ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে ৫১ শক্তিপীঠ পার্কের শিলান্যাস,বনদুয়ারে গড়ে উঠবে বিশ্বখ্যাত আধ্যাত্মিক দর্শন কেন্দ্র: মুখ্যমন্ত্রী!!


অনলাইন প্রতিনিধি :-পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে উদয়পুরের বনদুয়ারে গড়ে উঠবে বিশ্বখ্যাত আধ্যাত্মিক পর্যটন কেন্দ্র ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক। সারা দেশের পাশাপাশি গোটা বিশ্ব থেকে পর্যটক ও ভক্তপ্রাণ মানুষ ৫১ শক্তিপীঠ পার্কের আকর্ষণে ত্রিপুরা ভ্রমণে আসবেন। ৫১ শক্তিপীঠ পার্ককে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হবে মানুষের রোজগারের নতুন রাস্তা। বাড়বে পর্যটন দপ্তরের পরিধি, রাজস্ব আদায়। লাভবান হবেন সাধারণ মানুষ, পরিবহণ শিল্পে যুক্ত মানুষ থেকে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা।
রবিবার উদয়পুরের বনদুয়ারে ৫১ শক্তিপীঠ পার্কের শিলান্যাস করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। এ উপলক্ষে ভূমিপূজনেরও আয়োজন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পৌরাণিক মতে দক্ষকন্যা ও শিব-জায়া মা সতীর খণ্ডিত দেহাবশেষ পড়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশের একান্নটি স্থানে। এই স্থানগুলিতে গড়ে উঠেছে একান্নটি পবিত্র শক্তিপীঠ।বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম মা ত্রিপুরাসুন্দরীর আশীর্বাদধন্য মাতাবাড়ির বনদুয়ারে গড়ে উঠবে ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক।এই পার্কে থাকবে একান্নটি শক্তিপীঠের প্রতিরূপ।ত্রিপুরা
সরকারের পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে নির্মাণ করা হবে এই ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক। এজন্য ব্যয় হবে প্রায় ৯৭.৭০ কোটি টাকা।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকনির্দেশনায় বনদুয়ারে ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একজন মানুষের পক্ষে পুরো জীবনে সতীর একান্নটি শক্তিপীঠ দর্শন করা সম্ভব নয়। কিন্তু উদয়পুর বনদুয়ারে এলে তা সম্ভব হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে রাজ্য সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। পর্যটন শিল্পের প্রসার ও বিকাশে রাজ্যের আর্থসামাজিক মান উন্নয়নে গতি আসবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বৈদেশিক মুদ্রার আগমনও বৃদ্ধি পাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পরিবহণ। ফলে পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদেরও আর্থসামাজিক মানোন্নয়ন ঘটবে। রাজ্যে উৎপাদিত হস্ত ও কারু শিল্প সামগ্রীর বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই পার্ক রাজ্যের জাতি-জনজাতি গোষ্ঠীর শিল্প, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, একদিন ৫১ শক্তিপীঠ পার্কের জন্য বনদুয়ারের নাম সারা দেশের সঙ্গে বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়বে। বনদুয়ার হয়ে উঠবে মহামিলন ক্ষেত্র। এই পার্কে স্থাপিত হবে ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় নটরাজ মূর্তি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটন দপ্তরের এই অনন্য প্রকল্প রাজ্যের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পর্যটনে যুক্ত করবে নতুন দিগন্ত। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর এক্ট ইস্ট নীতির কারণে ত্রিপুরাতে হিরা মডেল তৈরি হচ্ছে। জাতীয় সড়ক, ইন্টারনেট, রেলওয়ে, ইত্যাদির কারণে রাজ্যের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ২০২৫ সালের জানুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৬৭৪ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর ও উদ্বোধন হয়েছে। এটা সহ ৭০০ কোটি টাকা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ইকো টুরিজম, ধর্মীয় পর্যটন, প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন, অ্যাডভেঞ্চার টুরিজম ইত্যাদির ক্ষেত্রে সরকার অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। মাতাবাড়ির সন্নিকটে একান্ন শক্তিপীঠ নির্মাণ হলে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা বাড়বে না, আঞ্চলিক উন্নয়ন হবে। এখানে রাজ্যের উনিশটি জনজাতি গোষ্ঠীর শিল্প সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে। পর্যটনকে সামনে রেখে আর্থ-সামাজিক উন্নতি ঘটবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। টুর অপারেটরদের কাজের সুযোগ বাড়বে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে বক্সনগর ও ঊনকোটিতে আরও উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। নারিকেল কুঞ্জ ও ছবিমুড়াতে স্বদেশ দর্শন প্রকল্পে আরও একান্নটি লগ হাট করা হবে।
অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাতাবাড়ি থেকে বনদুয়ার একান্ন শক্তিপীঠ এলাকা পর্যন্ত একটি রোপওয়ে তৈরি করা যায় কি না তার প্রস্তাব পেশ করেন। একই সঙ্গে বনদুয়ার এলাকার নাম পরিবর্তন করে স্বর্গদুয়ার করা যায় কি না সে বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করার দাবি জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেওয়ার জন্য আজকের দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন।এই ঐতিহাসিক দিনে পর্যটনমন্ত্রী রাজ্যবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর দেশবাসী, বিশেষ করে বিশ্বের দরবারে রাজের নামকে উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে পর্যটন দপ্তরের পক্ষ থেকে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।অন্যান্য প্রকল্পের মতো এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। পর্যটনের মানচিত্রে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই অভিনব উদ্যোগ। মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, তিনি পর্যটন দপ্তরের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। কেন্দ্রীয় সরকারও অর্থ বরাদ্দ করে। এতে এই বনদুয়ারে গড়ে উঠবে একান্ন শক্তিপীঠ পার্ক। শুধু তাই নয়, এর কাজ সম্পন্ন হলে প্রতিদিন পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সবুজ পাহাড়ে গড়ে উঠবে এই একান্ন শক্তিপীঠ পার্ক। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে স্কাই সেতু। কাচের সেতুর এই মনোরম দৃশ্য দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে উঠবে। দেশ বিদেশের বহু পর্যটক এই পীঠস্থানকে কেন্দ্র করে আসতে শুরু করবে।
এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে উন্নতমানের ক্যাফেটরিয়া, লগ হাট, বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের নটরাজ মূর্তি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য থাকবে মুক্ত মঞ্চ, থাকবে প্রশাসনিক ভবন। ১৪.২২ একর অর্থাৎ প্রায় ৩৫ কানি জমিতে গড়ে উঠবে একান্ন শক্তিপীঠ। সবুজ পাহাড়ের গায়ে একান্ন শক্তিপীঠ, ডিজিটাল বোর্ড, কাচের সেতু সহ নানা আকর্ষণ ও চিত্তাকর্ষক প্রকৃতির কোলে তুলে ধরা হবে। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা পর্যটনের একটি নতুন লোগোর আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোমতী জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবল দেবরায়, তিন বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, জিতেন্দ্র মজুমদার, অভিষেক দেবরায়, মাতাবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান শিল্পী দাস প্রমুখ।