ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
চন্দ্রাহত!

অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল টিডিপি সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারকলিপি জমা দিয়েছে,যায় কেন্দ্রে রয়েছে বিহারে ভোটার তালিকার পরিমার্জন, বিশদে বললে, ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ। চন্দ্রবাবুর দল তেলুগু দেশম পার্টি নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়ে অনুরোধ করেছে, নাগরিকত্ব যাচাই নয়, বিশেষ ভোটার তালিকা পরিমার্জনের সময় কেবল তালিকা সংশোধন ও নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি করা হোক। পাশাপাশি, বিভিন্ন মরশুমে ভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম যাতে ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যায়, তা-ও কমিশনকে নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছে টিডিপি। মোদ্দা কথায় বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের ছদ্মবেশে যেভাবে নাগরিকত্ব যাচাই করছে কমিশন, তা নিয়ে কার্যত বিরোধী দলগুলির সুরেই আপত্তি জানিয়েছে এনডিএ-র বড় শরিক দল।
টিডিপির এ-হেন আচরণকে নিছক প্রশাসনিক অনুরোধ ভাবাটা মূর্খামি হবে। চন্দ্রবাবুর এই পদক্ষেপের অন্তরালে রয়েছে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা, এবং তা যে বিজেপির দিকেই লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়েছে তা অনুধাবন করতে খুব বেশি রাজনৈতিক কুশলী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। টিডিপির অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে, নাগরিকত্ব যাচাইয়ের আড়ালে নির্বাচন কমিশনের সিলেক্টিভ স্কুটিনি।স্মারকলিপিতে টিডিপি স্পষ্টত জানিয়েছে, ভোটার তালিকা সংস্কার নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলেও নাগরিকত্ব যাচাই তাদের আওতায় পড়ে না। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তথা এনআরসি এবং সংশোধিত নাগরিত্ব আইন তথা সিএএ ঘিরে বিগত কয়েক বছরে যেভাবে ভারতের সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, ঠিক সেই প্রসঙ্গেই টিডিপি তাদের স্মারকটি কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে টিডিপি কেন হঠাৎ বিহারের মতো একটি রাজ্যে ভোটার তালিকা সংস্কার নিয়ে এতটা সরব? সন্দেহ নেই, এই পদক্ষেপের পিছনে রয়েছে চন্দ্রবাবু নায়ডুর নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি।বিহার এবং অন্যান্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে যেভাবে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের মোড়কে দলিত, মুসলিম এবং অভিবাসী ভোটারদের বাইরে রাখার অভিযোগ উঠেছে, তা নায়ডুর কাছেও সতর্কবার্তা। ২০১৯ সালের পর থেকে বিজেপির একাধিপত্য কায়েমের ধরনে চন্দ্রবাবু বারবার বলেছেন, এই একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতা ভারতের সংবিধান ও বহুত্ববাদী চরিত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। তাই নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় বৈষম্যমূলক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি হয়তো দিল্লীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন, তারা মোদি সরকারের শরিক হতে পারেন, কিন্তু সঙ্গী নন; নিয়ন্ত্রণের পুতুল তো নয়-ই!
এই অবস্থান নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় বিজেপির অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কারণ চন্দ্রবাবু নায়ডু, যিনি একসময়ে এনডিএ-র স্তম্ভ ছিলেন এবং পরবর্তীতে জোট ছাড়ার সাহস দেখিয়েছেন, বর্তমানে আবারও বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটে শামিল হলেও আত্মসমর্পণ করেননি। বরং তিনি এক রাজনৈতিক পরিপক্কতার পরিচয় দিতে চেয়েছেন। বার্তা দিতে চেয়েছেন, সুবিধাবাদ নয়, সমতা ও ন্যায়ের প্রশ্নে তিনি আপসহীন থাকতে চান। এই প্রেক্ষিতে টিডিপির স্মারকলিপি আদতে দ্ব্যর্থহীন এক কৌশলগত হুঁশিয়ারি। সেটি হলো, এনডিএ জোটের অন্তর্গত হলেও তারা চোখ-কান বন্ধ করে সব মেনে নেওয়ার জন্য বসে নেই। সম্ভবত নীতীশ কুমারকেও প্রচ্ছন্নে বার্তা দিতে চেয়েছেন চন্দ্রবাবু। তার দলের অবস্থান; গণতন্ত্রে বিশ্বাস, সাংবিধানিক সীমারেখা ও নির্বাচনি নিরপেক্ষতা অক্ষুন্ন রাখা। স্মারকলিপি তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে যেমন আবেদন, তেমনই বিজেপির কাছে বার্তা: আমরা জোটে আছি বটে, কিন্তু চোখ বন্ধ করে নয়।
এই পদক্ষেপের রাজনৈতিক অভিঘাত জাতীয় স্তরে যথেষ্ট গভীর। কারণ, যদি চন্দ্রবাবু এই ধারায় অন্য আঞ্চলিক দলগুলিকেও অনুপ্রাণিত করতে পারেন, তবে এনডিএর অভ্যন্তরেও গণতান্ত্রিক সংলাপ ও প্রশ্ন তোলার সংস্কৃতি ফিরে আসতে পারে। একটি সুস্থ জোটে এমন অন্তনির্হিত পর্যালোচনা থাকা প্রয়োজন, যেখানে প্রশ্ন উঠে, যুক্তি চলে, সমঝোতা তৈরি হয়। অন্যথায়, তা হয়ে দাঁড়ায় নিছক একটি ক্ষমতালোভী আঁতাঁত,যা গণতন্ত্রের পক্ষে কোনও শুভ বার্তা বয়ে আনে না।
এই মুহূর্তে চন্দ্রবাবু নায়ডু হয়তো জোট ছাড়বেন না। কারণতার দলের সামনে আশু প্রয়োজন তিনটি- উন্নয়ন, কেন্দ্রীয় সাহায্য, ও জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা। তবে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি এনডিএ-র শরিক, সমর্থক নন। চন্দ্রবাবুর এই অবস্থান তাই কেবল রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং এক ধরনের মৌলিক অবস্থানও বটে; যেখানে সরকারে থেকেও প্রশ্ন তোলা যায়, শরিক হয়েও মতপার্থক্য রাখা যায় এবং সবচেয়ে বড় কথা, গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করা যায়।
ভবিষ্যতের রাজনীতি এ বার্তাকে কতটা ধারণ করে,সেটা এখন দেখার।