ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
বন্ধুর পিঠে ছুরি!

আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্য হলো।ভারতীয় পণ্যে পঁচিশ শতাংশ আ শুল্ক চাপিয়ে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।এমন কিছু যে হতে চলেছে,তার একটা আভাস আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল।শেষ পর্যন্ত হলোও তাই।বুধবার বিকেলে (ভারতীয় সময় অনুসারে) এই শুল্ক হার ঘোষণা করলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প। ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল অর্থাৎ ১ আগষ্ট থেকেই ঘোষিত নয়া শুল্ক হার কার্যকর হয়ে যাবে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, কেন ভারতের উপর এই অত্যাধিক শুল্ক চাপানো হলো? নিজের সমাজ মাধ্যমের পোস্টে সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ট্রাম্প। তার পোস্টে ভারতকে ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ হিসাবে উল্লেখ করে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পাশাপশি ট্রাম্পের দাবি, মার্কিন পণ্যের উপর ভারতীয় বাজারে চড়া হারে শুল্ক নেওয়া হয়। সেই কারণেই আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্য আমদানির উপর পঁচিশ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। শুল্কের পাশাপাশি ভারতের উপর একটি জরিমানা চাপানোর কথাও উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। সেই জরিমানা কত? তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি। এই নিয়ে এখন নতুন করে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য যোগ্য বিষয় হচ্ছে, কাশ্মীরের পহেলগাঁও-তে পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার পর থেকেই,ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বিশেষ করে ভারতের অপারেশন সিন্দুরের পর থেকে মোদি-ট্রাম্প সমীকরণ নিয়ে আরও বেশি করে জল ঘোলা হতে থাকে। কেননা, ভারত-পাক সংঘর্ষ বিরতিতে ট্রাম্প নিজের কৃতিত্বকেই তুলে ধরেছেন বিশ্বের কাছে। ট্রাম্প এও দাবি করেছিলেন যে, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ঢাল করে তিনি শান্ত করেছেন দুই দেশকে। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মার্কিন রাষ্ট্রপতির এই দাবি ও মন্তব্যের উল্টো কথাই বলে এসেছেন প্রথম থেকে। প্রধানমন্ত্রী মোদির এই দাবি আরও স্পষ্ট হয়েছে সংসদে। গত দুইদিন আগে সংসদে প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্টভাবে জানান, ভারত-পাক যুদ্ধ বিরতিতে বিশ্বের অন্য কোনও দেশের (তৃতীয় কোনও পক্ষ) কোনও ভূমিকা নেই। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, প্রধানমন্ত্রী মোদির সংসদে দাঁড়িয়ে এই বক্তব্যের পরই বুধবার বিকেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতকে ‘বন্ধ রাষ্ট্র’ বলে অভিহিত করে ভারতীয় পণ্যের উপর শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। ট্রাম্পের এই ভূমিকাকে অনেকে ‘বন্ধুর পিঠে ছুরি’ বসিয়ে দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করছে।
উল্লেখ্য, এর আগে এপ্রিল মাসেও ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। যা পরে স্থগিত করা হয়েছিল। এরপর ভারতের উপর কত শতাংশ শুল্ক চাপানো হতে পারে, তা নিয়ে চলছিল প্রবল গুঞ্জন। ভারত অবশ্য আশা করেছিল যে শুল্কের হার ১৫থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকবে। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। যাবতীয় জল্পনা উড়িয়ে ভারতের উপর চাপানো হয় ২৫ শতাংশ শুল্ক। এই ঘোষণায় এখন স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। এই নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। এদিকে, বুধবার রাতেই ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রক থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, মার্কিন শুল্কের এই প্রভাব বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হবে। একই সাথে দেশের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
ঘটনাচক্রে, সপ্তাহ দুয়েক আগে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পূ রাখা দেশগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। মস্কোর বাণিজ্যিক বন্ধুদের উপর একশ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এটা ঠিক যে বারবার হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও, ভারত সেই হুঁশিয়ারি | উপেক্ষা করেই মস্কোর সাথে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কেননা, রাশিয়া ভারতের সব থেকে বিশ্বস্ত বন্ধু। এই নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। আজও ভারত রুশ সামরিক সরঞ্জামের সব থেকে বড় ক্রেতা। রাশিয়ার জ্বালানির একটা বড় অংশ ক্রয় করে ভারত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ব এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যই ক্ষুব্ধ ট্রাম্প ভারতের উপর শুল্ক চাপিয়েছে। এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি কি ভূমিকা নেন? অনেকের মতে, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ও জরিমানা ঘোষণার পর ভারত-আমেরিকা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের মধ্যে একটা ফাটল এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। এমন আশঙ্কা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।এর জন্য ভারতে অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে? আদৌ পড়বে কিনা?উদ্ভপরিস্থিতি ভারত কীভাবে মোকাবিলা করবে?সেটাই এখন দেখার তবে ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ বলে ট্রাম্প যেভাবে ভারতের পিঠে ছুরি বসিয়ে দিয়েছে, তা কিন্তু গোটা বিশ্বে দৃষ্টান্ত থাকবে।এর থেকে ভারত আগামীদিনে কোনও শিক্ষা নেবে কি না? সেটাও দেখার।