August 17, 2025

ট্রাম্প-পুতিন নিষ্ফলা বৈঠক!!

 ট্রাম্প-পুতিন নিষ্ফলা বৈঠক!!

সারা বিশ্বের নজর ছিল আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন প্রতীক্ষিত বৈঠকের দিকে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে বৈঠকও হলো।আগে কথা ছিলো, দফায় দফায় প্রায় সাত ঘন্টা বৈঠক হবে ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে। কিন্তু আড়াই ঘন্টাতেই আলোচনায় ইতি টানলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভলাদিমির পুতিন। এই বহুচর্চিত বৈঠকের ফলাফল কী? তা ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বের সামনে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বৈঠকশেষে দুই রাষ্ট্রনেতার কথায় যতটা বোঝা গেলো, তাতে স্পষ্ট নিষ্ফলা বৈঠক। অর্থাৎ বৈঠকে তেমন কোনও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বা মীমাংসা হয়নি। বৈঠকশেষে স্পষ্ট হয়েছে যে, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা চলবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনই থামছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পও কোনও স্থায়ী মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ট্রাম্প-পুতিন-এর এই বৈঠকের ফলাফল নিয়ে ইতিমধ্যে জোর আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, এই বৈঠক নিয়ে যতটা ভাবা হয়েছিল, বৈঠকশেষে দেখা গেলো, আদতে তেমন কিছুই হয়নি।
অথচ বৈঠকের শুরুটা উষ্ণ অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে হয়েছিল। পুতিন এবং ট্রাম্পকে একই বুলেটপ্রুফ লিমুজিনে বসতে দেখা যায়। তাঁরা হাসছিলেন এবং একে অপরের সাথে হাত মেলাচ্ছিলেন। কিন্তু চোখে দেখা এই সৌহার্দ্য বৈঠকের ফলাফলের উপর কোনও প্রভাব ফেলেনি। খবরে প্রকাশ, ট্রাম্প-পুতিনের এই বৈঠককে খুবই দুর্বল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা, এই বৈঠকে ট্রাম্প অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ট্রাম্পের জয় তখনই হতো, যদি তিনি এটা করতে পারতেন। বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করছেন। উল্টোদিকে, এই বৈঠকে অনেকটাই পুতিনের জয় হয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল। তাদের অভিমত, পুতিনের জন্য জয় এটাই যে, তিনি অস্পষ্ট ভাষায় পরবর্তী আলোচনার জন্য সম্মতি জানাবেন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবেন। বৈঠকে কিন্তু সেটাই হলো।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিরাপত্তা সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলাস্কায় এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আয়োজন হয়েছিল। ট্রাম্প ও পুতিনের এই বহুচর্চিত বৈঠকের উপর নজর ছিল ভারতেরও। কারণ, রাশিয়া থেকে তেল কিনে ভারত যুদ্ধে মদত জোগাচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ তুলেছে ট্রাম্প। সম্প্রতি ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় যে, ক্ষুব্ধ ট্রাম্প ভারতের উপর পঞ্চাশ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেয়। যা গোটা বিশ্বে নজিরবিহীন। ট্রাম্পের এই নজিরবিহীন কার্যকলাপে, ভারত মোটেও বিচলিত হয়নি। বরং ভারত যে কোনও চাপের কাছে ঝুঁকবে না, সেটাও ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উল্টো ভারত মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের হুমকিকে উপেক্ষা করে রাশিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার পথে অগ্রসর হয়। যা ট্রাম্প কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। এমন একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠক নির্ধারিত হয়। বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য তৈরি হয়নি দুই শক্তিধর রাষ্ট্রনেতার মধ্যে। বরং পুতিনকে আপ্যায়নে কোনও খামতি না রাখলেও, ট্রাম্পকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে বলে অভিমত কূটনীতিকদের একাংশের।।
খবরে প্রকাশ, ২০১৮ সালের পর এই প্রথম সরকারীভাবে মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প ও পুতিন। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই প্রথম আমেরিকার মাটিতে পা রাখলেন পুতিন। কিন্তু সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, দেখা হলো, কথা হলো, হলো না শুধু মীমাংসা। এই আবহে মার্কিন রাজনীতিও সরগরম হয়ে উঠেছে। পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে না পারাটাকে, ট্রাম্প বিরোধিরা তার চরম ব্যর্থতা বলে দাবি করে সমালোচনায় মুখর হয়েছে। ট্রাম্প বিরোধীদের বক্তব্য, একেবারেই মাথা নোয়াননি পুতিন। কূটনীতিকদের একাংশের মতে, পুতিনকে যুদ্ধ বিরতিতে রাজি করাতে না পারাটা ট্রাম্পের পরাজয়। এখন সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে, ট্রাম্প-পুতিনের এই বৈঠকের পর ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে কোনও পরিবর্তন আসে কি না? সেটাই এখন দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *