ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
হুমকির মুখে ইজরায়েল!!

যুদ্ধ করে এক অভাবনীয় অর্থনৈতিক হুমকির মুখে পড়েছে।ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধমকে ইজরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।এরপর কিন্তু ইরান-ইজরায়েলকে নিয়ে আর কোনও বৈঠক বা কথোপকথনের দিকে যাননি ট্রাম্প। হয়তো সম্ভবও না।কারণ ইরান কোনও শর্ত মানতে রাজি নয়।শর্ত চাপাতে গেলে উল্টো ফলাফল হতে পারে এই আশঙ্কা ট্রাম্পেরও রয়েছে।অন্যদিকে নেতানিয়াহু এই সময়ে যে পরিস্থিতির সম্মুখীন তাতে তার পক্ষে নতুন করে ইরানের আকাশে ড্রোন বা বিমান পাঠানোর অর্থ দাঁড়াবে আত্মহত্যার দিকে পা বাড়ানো।দীর্ঘদিন ধরে অবরোধের মোকাবিলা করতে গিয়ে ইরানের এক নিজস্ব সহনক্ষমতা তৈরি হয়ে গেছে,যা ইজরায়েলের নেই।তার পর সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইরান তার হামলাগুলি রকম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চালিয়েছিল তা দিনে দিনে বোঝা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ইরানের হামলাগুলির লক্ষ্যই ছিল ইজরায়েলের আর্থিক কাঠামোগুলি অচল করে দেওয়া। ইজরায়েল লক্ষ্য বানিয়েছিল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক ক্ষেত্রগুলিকে, অন্যদিকে ইরানের লক্ষ্য ছিল ইজরায়েলকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া।
ইরানের কৌশলগত হামলায় হাইফা বন্দর আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছিল বারবার।আক্রমণগুলিকে প্রতিশোধমূলক মনে হলেও উদ্দেশ্য ছিল বহুমাত্রিক।তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতি করাটাই লক্ষ্য নয়, ইজরায়েলের যুদ্ধ অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে লজিস্টিক কাঠামোকে অস্থিতিশীল করে দেওয়া হয়েছে, তা আজ জানা যাচ্ছে।ইরানকে বিভিন্ন সময়ে আবাসিক এলাকাতেও বোঝা ফেলতে দেখা যায়।এরকমই একটি বোমায় উড়ে গেছে ইজরায়েলের এক আমলার বাড়ি।উনি দানি নাভেহ। ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ফর ইজরায়েল (ইজরায়েলি বন্ড)-এর প্রধান তিনি।তার বাড়ির ওপর হামলা যে কাকতালীয় ছিল না আজ সবাই তা বুঝতে পারছেন।দানি নাভেহ দেশের একজন অন্যতম বন্ড বিক্রির ব্যবস্থাপক।২০২৩ সাল থেকে তাঁরই নেতৃত্বে প্রবাসী ইহুদি এবং ইহুদিদের নানা প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের অধিক মূল্যের বিনিয়োগ দেশে এনেছেন দানি নাভেহ।এর মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অর্থ এসেছে কেবল আমেরিকা থেকে,সেই দেশের বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে।
এই বন্ডগুলি এতোদিন যুদ্ধবাজ ইজরায়েলকে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সহায়তা দিয়ে গেছে।বলা যায় যুদ্ধরত ইজরায়েলের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তার বাড়িতে বোমা ছুড়ে ইরান ইজরায়েলের ঋণ সংগ্রহের ব্যবস্থাপনার উপর তীব্র আঘাত করেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থার উপর হামলে পড়েছে ইরানের এই বোমা। বিশ্ববাজারের উদ্দেশে এই বোমা বার্তা দিয়েছে ইজরায়েলের কোনও অর্থনৈতিক বা আর্থিক কেন্দ্রই এখন আর নিরাপদ নয়। পাশাপাশি তেহরান বারবার হামলা চালিয়েছে হাইফা বন্দরে। সেই