বি সুদর্শন রেড্ডি উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী নাম ঘোষণা করল ইন্ডিয়া জোট!!
দংশন না বুঝে চিকিৎসায় জট,মৃত্যু শিশুর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-হাতের কাছে হাসপাতাল। চিকিৎসকও ছিলেন। তবু বাঁচানো গেল না দশ বছরের কন্যা শিশু অশমি মজুমদারকে। বিষাক্ত প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হয়ে পরপর তিন হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল বাইখোড়ার পশ্চিম চরকবাইয়ের বৈদ্যপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জীব মজুমদারের একমাত্র সন্তান। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতে। রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ নিজের ঘরে আচমকা চিৎকার দিয়ে ওঠে ছোট্ট অশমি। দেখা যায় তার পায়ের আঙুলে কোনো বিষাক্ত প্রাণী বা পোকা কামড় দিয়েছে। তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইখোড়া প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্রে। কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে পরীক্ষা করেন এবং প্রেসক্রিপশন দেন। তবে সেই প্রেসক্রিপশনে সাপের কামড়ের জন্য জরুরি ওষুধ অ্যান্টিভেনম দেওয়া
হয়নি।বরং তিনটি ইনজেকশন প্রয়োগ করে শিশুটিকে ছয় ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ দেন ডাক্তার। রক্ত পরীক্ষারও নির্দেশ ছিল। এরপর ডাক্তার কোয়ার্টারে রাতের খাবারে চলে যান। অশমির তখনও অবস্থা স্থিতিশীল ছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রাত সাড়ে দশটার দিকে রক্ত পরীক্ষা না করেই পরিবার অশমিকে বাড়ি নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় অবনতি। শরীরের রং বদলাতে থাকে। দাঁত খিঁচে আসছিল, কথা বলা বন্ধ। কাগজে লিখে অসুস্থতার কথা জানায় অশমি। মধ্যরাত সাড়ে বারোটার সময় আবার নিয়ে যাওয়া হয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।তখন অক্সিজেন এবং নেবলাইজেশন দিলেও শিশুর অবস্থা সামলানো যায়নি।এরপর অ্যাম্বুলেন্সে দেড়টার সময় পাঠানো হয় শান্তিরবাজারস্থিত দক্ষিণ জেলা হাসপাতালে। সেখানে রক্ত পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে বিষক্রিয়া।শেষ মুহূর্তে দেওয়া হয় অ্যান্টিভেনম। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছিল। অবস্থা অবনতির দিকেই যাচ্ছিল। তাই রেফার করা হয় জিবি হাসপাতালে। কিন্তু আগরতলায় পৌঁছনোর আগেই সব শেষ। হাসপাতালের দরজায় পৌঁছে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অশমি।
ঘটনার পর থেকেই এলাকায় শোকের আবহ। পরিবার ও গ্রামবাসীর অভিযোগ, প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসক দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নিলে হয়তো অশমির জীবন বাঁচানো যেত। অশমির মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা সঞ্জীব মজুমদার ও তার পরিবার।সমগ্র বাইখোড়াজুড়ে শোকের ছায়া। তবে শুধু শোক নয়, ক্ষোভও স্পষ্ট। অনেকের মতে, প্রথম পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা হলে হয়তো প্রাণটা বাঁচানো যেত।
চিকিৎসক মহলের পাল্টা যুক্তি, সাপে কামড়েছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি অশমি নিজে ও তার বাবা-মা। তাই সরাসরি অ্যান্টিভেনম দেওয়া বিপজ্জনক হতে পারত। এই ওষুধের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, রক্ত পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে এতটা ঢিলেমি কেন? পরিবারকে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে দেওয়া হলো কেন?
ছোট্ট অশমির চলে যাওয়া শুধু এক পরিবারকেই শোকস্তব্ধ করেনি। দেখিয়ে দিল গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ফাঁকফোকরও। আধুনিক যুগে দাঁড়িয়েও সাপের কামড়ে শিশু মারা যাচ্ছে এটা অপ্রত্যাশিত এবং মর্মান্তিক।
অশমির এক আত্মীয় জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে অন্ধকারে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে খেতে খুব ভালোবাসত অশমি। সেই মোবাইল আনতে গিয়েই শোবার ঘরে পায়ে বিষাক্ত প্রাণীর কামড় খায় সে।
এ ঘটনায় আবারও সামনে এলো রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রশ্নচিহ্ন। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও আরো একবার স্পষ্ট হলো।