯। এরপর ৮ আগষ্টে পালিওয়াল এন্টারপাইজ ০০০৪৪৭ নম্বর চেকের মাধ্যমে তুলে নিয়েছে ২ কোটি ৬১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭০০ টাকা। একই তারিখে আরইউ এন্টারপ্রাইজ ০০০৪৫০ নম্বর চেক দিয়ে তুলে নেয় ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা। ২ সেপ্টেম্বরে এভি অ্যাসোসিয়েশন ০০০৪৪০ নম্বর চেকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৫৭লক্ষ ৪৭ হাজার ৭০০ টাকা তুলে নিয়েছে। সব শেষে আরটিজিএসের মাধ্যমে বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ ০০০৪৪৯ নম্বর চেকের মাধ্যমে ২ কোটি ৬৫ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা তুলে নেয়। যদিও পুর নিগম আরটিজিএস করেনি বলে পরিষ্কারভাবেই দাবি করেছে পুলিশের কাছে। ইউকো ব্যাঙ্ক কর্মীরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে দাবি করেছে একজন ব্যক্তি বারবার পুর নিগমের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ব্যাঙ্কে গেছে। সিইওর স্বাক্ষর করা চেকগুলি জমা দিয়েছেন বিভিন্ন কোম্পানির নামে। তবে এই ঘটনা জুড়ে জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এবং চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ইউকো ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এ মারাত্মক প্রতারণার দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না। প্রশ্ন উঠেছে পুর নিগমের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রেও। যারা পুর নিগমের অ্যাকাউন্টস দেখভাল করেন অর্থাৎ যারা দায়িত্বে আছেন, তারা কী এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না? একের পর এক বিশাল পরিমাণ অর্থ নিগমের একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে! তাদের কাছে কী ব্যাঙ্ক থেকে কোনো ম্যাসেজ আসেনি?সব মিলিয়ে বড় ধরনের রহস্য তৈরি হয়েছে। তবে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।