বিধানসভার ঘোষণা হিমঘরে!বন রক্ষায় সাত মাসেও নিযুক্ত হয়নি টিএসআর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে বনজ সম্পদ রক্ষায় টিএসআর জওয়ান নিযুক্তি অধরা।যদিও গত মার্চ মাসে বিধানসভা অধিবেশনে ত্রিপুরার বনজ সম্পদ রক্ষায় টিএসআরর জওয়ান নিযুক্তির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। বিস্ময়ের ঘটনা হলো এখন প্রায় ৬ মাস হচ্ছে। বনজ সম্পদ রক্ষায় টিএসআর জওয়ান নিযুক্ত করলো না রাজ্য সরকার।
জানা গিয়েছে, গত ২৭ মার্চ ত্রিপুরা বিধানসভা অধিবেশনে রাজ্যের বনজ সম্পদ রক্ষায় চারশ টিএসআর জওয়ান, আধুনিক হাতিয়ার, ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চ এবং স্পেশাল টাক্স ফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা। ট্রেজারি বেঞ্চের পক্ষে বনমন্ত্রীর প্রস্তাবেও বিধানসভার অধিবেশনে সীলমোহর প্রদান হলেও, তা বর্তমানে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, বিধানসভা অধিবেশনের পরই বনজ সম্পদ সুরক্ষায় প্রায় ৬০০ শতাধিক ‘টিএসআর নিযুক্ত’ একটি ফাইল তড়িঘড়ি আরক্ষা দপ্তর থেকে মহাকরণে পাঠানো হয়েছে। অথচ প্রায় ৬ মাস হয়ে চললেও ফাইলটিতে স্বাক্ষর হয়নি।অভিযোগ, রাজ্যে আমলাদের ক্ষমতা চূড়ান্ত
পর্যায়ে উঠে গিয়েছে।ফলে মন্ত্রী, বিধায়করা পর্যন্ত বিপাকে পড়ে গিয়েছেন। এমনকী বিধানসভা অধিবেশনের সিদ্ধান্ত কার্যকর নিয়ে পর্যন্ত তালবাহানা শেষ হচ্ছে না।
এই সুযোগে সারা রাজ্যেই বেড়ে গিয়েছে বনদস্যুদের প্রাণঘাতি হামলা,লুটপাট।
বনদস্যুদের প্রাণঘাতি হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বনকর্মীরা। শুধু তাই নয়, বনদস্যুরা বনজ সম্পদ সহ কোটি কোটি টাকা মূল্যবান গাছ পর্যন্ত লুটে নিয়ে যাচ্ছে। এরপরও বনজ সম্পদ রক্ষায় টিএসআর জওয়ান নিযুক্ত বিশবাঁও জলে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
বন দপ্তর সূত্রে খবর, ধর্মনগর থেকে সাক্রম রাজ্যে প্রত্যেকদিন চলছে বনদস্যুদের হামলা হুজ্জতি লুটপাট। এমনকী তাদের হামলায় গুরুতর আহত হচ্ছেন বন দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মচারীরা। এখন তো বনদস্যুদের প্রাণঘাতি হামলায় সাধারণ মানুষ পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছেন। অবাক করার বিষয় হলো রাজ্যে সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
বিধানসভা সূত্রে খবর, গত ২৬ মার্চ তিপ্রা মথা বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মার উত্থাপিত একটি প্রশ্নের জবাবে বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা রাজ্যের বন সুরক্ষায় মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে টিএসআর জওয়ান মোতায়েন প্রস্তাবগুলি উত্থাপন করেছিলেন। জানা গিয়েছে, এরপর এ সংক্রান্ত একটি ফাইল আরক্ষা দপ্তরে বন দপ্তরের অনুমোদন নিয়ে গিয়েছে। আরক্ষা দপ্তর থেকে ফাইলটি মহাকরণে যায়। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো। অভিযোগ, এরপর কতিপয় আধিকারিকরা এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। আধিকারিকরা কোন্ ক্ষমতাবলে বিধানসভার সিদ্ধান্ত কার্যকর করছেন না। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিধানসভায় সিদ্ধান্তর পরও আধিকারিকরা ফাইল আটকে রাখার ক্ষমতা দেখাতে পারেন। এও এক ধরনের আমলা রাজত্বের নির্দশন।
বিধানসভায় বনমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, বন দপ্তরে কর্মীর অভাব মারাত্মক। যারা বর্তমানে আছে, তারা বয়সের ভারে এখন আর সেইভাবে চলতে পারেন না। মন্ত্রী বলেন, বন্দুকেরও একটা সম্মান আছে। বর্তমানে বনকর্মীদের হাতে যে বন্দুক (হাতিয়ার) আছে যেগুলি মান্ধাতা আমলের। সেগুলোকে সম্মান দেয় না কেউই। পরিস্থিতি এমন যে, কোনো অবৈধ পাচার বা কাজকর্মের খবর পেলে অভিযানের আগেই সংশ্লিষ্টদের কাছে খবর চলে যায়। ফলে চেষ্টা থাকলেও কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।
বনমন্ত্রী অনিমেষ বাবু মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরও বলেছিলেন, রাজ্যের বনজসম্পদ রক্ষায় এবং অবৈধ কাজকর্ম প্রতিরোধ করতে চারশ টিএসআর জওয়ান দিতে হবে। প্রতিটি ডিএফওতে কম করে ৫০ জন টিএসআর জওয়ান রাখার। মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে গোপন খবর সংগ্রহের জন্য বন দপ্তরের একটি ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চ থাকা খুবই জরুরি। সেই সাথে একটি টাস্কফোর্স গঠন করাও জরুরি। এই কাজগুলি করতে পারলে বনজ সম্পদ রক্ষা করা অনেকটা সহজ হবে বলে দাবি ছিলো বনমন্ত্রীর। তবে এখন পর্যন্ত এক অদৃশ্য কারণে বন দপ্তরের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিলো না রাজ্য সরকার।
বন সুরক্ষায় টিএসআর জওয়ান মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজ্য সরকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যব্যাপী। একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর প্রস্তাব যদি প্রায় ৬ মাসে কার্যকর না হয়। তবে সহজেই অনুমেয় সাধারণ মানুষের প্রতিশ্রুতি পূরণে কতোদিন সময় নিতে পারে রাজ্য সরকার! উল্লেখ্য, গত ৬ মাস ধরে বিভিন্ন সভায় বন সম্পদ সুরক্ষায় টিএসআর জওয়ান নিয়োগের দাবি করছেন বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা।তবে হেলদোল নেই রাজ্য সরকারের।