ভারতের জবাব!!

অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে ভারতের কি ভোলবদল হচ্ছে?সম্প্রতি ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে এরকমই আভাস মিলেছে। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর সম্প্রতি রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন। রাশিয়ায় গিয়ে তিনি সে দেশের বিদেশমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা করেছেন এবং বৈঠক করেছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই দুই দেশের আলোচনায় উঠে এসেছে মার্কিন প্রসঙ্গ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের উপর যে ৫০% শুল্ক চাপিয়েছে এ প্রসঙ্গটিও উত্থাপিত হয় উভয় দেশের মধ্যে আলোচনায়। তখনই ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিশানা করেন। ট্রাম্পের শাসনকালে এই প্রথম ভারতের তরফে ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করা হয়। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয়দের পায়ে শেকল পরিয়ে ভারতে প্রত্যর্পণের সময়ও ভারত সরকারের তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে বিরোধীরা ভারত সরকারের সমালোচনা করলেও প্রধানমন্ত্রী মোদি কিংবা বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এরও আগে ভারতীয় পণ্যের উপর পঁচিশ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। তখনো ভারত কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। কিছুদিন আগে রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেন কেনে’ এর জন্য অতিরিক্ত আরও পঁচিশ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতোদিন ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে প্রায় মৌনব্রত পালন করলেও এবার ধীরে ধীরে ভারত মুখ খুলতে শুরু করেছে। রাশিয়ায় গিয়ে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রীতিমতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কামান দেগেছেন। জয়শঙ্কর বলেছেন আমেরিকা যেমন নিজের বাণিজ্য স্বার্থকে সবথেকে বেশি অগ্রাধিকার দেয় তেমনি ভারতেরও সেই রকম অধিকার রয়েছে। অতএব ভারত নিজের স্বার্থই সবার আগে দেখবে। এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতকে জ্ঞান দিতে হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোঁসা হয়েছিল কেন ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে। তাই ভারতের উপর আরও পঁচিশ পার্সেন্ট শুল্ক লাগিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে যে রাশিয়া ভারতে তেল বিক্রি করে সেই তেলের টাকায় ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ চালাচ্ছে। ট্রাম্পের মতলব হল রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করা। এবার তাই ভারত ও রাশিয়া নিজেদের মধ্যে আরও কাছাকাছি আসতে শুরু করলো এই ইস্যুতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি মত ছিল রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি তেল কেনে ভারত। আদতে এটি সত্যি নয়। রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি তেল কেনে চিন। এটা জেনেশুনেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর ৫০% শুল্ক চাপায়। এর উদ্দেশ্য একটাই রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করা, ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
সম্প্রতি ভারত এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছে যে ২০২২ সালের পর থেকে রাশিয়ার সাথে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ সব থেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মার্কিন যে প্রচার করছে তাও ঠিক নয়। ভারতের থেকেও রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক লেনদেন অন্যান্য দেশের অনেক বেশি। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন ভারতকে নিশানা করলো এই প্রশ্নও তুলেছেন জয়শঙ্কর রাশিয়ায় গিয়ে। রাশিয়ায় গিয়ে জয়শঙ্কর আরও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে বলেছেন এই প্রথম আমেরিকায় এমন একজন প্রেসিডেন্টকে দেখা যাচ্ছে যিনি বাণিজ্য অথবা বিদেশনীতি কিংবা কূটনীতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কথা বলছেন, হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, বাণিজ্য, শুল্ক প্রকাশ করে দিচ্ছেন। এটা আমেরিকার দীর্ঘ ইতিহাসের প্রটোকল বিরোধী। বিদেশমন্ত্রী আরও বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রচার করছে যে রাশিয়া থেকে তেল কিনে ভারত নাকি ব্যবসা করছে। এই যুক্তিও হাস্যকর বলে তার মত। তিনি বলেছেন, ভারত থেকে যদি তেল বা তেলজাতীয় পণ্য কেউ না কিনতে চায় তাহলে কোনো দরকার নেই। তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথা কেন? সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে নিয়ে যেভাবে একের পর এক কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রেখেছিল তাতে ভারতের তরফে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দেওয়া একান্তই জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত রাশিয়ায় গিয়ে রাশিয়াকে পাশে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দিলো ভারত।
সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধবিরতি নিয়েও মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেন যে তিনি নাকি যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন ভারত পাকিস্তানের মধ্যে। যদিও ট্রাম্পের নাম মুখে না নিয়েও ভারত জানিয়ে দেয় যে, কোনো দেশ যুদ্ধবিরতি করায়নি। তবে রাশিয়ায় গিয়ে যেভাবে ভারত মার্কিনকে নজিরবিহীন আক্রমণ করেছে তাতে আগামীদিন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক কোন পথে হাঁটে তাই দেখার অপেক্ষায় রয়েছে কূটনৈতিক মহল। এদিকে সম্প্রতি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প আলাস্কায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন। মূলত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়েই দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে কথা হয়। এই বৈঠকের বিষয়ে পুতিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টেলিফোন করে জানান। সব মিলিয়ে বলা যায় ভারত রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত -মার্কিন সম্পর্ক,রাশিয়া -মার্কিন সম্পর্ক, রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি ইস্যুতে আগামীদিনে তিন শক্তিধর রাষ্ট্র কী দিশা দেখায় তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে গোটা বিশ্বের।