বন্দরে থাকা তেল শোধনাগারগুলিতে। জ্বালানি পরিশোধনাগারগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি সাইবার হামলাও চালায় ইরান। এতে ইজরায়েলের অসামরিক ও শিল্পক্ষেত্রে জ্বালানি সরবরাহও ব্যাহত হয়ে পড়ে। যুদ্ধের সেই ধাক্কা থেকে পক্ষকাল পরেও নড়েচড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ইজরায়েল। জ্বালানি উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খল সবই লণ্ডভণ্ড হয়ে থাকায় যত দিন যাচ্ছে চাপে পড়ছে ইজরায়েল। এই চাপ ঘরের ভেতরের।
একদিনে গাজায় যুদ্ধের ব্যয় বহন যেমন আজ ইজরায়েলের জন্য বাড়তি চাপ হিসাবে সামনে এসেছে, তার চেয়েও অধিক চাপ বিশ্ববাজারের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। তার অর্থনীতির উপর বিশাল চাপ ছিল গত ২০ জুন বিশ্বের সর্ববৃহৎ কন্টেইনার শিপিং কোম্পানি মের্কস-এর বয়কট। তারা সিদ্ধান্ত নেয় তাদের কোনও কন্টেইনার আর হাইফা বন্দরে ভিড়বে না। এই হাইফা বন্দর হলো ভূমধ্যসাগরে প্রবেশের ক্ষেত্রে ইজরায়েলের গেটওয়ে। শিল্প যন্ত্রপাতি, ওষুধপত্র, কৌশলগত সামগ্রী-সবই আমদানি হয় এই পথে। সমুদ্র বন্দর হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো দেশের অর্থনীতি এক স্পর্শকাতর জায়গায় চলে আসা। মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে একদিকে মজুতে ঘাটতি দেখা দেবে, বেড়ে যাবে আমদানির খরচ। ইরানের হামলার ঝুঁকির মুখে জাহাজ না ভিড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থাটি। কোনও আনুষ্ঠানিক নৌ অবরোধ ঘোষণা নয়, তারপরও অবরুদ্ধ থাকতে হয় ইজরায়েলকে। এক বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হতে হয় দেশটিকে। এই অবরোধে ইজরায়েলকে যে ক্ষতির সম্মুখীন স হতে হয়েছিল তা লোহিত সাগরে হুতিদের অবরোধ ঘোষণার চাইতেও অধিক ছিল। কারণ বাব-আল মান্দাব কেবল জাহাজের গতিপথ বদলে দিয়েছিল আর মের্কসের জাহাজা হাইফা বন্দরে আসাই বন্ধ করে দেয়।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর মের্কসের তাদের সিদ্ধান্ত বদল করে। ধীরে ধীরে তাদের জাহাজগুলি হাইফা বন্দরে ভিড়তে শুরু করেছে। তথাপিও সংঘাত কালে ইজরায়েল যে ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে তার থেকে বেরিয়ে আসা তাদের জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে। আর এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে ইরান তার দীর্ঘদিনের অবরোধকালে তৈরি করে নেওয়া অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা আর সহনশীলতায় অনেকখানিই স্বাভাবিক। যুদ্ধে ইরান তাদের কৌশলগত ব্যয় করেছে বটে, তবে ক্ষেপণাস্ত্র খাতে সেই ব্যয় দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি নয়। মুদ্রাবাজারে নিয়ন্ত্রণ ি তাদের ধাতস্থ। অপ্রচলিত বাজারে তেল বিক্রির কূটনীতি ইরানের চাইতে বেশি আজকের দিনে কেউ জানে না। ফলে দেশটির সক্ষমতা অনেক বেশি। তুলনায় ইজরায়েল আজ যে অভাবিত ধাক্কার সম্মুখীন, সেটি দ্রুত মোকাবিলা করতে না পারলে দেশটি অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে বাধ্য। এই রকম পরিস্থিতিতে ইজরায়েল ফের ইরানের উপর হামলা চালাবে- এমন আশঙ্কা অমূলকই। যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্প আলোচনায় আর আসুন বা না আসুন