ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
রামঠাকুর কলেজে ছাত্র ভর্তিতে অনৈতিকতা, শিক্ষকের স্বীকারোক্তি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রামঠাকুর কলেজে ছাত্র ভর্তি নিয়ে চরম কেলেঙ্কারি। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, কাউন্সিলের কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি এবং ভর্তি কমিটির কনভেনর মিলে টাকাপয়সার বিনিময়ে ছাত্র ভর্তি করিয়েছেন। ক্লাস শুরুর ১৭দিন পরও সেইসব ভর্তি হওয়া ছাত্রদের নাম কলেজের খাতায় কেন নেই সেজন্য তারা শিক্ষকের কাছে জানতে গেলে কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ছাত্র ভর্তি কমিটির কনভেনর ডঃ অভিজিৎ নাথ লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন, তিনি কলেজ থেকে ১০০টি ফি কার্ড বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন তবে ফেরত দিয়েছেন মাত্র ২৭ খানা। শুক্রবার এ নিয়ে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চরম তৎপরতায় কাটে কলেজ চত্বর। অধ্যক্ষ ভর্তি কমিটির দায়িত্ব অন্য শিক্ষকের হাতে ন্যস্ত করেছেন। উচ্চ শিক্ষা দপ্তর বিষয়টি নিয়ে সোমবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়েছে। তারা প্রাথমিক তদন্ত সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, কলেজ শিক্ষক ডঃ আভাজৎ নাথকে কনভেনর করে এ বছর রামঠাকুর কলেজে যে ভর্তি কমিটি গড়া হয়েছিল সেই কমিটি প্রত্যাশী সব ছাত্রকে ভর্তির সুযোগ দিতে পারেনি স্থানাভাবের কারণে। দেখা গেছে ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি নম্বর পাওয়া বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী অপেক্ষমাণ তালিকায় থেকে যায়। এই অবস্থাতেই ক্লাস শুরু হয়ে যায় গত এক জুলাই থেকে। ইদানীং কিছু ছাত্রছাত্রী নিয়মিত ক্লাসে গেলেও ক্লাসের রোলকলে তাদের নাম নেই নিশ্চিত হয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের জানান। শিক্ষকরা দেখতে পান এই ছাত্রছাত্রীদের হাতে ফি কার্ড রয়েছে, ভর্তির টাকা জমার ক্যাশ মেমোও রয়েছে কিন্তু কলেজ রেজিস্ট্রারে নাম নেই। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে মারাত্মক ঠেকে কর্তৃপক্ষের কাছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডঃ পাপড়ি সেনগুপ্ত জানতে পারেন, এই ধরনের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। যারা অভিযোগ জানাতে এসেছিল,
সেই ছাত্রছাত্রীদের ফি কার্ড পরীক্ষা করে দেখা হয়, ফি কার্ডের স্বাক্ষরের সিল জাল করা হয়েছে। অভিযোগকারী ছাত্ররা শিক্ষকদের জেরার মুখে জানায়, কলেজ কাউন্সিলের কোনো কোনো দাদার মাধ্যমে তারা ১৫/২০ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্রদের কাছ থেকে পাঁচশো টাকার মতো ফি নেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু ছাত্রীদের জন্য কোনো ফি লাগে না। কলেজের সব শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারীরা এই ধরনের অভাবনীয় ঘটনার রহস্য খুঁজতে মাঠে নেমে যান। স্বভাবতই তির ধীরে ধীরে ভর্তি কমিটির দিকে, বিশেষ করে কমিটির কনভেনরের দিকে স্থির হয়ে পড়ে।অধ্যক্ষ এবং সব শিক্ষকদের বৈঠকে বসে পরিস্থিতি অনুধাবন করতে অসুবিধা হচ্ছিল না ভর্তি কমিটির কনভেনর ডঃ অভিজিৎ নাথের। তিনি স্বীকার করেন, অফিস কক্ষ থেকে এক বান্ডিল (একশো খানা) ফি কার্ড তিনি ওপরের ঘরে নিয়ে রেখেছিলেন। অনেক সময় ফি কার্ডে ভুলভ্রান্তি হলে সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে, তাই তিনি নিয়েছিলেন। তিনি আরও স্বীকার করেন, পঞ্চাশটি ফি কার্ড এখনও পড়ে আছে। কিন্তু পঞ্চাশটি ফি কার্ড ফেরত দেওয়ার প্রশ্নে লেগে যায় গোলমাল।
শেষ অবধি অভিজিৎ স্যার লিখিতভাবে তার অন্যায় কাজ স্বীকার করে বলেন, ফি কার্ডগুলি তিনি বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটি একটি জঘন্য অন্যায় জেনেও একজন কনভেনর এই কাজটি করতে পারলেন- এ নিয়ে কলেজে অফিস রুমের পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই ছিলো ভিন্নরকম। শেষ অবধি অভিজিৎ বাবু বাড়ি থেকে ২৭টি ফি কার্ড অধ্যক্ষের হাতে ফেরত দিতে পেরেছেন। কলেজের এক দায়িত্ববান শিক্ষকের এই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পুরো রিপোর্টই সময় সময়ে উচ্চশিক্ষা অধিকর্তার দপ্তরে গিয়ে পৌঁছায়। এদিন কলেজের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির প্রধান কলেজ শিক্ষক শ্যামসুন্দর সরকারকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ঘটনাটি স্বীকার করেছেন। শ্যামসুন্দরবাবু জানান, সোমবার কলেজে বিষয়টি নিয়ে ফের বৈঠক হবে। উচ্চশিক্ষা দপ্তরকে সব জানানো হয়েছে। তারাও হস্তক্ষেপ করবেন।কী হবে না হবে সোমবারই জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, ২৭টি ফি কার্ড ফেরত দেওয়ার পর রামঠাকুর কলেজে যে ৭৩ জন ছাত্রছাত্রীকে টাকার বিনিময়ে, অনৈতিকভাবে ভর্তি করা হয়েছে তা স্পষ্ট হয়েছে প্রাথমিক তদন্তে। তদন্তে আরও জানা গেছে, কলেজ কাউন্সিলের এক বা দুজন ছাত্র প্রতিনিধির সঙ্গে যোগসাজশে ভর্তি কমিটির কনভেনর অভিজিৎ স্যার নিজের বাড়িতে বসে ফি কার্ডে জাল সই, সিল দিয়েছেন। এই ঘটনা রাজ্যের উচ্চশিক্ষাঙ্গনের ইতিহাসে প্রথম ঘটল।