ডিগ্রি কলেজে ২০ দিন পড়াশোনা! ফাইনাল পরীক্ষা ঘিরে ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ মুখ থুবড়ে পড়েছে। সাধারণ ডিগ্রি কলেজগুলিতে পড়াশোনা লাটে উঠেছে। শুধু তাই নয় জাতীয় শিক্ষানীতির নীতিমালা পর্যন্ত লংঘন হচ্ছে রাজ্য সরকারের ২৮টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে। বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীরা। অথচ শীতঘুমে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। রাজ্যের উচ্চশিক্ষার মানও তলানিতে নেমে এসেছে।
যদিও ২০২৩ সালে রাজ্যব্যাপী প্রচার করে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ত্রিপুরায় কার্যকর হয়েছে। এমনকী জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ত্রিপুরা সরকারের সাধারণ ডিগ্রি কলেজে চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি কোর্সে পঠনপাঠন শুরু হয়। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল।কিন্তু উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের ব্যর্থতার জন্যে মাত্র দুবছরেই চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি কোর্স নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির আইন অনুযায়ী চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি কোর্সে প্রত্যেক সেমিস্টারে ন্যূনতম ৯০ দিন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টার মিলিয়ে প্রথম বছরে ১৮০ দিন শ্রেণী কক্ষে পড়াশোনা হবার কথা। তবে বাস্তব হলো শিক্ষক শিক্ষিকার সংকটে জেরবার সাধারণ ডিগ্রি কলেজে প্রত্যেক সেমিস্টারে ন্যূনতম কুড়ি দিন ও শ্রেণী কক্ষে পড়াশোনা হচ্ছে না। চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি কোর্সে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের সিলেবাস শেষ হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত চতুর্থ সেমিস্টারে পাঠরত পড়ুয়াদের জন্যে ‘সামার ইন্টার শিপের’ সিলেবাসও তৈরি হয়নি।
অবাক করার বিষয় হলো কুড়ি দিন ক্লাস করিয়ে এখন চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি কোর্সের দ্বিতীয় সেমিস্টারে পাঠরত পড়ুয়াদের ফাইনাল পরীক্ষা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে নিতে যাচ্ছে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। যদিও পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল জুন মাসে। এরমধ্যে আবার কুড়ি দিন ক্লাস করিয়ে চতুর্থ সেমিস্টারের (ওল্ড সিলেবাস) পরীক্ষা নিয়েছে দপ্তর।
এখন আবার চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি কোর্সের চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে ক্লাস কুড়ি দিনও হয়নি। আরও অবাক করার বিষয় হলো শ্রেণী কক্ষে একদিনও ক্লাস হয়নি তবে ওল্ড সিলেবাসের ষষ্ঠ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। এখন আবার ষষ্ঠ সেমিস্টারের উত্তর মূল্যায়ন হচ্ছে সাধারণ ডিগ্রি কলেজে। অভিযোগ অনার্সের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করছেন অতিথি শিক্ষকরা। ওল্ড সিলেবাসের পঞ্চম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই ষষ্ঠ সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। যদিও পঞ্চম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা হবার কথা ছিল গত ডিসেম্বর মাসে। যা হয়নি।
এদিকে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ ইন্টারনাল পরীক্ষা। এসাইনমেন্ট সহ বিভিন্ন বিষয় মিলিয়ে তাদের ক্লাস কুড়ি দিনের বেশি হয়নি। কলেজে মেজরের ক্লাসের টাইমে মাইনর সহ অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ের এসাইনমেন্ট নেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা কেউ মেজরের ক্লাসে আসেনি। তাই ক্লাস হয়নি। আবার কলেজের অনেক টিচার ছুটিতে আছেন। দিনে তাদের মেজরের দুটি করে ক্লাস (যেখানে নিয়মে তাদের চারটি করে ক্লাসের কথা) সেটাও ঠিক মতো হচ্ছে না। এনএসএস সহ বিভিন্ন দায়িত্বে যারা আছেন, তারা ক্লাস করতে পারেন না। এভাবে তো কলেজের পঠনপাঠন একেবারে শূন্য। অথচ শিক্ষা দপ্তর দাবি করে, কলেজে গুণগত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু। এটাই কি গুণগত শিক্ষা!
দ্বিতীয় এবং চতুর্থ সেমিস্টারের এক ভাগ সিলেবাসও পড়ানো হয়নি। মেজর বিষয়ে তাদের দুটো করে পেপার। এক একটা সিলেবাসে প্রচুর আলোচ্য বিষয় বাকি। একটি ক্লাসে ৪/৫ টা বিষয় আলোচনা করে সিলেবাস শেষ করার কথা বলা হচ্ছে। এটাই বাস্তব। গেস্ট লেকচারারদের ক্লাসও রুটিনের বাইরে দেওয়া হয় না। শহরের চারটি বনেদি কলেজ এমবিবি, বিবিএমসি, উইমেন্স এবং রামঠাকুর কলেজে পড়াশোনার নাম গন্ধও নেই। তবে সহজেই অনুমেয় রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমার সাধারণ ডিগ্রি কলেজগুলির কি বেহাল অবস্থা।জেলা, মহকুমার কলেজগুলিতে শ্রেণী কক্ষে দশ দিনও ক্লাস হচ্ছে না। ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা।