সতর্ক অবস্থান!!

ভারতের অন্যতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে মৌলবাদী এবং ভারত বিরোধী শক্তিগুলো ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। গত বছর ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই ভারত বিরোধী উপাদানগুলো শুধু শক্তিশালীই হচ্ছে না, বিভিন্ন ভাবে তারা বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছর ফেব্রুয়ারীর মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন পর্ব সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতের মানচিত্র বিতর্ক বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে ক্রমেই নতুন ইন্ধন জোগাচ্ছে।
ঘটনা হলো শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে একাংশের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা নিজে থেকেই তার নির্বাসনের জন্য ভারতকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর নয়াদিল্লীর সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক তিক্ত থেকে চরম পর্যায়ে যেতে শুরু করে। যদিও অনেক আগে থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার চলছিল, বাংলাদেশের উপর কতৃত্ব আরোপের লক্ষ্যেই হাসিনা সরকারকে নয়াদিল্লী সমর্থন জুগিয়ে চলেছে। কিন্তু একটা সময়ে এই প্রচার এমন মাত্রাতে গিয়ে দাঁড়ায় যে, দেশে হাসিনা বিরোধী মনোভাবকে বাংলাদেশের একাংশ মানুষ ভারত বিরোধিতার অঙ্গ হিসাবে দেখতে শুরু করে। এবার নতুন বিতর্ক দানা বেঁধেছে ঢাকাতে আয়োজিত সেমিনার ও কর্মশালায় ভারত বিরোধী মানচিত্র প্রকাশনা নিয়ে। যদিও ঘটনাটি প্রায় মাস চারেক আগের। কিন্তু একটি প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসাবে যে কায়দায় ভারতের মানচিত্র বিকৃত করে প্রকাশিত হয়েছে তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ঘটনাটি হয়তো এতটা প্রচারে, আলোর সামনে জায়গা করে নিতে পারত না, যদি বিষয়টি সম্প্রতি রাজ্যসভায় উত্থাপিত না হোত। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা এই বিষয়টি উত্থাপন করেন। আর তাতেই বিষয়টি আবারো প্রকাশ্যে আসে। ঘটনা হলো ভারতের গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা আর মায়ানমার রাজ্যের কিছু অংশ ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ নামে এই মানচিত্রে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুরস্ক সমর্থিত একটি ইসলামী গোষ্ঠী বাংলাদেশে নিজেদের কর্মকাণ্ড বাড়ানোর জন্য এই কাজ করছে বলে জানা যাচ্ছে।
এনজিও’র ব্যানারে তুরস্কের সমর্থিত একটি ইসলামী গোষ্ঠী ‘সালতানাত-এ-বাংলা’ এ বছর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স হলে এই ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ ‘মানচিত্র প্রকাশ করে। এই কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য হলো, পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতকে বিপাকে ফেলা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনুস সরকারকে যারা সমর্থন করছে তারা এর আগেও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল। হাসিনা ক্ষমতা হারানোর পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্রপট খুব দ্রুত বদলাতে থাকে। তখন থেকেই তুরস্ক বাংলাদেশে সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তাবিত সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে বলে খবর। এক্ষেত্রে গত আগষ্টে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ ও তুরস্ককে কাছাকাছি আনার ক্ষেত্রে পাকিস্তান বড় ভূমিকা পালন করেছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে যখন ভারত পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত শুরু করে, তাতে পাকিস্তান কার্যত দিশাহারা হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানের এই কঠিন সংকটে একমাত্র দেশ তুরস্ক যারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল। চিন সহ কয়েকটি শক্তির প্রচ্ছন্ন সমর্থন যদিও বা থাকে, সেক্ষেত্রে তুরস্কই প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে অস্ত্র, মিসাইল ও ড্রোন সাহায্য করেছিল। শুধু এখানেই থেমে থাকেনি তুরস্ক। বলা চলে ইসলামাবাদের মাটিতে তুরস্ক তার কিছু বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাকেও পাঠিয়েছিল। অর্থাৎ পাকিস্তান যখন বিপাকে ও কোনঠাসা তখন তুরস্ক কলকাঠি নাড়তে শুরু করল বাংলাদেশকে ভিত্তি করে। সব মিলিয়ে ভারত বিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রে তুরস্ক একই সাথে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে শুরু করেছে। আর এই বিষয়টি নিয়েই রাজ্যসভায় দেশের বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন ‘সালতানাত-এ-বাংলা’ তুর্কি যুব ফেডারেশন দ্বারা সমর্থিত তুর্কি এনজিও। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে তুরস্ক ও পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা ভারতের তথা উত্তরপূর্বের সুরক্ষার প্রশ্নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদর্শনীর আয়োজকরা কোনও বিদেশি রাজনৈতিক দল বা অ্যাজেন্ডার সাথে তাদের কোনও সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তবে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোটা বিষয়টির উপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে সেটা স্পষ্ট।এক্ষেত্রে বিদেশি শক্তির সাহায্য নিয়ে ইসলামী সংগঠনের এই কর্মকাণ্ড প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে যে চেষ্টা নতুন করে দিল্লী শুরু করেছিল। সেটা বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। এতে করে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের ভাবনা যদি বদলাতে শুরু করে তাতে আগামীদিনে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।