August 19, 2025

ভোট চুরি বনাম কমিশন!!

 ভোট চুরি বনাম কমিশন!!

একদিকে ভোট চুরির অভিযোগ, অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচন এ কমিশনের হুক্কার।ত্রই দুই আবহে দেশের জাতীয় রাজনীতির পারদ এখন তুঙ্গে।জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে দেশজুড়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা।বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন বর্তমান দেশের শাসক দলের হয়ে কাজ করছে।এই ইস্যুতে কংগ্রেস, আরজেডি সহ আরও একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দল সরাসরি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। এই ভোট চুরি অভিযোগকে সামনে রেখে ভোটমুখী বিহারের সাসারাম থেকে রবিবার কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী দীর্ঘ ১৩০০ কিলোমিটার ভোটার অধিকার যাত্রা শুরু করেছেন।অনেকটা এর আগে সংঘটিত রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার মতোই।রবিবার থেকে শুরু হওয়া রাহুল গান্ধীর ভোটার অধিকার যাত্রায় এদিন তাঁর সঙ্গে দেখা গেছে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব, বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব, বিকাশ শীল ইনসান পার্টির মুকেশ সাহানি, সিপিআইএম (লিবারেশন)-এর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সিপিএমের সুভাষিনী আলী, সিপিআই-এর পি সন্তোষ কুমার সহ আরও বেশ কয়েকজনকে। সাসারাম থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘সারা দেশে আজ জানে বিজেপির সহযোগিতায় ভোট চুরি করেছে নির্বাচন কমিশন। ইন্ডিয়া জোট এই দফায় নির্বাচন কমিশনকে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট চুরি করতে দেবে না।’ রাহুল আরও বলেছেন, বিহার হচ্ছে নির্বাচন চুরির ‘সর্বশেষ ষড়যন্ত্র’। শুরু হয়েছে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনীর মাধ্যমে। বিহারে বিধানসভা ভোটের আগে নিবিড় সংশোধনীর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ভোটারের ভোটাধিকার বাতিল করতে বিজেপির যে গোপন ছক, তার বিরুদ্ধেই এই যাত্রা বলে দাবি করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
এদিকে রাহুল গান্ধী সহ বিরোধী জোট যখন ভোট চুরি নিয়ে সরব হয়েছে এবং একের পর এক প্রশ্ন তুলে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলছে, কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রারবার প্রশ্ন তুলেছে, ঠিক তখনই ময়দানে নামে নির্বাচন কমিশন।রবিবারই রাজধানী দিল্লীতে সাংবাদিক সম্মেলন করে রীতিমতো কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। সাংবাদিক সম্মেলনে শুধু যাবতীয় অভিযোগের জবাব দেওয়াই নয়, বিরোধীদের উত্থাপিত সমস্ত অভিযোগকে ভিত্তিহীন, বে-বুনিয়াদও বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এদিন আরও দুই কমিশনার ড. সুখবীর সিং সান্ধু এবং ড. বিবেক যোশীকে সাথে নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার নাম না করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে নিশানা করেন। সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিয়ে, এদিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেছেন, ‘আগামী সাতদিনের মধ্যে কমিশনের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ সহ হলফনামা জমা দিতে হবে। সাত দিনের মধ্যে হলফনামা জমা না দিলে, ধরে নেওয়া হবে সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। নয়তো দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আরও বলেছেন, ‘কোনও অসত্য বারবার বললে সেটা সত্য হয় যায় না। সত্য সত্যই থাকে। সূর্য পূর্বি দিকেই উঠে এবং উঠবে। কেউ বারবার বললে সূর্য পশ্চিম দিকে উঠবে না।
কমিশন এদিন জোর দিয়ে জানায়, ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গেলে ঠিকানা ততটা জরুরি নয়, যতটা তাঁর নাগরিকত্ব। কোনও প্রমাণ ছাড়া তালিকা থেকে একজনেরও নাম বাদ যাবে না। বাদ যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। কংগ্রেস সাংসদ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির যে অভিযোগ করছেন সেই প্রসঙ্গে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সরাসরি কিছু না বললেও তাঁর মন্তব্য, ‘পুরো দেশ জানে এর নেপথ্যে কী অভিসন্ধি রয়েছে’। তাছাড়া ‘ভোটার তালিকা’ এবং ‘ভোট’ দুটো আলাদা প্রক্রিয়া। ভোটার তালিকায় কোনও ত্রুটি থাকলে সেটা যেমন সংশোধনের সুযোগ রয়েছে, তেমনি ভোটে কারচুপি হলেও, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এতদিন পরে হঠাৎ করে এই অভিযোগ কেন? সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আরও জানান, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী দেশের যে নাগরিক ১৮ বছর পূর্ণ করেছেন, তাঁর ভোটাধিকার আছে। নির্বাচন কমিশন কোনও বিভাজন করে না। কমিশনের কাছে কোনও পক্ষ বা বিপক্ষ নেই। সবাই সমান। কমিশন নিজের সাংবিধানিক কর্তব্য থেকে এক চুলও পিছু হটবে না।সংশোধনের দাবি থেকেই বিহারে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআ) শুরু হয়েছে। খসড়া তালিকা থেকে যদি প্রকত ভোটারের নাম বাদ গিয়ে থাকে তাহলে দারি এবং আপত্তি জানানোরও সুযোগ রয়েছে।এগুলো চলমান প্রক্রিয়া।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যা বলার দেশবাসীর সামনে সব কিছু স্পষ্ট করে দিয়েছে। রাহুল গান্ধী সহ বিরোধীরা কি তাদের অভিযোনের সপক্ষে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী ভোট চুরির তথ্যপ্রমাণ সহ হলফনামা আগামী সাতদিনের মধ্যে জমা দেবে?নাকি কমিশনের মন্তব্যই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়- সেটাই এখন দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *