September 17, 2025

স্মার্ট মিটার আতঙ্ক!!

 স্মার্ট মিটার আতঙ্ক!!

স্মার্ট মিটার আতঙ্কে ভুগছে গোটা রাজ্য। শুধু তাই নয়, ‘স্মার্ট মিটার’ কে ইস্যু করে রাজ্য রাজনীতিও এখন তোলপাড়। স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে সব বিরোধী দল একজোটে ময়দানে নেমে পড়েছে। এখানেই শেষ নয়, স্মার্ট মিটার ইস্যুতে গত ক’দিন ধরেই গোটা রাজ্যে প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করছে বিরোধী দলগুলি। বিরোধী দলগুলোর একটাই দাবি, কোনও অবস্থাতেই বিদ্যুৎ গ্রাহকদের স্মাট মিটারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। অর্থাৎ স্মার্ট মিটার বসানো যাবে না। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, স্মার্ট মিটারে বিদ্যুৎ বিল আগের তুলনায় বেশি আসছে। কোথাও কোথাও আবার স্মার্ট মিটারে বিল আসছে অস্বাভাবিক। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেই নয়, একাংশ বিদ্যুৎ গ্রাহকও স্মার্ট মিটারের বিপক্ষে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্মার্ট মিটারে অস্বাভাবিক বিলের তথ্যও উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে ‘স্মার্ট মিটার’ এখন খবরের শিরোনামে। এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, স্মার্ট মিটার কি প্রকৃত অর্থেই আতঙ্কের? আসলেই কি স্মার্ট মিটার বিদ্যুৎ ভোক্তাদের উপর বাড়তি আর্থিক চাপ বাড়াবে? নাকি পুরোটাই ভ্রান্ত ধারণা? বিভ্রান্তি থেকে বিদ্যুৎ ভোক্তাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে? বিরোধীরা যে অভিযোগ এবং দাবি তুলে রাজ্য রাজনীতির হাওয়াকে গরম করে তুলেছে, এর পিছনে কি সত্যিই কোনও যুক্তি বা সারবত্তা আছে? নাকি পুরোটাই রাজনীতি? নাকি স্মার্ট মিটার সম্পর্কে একটা বিভ্রান্তি তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা কিংবা ঘোলা জলে মাছ শিকার করার প্রয়াস?
যদিও রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর এবং রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম থেকে কয়েক দফায় স্মার্ট মিটার নিয়ে তৈরি হওয়া আতঙ্ক এবং বিভ্রান্তি দূর করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। নিগম থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট করেই জানানো হয়েছে যে, স্মার্ট মিটারে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। এমনকী বেশি বিদ্যুৎ বিল আসারও কোনও প্রশ্ন নেই। একজন গ্রাহক প্রতিদিন এবং প্রতিমাসে যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, ঠিক ততটাই তিনি বিল দেবেন। ইউনিট প্রতি অতিরিক্ত মাশুল আসার কোনও প্রশ্ন নেই। এই বিষয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী ও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে স্মার্ট মিটারের সুবিধা কী? গ্রাহকের কী লাভ হবে স্মার্ট মিটার বসানোর প্রয়োজনীয়তা কী? ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। মোদ্দাকথা,স্মার্ট মিটারকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া যাবতীয় প্রশ্ন ও বিভ্রান্তি দূর করার সর্বাত্মক প্রয়াস নিয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রী নিজেও। তার পরেও কি আতংক দূর হয়েছে? তার পরেও কি বিভ্রান্তি কেটেছে? আদৌ বিভ্রান্তি দূর হবে কি? এই প্রশ্ন এখন অনেকেরই মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তবে সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, স্মার্ট মিটার সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের দাবি, আধুনিক প্রযুক্তির এই সময়ে স্মার্ট মিটার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বলা যায়, সময়ের দাবি। এতে আতঙ্কিত বা বিভ্রান্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই। বরং বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার নিরূপণে স্মার্ট মিটার এখন অপরিহার্য। প্রতিদিন প্রযুক্তির উন্নয়ন যেভাবে ঘটছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবেই। এছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই। এতদিন যে ব্যবস্থা ছিল, তাতে বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার নিরূপণ করা যেতো না। কোনও না কোনও ভাবে গলদ থেকে যেতো।বিশেষ করে বিদ্যুৎ ব্যবহারে কারচুপি ঠেকানো সম্ভব ছিলো না। স্মার্ট মিটার সেক্ষেত্রে অনেকটাই নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন, তাহলে স্মার্ট মিটার নিয়ে এত হৈচৈ কেন হচ্ছে? বিদ্যুৎ ব্যবহারে এখন আর আগের মতো সরাসরি কারচুপি করা যাবে না বলে? উত্তরটা কম- বেশি সকলেই জানে। রাজনৈতিক দলের নেতা- নেত্রীরা আরও ভালো করে জানে। তারপরও হৈচৈ হচ্ছে। আগামীদিনে হয়তো আরও হবে। কেননা, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ। অথচ স্মার্ট মিটার কিন্তু দেশে বা রাজ্যে নতুন নয়। দেশের অধিকাংশ রাজ্যে আরও কয়েক বছর আগে থেকে স্মার্ট মিটারে বিলিং কার্যকরী হয়ে গেছে। এমনকী ত্রিপুরা রাজ্যেও গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এমনকি স্মার্ট মিটারে বিলিং চালু করা হয়েছে। গত জুন মাস পর্যন্ত রাজ্যে স্মার্ট মিটারের সংখ্যা প্রায় নবুই হাজারে পৌঁছেছে? তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, গত সাত মাসে স্মার্ট মিটারে বিলিং নিয়ে কোনও অভিযোগ শোনা যায়নি। কিন্তু জুলাই মাসে আচমকা স্মার্ট মিটার নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়। একই সাথে রাজ্য রাজনীতিও সরগরম হয়ে উঠে। তবে কিছু বিল যে অস্বাভাবিক হয়ে সামনে এসেছে, এটাও কিন্তু ঠিক। আর সেই অস্বাভাবিকতার কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এলো কারচুপির তথ্য। এখন দেখার স্মার্ট মিটার আতঙ্কের নিরসন কীভাবে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *