ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
স্মার্ট মিটারের পক্ষে সওয়াল নিগমের, ফাঁদে বিদ্যুৎ ভোক্তারা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- স্মার্ট মিটার বসানো সময়ের দাবি।এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। বিশেষত বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক স্বার্থে রাজ্যের ভোক্তাদের স্মার্ট মিটার বসানোর কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এই কাজে সহযোগিতা করতে হবে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমকে। প্রযুক্তির উন্নয়নের যুগে স্মার্ট মিটারের প্রাসঙ্গিকতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সবচেয়ে বড় কথা স্মার্ট মিটার তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে অনবদ্য। এর মাধ্যমে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদেরও সুবিধা হবে। স্মার্ট মিটার সবদিক থেকে পরীক্ষিত এবং সুবিধাজনক। এর থেকে কোনো ধরনের আশঙ্কার কারণ নেই। এই মন্তব্য করেন ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের ব্যবস্থাপক অধিকর্তা তথা এমডি বিশ্বজিৎ বসু। শুক্রবার, ১১ জুলাই রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের তরফে আহূত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি দাবি করেন যে, রাজ্য বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর উন্নয়নে নিগম নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
বকেয়া বিল আদায়ের ক্ষেত্রেও হয়েছে তৎপর। তাতে মিলেছে কাঙিক্ষত সাফল্য।শুক্রবার দুপুরে আগরতলার ভূতুড়িয়াস্থিত রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের প্রধান কার্যালয় তথা কর্পোরেট হাউসে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনের আগে স্মার্ট মিটারের নির্ভরযোগ্যতার উপর আলোকপাত করেন শ্রীবসু।প্রজেক্টারের মাধ্যমে এর নানা সুবিধার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান ডিজিটাল মিটারের সঙ্গে স্মার্ট মিটারের মিল রয়েছে সবদিক থেকে। ডিজিটাল মিটারের চেয়ে স্মার্ট মিটারে বাড়তি সুবিধা রয়েছে তথ্য আদানপ্রদানের ব্যবস্থা। এর ফলে নির্দিষ্ট এলাকায় দিনের নির্দিষ্ট সময় কতটুকু বিদ্যুতের
প্রয়োজন তার হিসাব করা সহজ হবে নিগমের পক্ষে। আবার ভোক্তাদের পক্ষেও কখন বিদ্যুৎ ব্যবহার বেশি হচ্ছে তা বোঝা যাবে। উপরন্তু মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসে অথবা ঘর থেকে বের হওয়ার পরও বিদ্যুৎ নির্ভর কোনো সামগ্রীর অকারণে ব্যবহার চলছে কি না জানা যাবে। প্রয়োজনে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। বর্তমানে প্রচলতি ডিজিটাল মিটারে এই সুবিধা নেই। তাছাড়া বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ এবং প্রদানের ক্ষেত্রে মিলবে সুবিধা। কোনো ধরনের ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। বর্তমান ব্যবস্থায় মানুষের মধ্যেমে বিল করার সংস্থান থাকায় ভুলের আশঙ্কা থাকে। স্মার্ট মিটারে এমন আশঙ্কার সুযোগ নেই বলে বিশ্বজিৎ বসু দাবি করেন। তার বক্তব্য এই মিটার সর্বাধিক ১ শতাংশ পর্যন্ত ভুল করতে পারে। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই কেনা হয়েছে স্মার্ট মিটার।

তার বক্তব্য ভারত সরকারের একটি প্রকল্প সহ এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে স্মার্ট মিটার কেনার কাজ শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের মোট ৬ লাখ ভোক্তার বাড়ি, দোকান, কারখানা ইত্যাদিতে এই মিটার লাগানো হবে। আগরতলা শহরের মূল অংশ হিসাবে পরিচিত এলাকা নিয়ে গঠিত রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের ১ নম্বর বিভাগের আওতাধীন ৮০ শতাংশ ভোক্তা স্মার্ট মিটার ব্যবহার শুরু করেছেন। এই মিটারে ভোক্তারা তার চাহিদা মতো আগে, মানে প্রি পেইড ব্যবস্থায় বিল প্রদান করা যাবে। আবার ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পর, মানে পোস্ট পেইড প্রথায় বিল প্রদান করা যাবে। বিশ্বজিৎ বসু জানান, তার উত্তর জেলার ধর্মনগরস্থিত বাড়িতেও স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে। তারপর থেকে বিল আসছে আগের মিটার থাকার সময়ের মতো। উপরতি হিসাবে মিলেছে বাড়তি কিছু সুবিধা।
তিনি জানান, রাজ্যে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৪৫০ কোটি টাকার মতো। বাংলাদেশের কাছ থেকে বকেয়া হিসাবে পাওনা রয়েছে মাত্র ১২ কোটি টাকা। আর সেটাও রয়েছে দেরিতে বিল প্রদান বাবদ। আগরতলার রবীন্দ্র ভবন, মুক্তধারা সহ বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ এবং সভাগৃহের পাশাপাশি ধর্মনগর সহ অন্যান্য পুর পরিষদ, নগর পঞ্চায়েতের কাছ থেকেও আশানুরূপভাবে সাফল্য মিলেছে বকেয়া বিল আদায়ে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সহ টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধির কারণে ত্রিপুরা বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সম্মতির ভিত্তিতে রাজ্যে বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে বলে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান তিনি। তার দাবি রাজ্য নিগম গড়ে প্রতি ইউনিট ৭ টাকা ৩৭ পয়সা দরে বিদ্যুৎ ক্রয় করে ভোক্তাদের সরবরাহ করছে গড়ে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা মূল্যে। একই দিনে স্মার্ট মিটার বসানোর বিরোধিতা করেছে ত্রিপুরা ইলেক্ট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন। রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের কিছু সময় আগে অ্যাসোর তরফে সাংবাদিক সম্মেলনের আহ্বান করা হয়। ত্রিপুরা রবীন্দ্র পরিষদ গৃহে আহুত সাংবাদিক সম্মেলনে অ্যাসোর আহ্বায়ক সঞ্জয় চৌধুরী সহ প্রবীণ সদস্য মিলন চক্রবর্তী, মলিন দেববর্মা প্রমুখ জানান স্মার্ট মিটার বসানোর অর্থ ভোক্তাদের নিজেদের জন্য ফাঁদ তৈরি করা। আর এটা কোনো বাধ্যতামূলক বিষয় নয়। কারণ এ নিয়ে কোনো ধরনের আইন নেই। ভারতীয় বিদ্যুৎ আইন-২০০৩-এর ৫৫ নম্বর ধারা অনুসারে এ বিষয়ে সুরক্ষা কবচ রয়েছে ভোক্তাদের। আসলে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের তরফে স্মার্ট মিটার বসানোর মাধ্যমে সরকার অধিগৃহীত সংস্থাকে পুরোপুরি বেসরকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। ত্রিপুরা ইলেক্ট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এর বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীকে আন্দোলনমুখী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে স্মার্ট না বসানো এবং প্রত্যাখ্যান করার জন্য আবেদনপত্র পূরণ করতে। এদিকে, স্মার্ট মিটার বসানোর বিরোধিতা করা হয়েছে বিরোধী সিপিএমের তরফে। এ মর্মে শুক্রবার সকালে দলের সদর সাংগঠনিক মহকুমার উদ্যোগে ঘেরাও করা হয়েছে বিদ্যুৎ ভবন। স্মারকপত্র প্রদান করা হয়েছে নিগমের ব্যবস্থাপক অধিকর্তার কাছে। পাঁচ দফা স্মারকপত্রে বর্ধিত বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহারেরও দাবি করা হয়েছে।