ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিরোধীরা: রতন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে বিদ্যুৎ বিলের বৃদ্ধি ও স্মার্ট মিটার নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। চলছে অপপ্রচার এবং প্রকৃত সত্যি আড়াল ‘করার উদ্যোগ। এই মন্তব্য করেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ। সোমবার, ১৪ জুলাই শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ কার্যালয়ে আহূত সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখিত মন্তব্য করেন তিনি। মন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, রাজ্যে গত এপ্রিল মাস থেকে বিদ্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে প্রায় ১১ শতাংশ হারে। প্রতি ইউনিট পিছু ৭৭ পয়সা করে মাশুল বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর সেটা করা হয়েছে নিয়ম মেনে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক। তিনি জানান, রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে গত প্রায় সাত বছরে বিদ্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি পেয়েছে মোট প্রায় ২৫ শতাংশ।
এই প্রসঙ্গে শ্রীনাথ তুলনা টানেন পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে।বলেন, সিপিএম নেতৃত্বাধীন বাম সরকারের শেষ সাত বছরে বিদ্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০০ শতাংশ। তিনি পুরনো বিভিন্ন পত্রিকা হাতে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ সংক্রান্ত নানা তথ্য তুলে ধরেন। জানান, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাম আমলে রাজ্যে বিদ্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি পেয়েছে এক লপ্তে ৬২ শতাংশ হারে। সেই সময় ইউনিটপিছু মাশুল বৃদ্ধি করা হয়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা
করে। তখন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি সহ আনুষঙ্গিক নানা ধরনের খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের তরফে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কমিশনের কাছে ইউনিটপিছু ২ টাকা ৯ পয়সা করে মাশুল বৃদ্ধির আবেদন করা হয়। কমিশন সেই অনুমতি দেয়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালে মাশুল বৃদ্ধি করা হয় ইউনিটপিছু ১ টাকা ৪০ পয়সা হিসাবে ৬২ শতাংশ হারে। তারপর ২০১৩ সালে প্রায় ৪০ শতাংশ হারে ইউনিটপিছু মাশুল বৃদ্ধি করা হয় ১ টাকা ৪৬ পয়সা করে। সেটা আদায় করা হয়েছে বকেয়া হিসাবে কয়েক ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধি সহ এর ক্রয়মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপুরা বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কমিশন ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমকে ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিতে বলে। জানায় যথা সময়ে এই উদ্যোগ নেওয়া না হলে পরে তার সুযোগ দেওয়া হবে না। শেষ পর্যন্ত কমিশনের নির্দেশ এবং অনুমোদন মোতাবেক রাজ্যে প্রায় ১১ শতাংশ হারে ইউনিটপিছু মাশুল বৃদ্ধি করা হয়েছে ৭৭পয়সা করে। মন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান পয়লা এপ্রিল থেকে বকেয়া হিসাব করে এই বর্ধিত বিদ্যুৎ বিল আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সেই হিসাবে জুন মাসের বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে আগের দুই মাস এপ্রিল ও জুনের বর্ধিত বিল আদায় করা হয়েছে অথবা হচ্ছে চলতি জুলাই মাসে। জুন মাসের বিলের সঙ্গে এক মাসের বর্ধিত বিল ফুয়েল চার্জ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এক মাসের বর্ধিত বিল দেখানো হয়েছে বকেয়া তথা সান্ড্রি হিসাবে। মন্ত্রী জানান আগষ্ট মাসে জুলাই মাসের বিল করার সময় বকেয়া তথা সান্ড্রি একত্রে না নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে ছয়টি কিস্তিতে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে বিদ্যুৎ নিগমকে। তাতে ভোক্তাদের কাঁধে একসঙ্গে অতিরিক্ত বোঝা চাপবে না বলে আশা করেন তিনি। বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, বিদ্যুৎ ক্রয় থেকে শুরু করে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা পর্যন্ত প্রতি ইউনিটপিছু খরচ পড়ে ১০ টাকা ৬৭ পয়সা। গড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ তথা বিক্রি বাবদ আদায় করা হয় ইউনিটপিছু ৭ টাকা ৬৬ পয়সা। সেই হিসাবে ক্রয় এবং বিক্রয়মূল্যের মধ্যে ফারাক থেকে যায় ২ টাকা ৮২ পয়সা। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে ৭৭ পয়সা করে ইউনিটপিছু মাশুল বৃদ্ধির পরও এই ফারাক থেকে গেছে ২ টাকা ৫ পয়সা প্রতি ইউনিট। মন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার গ্রাহকপিছু ৮৬ টাকা করে ভর্তুকি দেয়। এভাবে ঘাটতি মেটানো হয়। তিনি বলেন, আগে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা বিল দিতে হতো এমন ভোক্তার বিলের সঙ্গে ১২৩ টাকা বাড়তি যোগ হবে অথবা হয়েছে। তার সঙ্গে অতিরিক্ত এক মাসের বর্ধিত বিল যুক্ত হবে সমপরিমাণে। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কমিশনের তরফে মাশুল বৃদ্ধির আগে করা শুনানির সময় প্রায় কোনো আপত্তি জানানো হয়নি। শুনানিতে ৪২ লাখ রাজ্যবাসীর মধ্যে মাত্র দুজন অংশ নিয়েছেন। স্মার্ট মিটার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০০৩ সালের ভারতীয় বিদ্যুৎ আইনের ৫৫ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারা এর সংস্থান রয়েছে। এই আইনের ভিত্তিতে ভারতীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ স্মার্ট মিটার বসানোর নির্দেশ দিয়েছে দেশের সব কয়টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে। বলা হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবহারের আগে বিল প্রদান তথা প্রিপেইডের সুবিধাযুক্ত স্মার্ট মিটার বসানোর জন্য। ইতিমধ্যে পণ্ডিচেরির মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং মেঘালয়ের মতো কয়েকটি রাজ্য ছাড়া দেশের প্রায় সর্বত্র স্মার্ট মিটার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে আসাম, পাঞ্জাব, কেরালা, তামিলনাড়ু। ত্রিপুরা রাজ্যেও ইতিমধ্যে ৯৪ হাজারের বেশি স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। আগরতলা শহরের সিংহভাগ এলাকায় স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে। তার বক্তব্য, এর ফলে বৈধ ভোক্তাদের সুবিধা হবে। তিনি বলেন, প্রয়োজনে কোনো ভোক্তা স্মার্ট মিটারের পাশাপাশি প্রচলিত ডিজিটাল মিটার রেখে দিতে পারেন। তাতে তাদের স্মার্ট মিটার নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান হবে। স্মার্ট মিটার শুধু মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট ইত্যাদিতে নয়, বসানো হয়েছে এবং হচ্ছে বিদ্যুৎ ফিডার, ট্রান্সফরমারে। এক্ষেত্রে কেউ যদি স্মার্ট মিটারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ দিতে পারেন দায় তিনি নেবেন বলে জানান মন্ত্রী শ্রীনাথ। তিনি আরও জানান স্মার্ট মিটার বসানোর পর সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের সুযোগ নিলে পাঁচ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। কেননা, সেক্ষেত্রে স্মার্ট মিটার বসানোবাবদ খরচ বেঁচে যাবে। রতনলাল নাথ আরও জানান ধাপে ধাপে আগরতলা, খুমুলুঙ সহ উদয়পুর এবং ধর্মনগরে যাবতীয় উচ্চ পরিবাহী তার মাটির নিচে দিয়ে নেওয়া হবে। এই কাজ শুরু হবে আসন্ন অক্টোবর মাসে। এর জন্য দরপত্র ডাকার কাজ শেষ হয়ে গেছে।