August 2, 2025

বিহার: নজরে কমিশন!!

 বিহার: নজরে কমিশন!!

বিহারে ভোটার তালিকায় বিশেষ ভোটার তালিকা পরিমার্জন অর্থাৎ স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিহারে চলতি বছরই বিধানসভা ভোট হবার কথা। এর আগে হঠাৎ করে নির্বাচন কমিশন এই এসআইআর করার কেন সিদ্ধান্ত নিলো? এতে কী উদ্দেশ্য রয়েছে? এতে কোনো রাজনৈতিক দলের ফায়দা বা কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই তো? বিষয়টি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও একের পর এক পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। আগামীকাল, দশ জুলাই এর শুনানি হবার কথা রয়েছে।
এর উপর আবার ফের বিতর্ক উস্কে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের একটি বিজ্ঞপ্তি। নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে যে, জনগণের কাছে উপযুক্ত প্রমাণপত্র না থাকলে বিএলও-কে বলা হয়েছে শুধু এনুমারেশন ফর্ম জমা করাতে। এরপরই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইলেক্টরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ইআরও। ইআরও সন্তুষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় থাকবে, আর ইআরও যদি সন্তুষ্ট না হন তাহলে সংশ্লিষ্ট ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় থাকবে না।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য দাবি করছে যে, ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা আনতেই এবং অবৈধ ভোটারদের চিহ্নিত করতেই এই বিশেষ ভোটার তালিকা পরিমার্জন। কিন্তু কথা হল, হঠাৎ করে ভোটের মুখে এত বিশাল সংখ্যক ভোটারদের সঠিক তথ্য এনে তা ভোটার তালিকায় কীভাবে পরিমার্জন করা হবে তা নিয়েই বিরোধী দলগুলি আপত্তি তোলেছে। বিরোধী দলগুলির বক্তব্য হল- যারা এতদিন ভোেট দিল, সরকার নির্বাচিত করল তারা কেন হঠাৎ করে তাদের কাগজপত্র জমা দেবেন। চাপের মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন একটি বিজ্ঞাপন জারি করে জানায় যে, জনগণকে কোনো কাগজপত্র জমা দিতে হবে না। বিএলও-রা শুধু একটি এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করবে এবং এরপরই তা ঠিক করবে ইআরও-রা যে ওই এনুমারেশন পূরণ যথাযথ আছে কনা। যদি সন্দেহজনক হয় তবে ওই ভোটারকে তখন কিছু কাগজপত্র জমা করতে হবে। এরপরই ফের ফ্রেশ ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে। প্রশ্ন উঠেছে ভোট যেখানে দুয়ারে কড়া নাড়ছে সেই জায়গায় হঠাৎ করে এই স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) করার উদ্দেশ্য কী?
নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে ফর্ম এবং ফর্মের পক্ষে প্রমাণ জমা দিতে হবে। যারা দিতে পারবেন না তারা পরবর্তী ধাপে পর্যালোচনার সময় তা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
বিহারের বিরোধী দল সিপিআই(এমএল) বলছে, আসলে বিহারে গত কয়েকদিনে এত কমসংখ্যক ফর্ম জমা পড়েছে যে নির্বাচন কমিশন ভড়কে গেছে। তাই এবার তারা বিজ্ঞাপন দিয়ে এখন বাঁচার পথ খুঁজছে। সুপ্রিম কোর্টে এ সংক্রান্ত পিটিশন জমা হয়েছে। প্রায় সব বিরোধী দল একজোট হয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে অবিলম্বে এ নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করে। বিরোধী দলগুলির আইনজীবীদের বক্তব্য হল- এত কম সময়ে বিহারে কয়েক কোটি ভোটারের জন্য বিশেষ ভোটার তালিকা পরিমার্জন করা একেবারে অসম্ভব এবং অবাস্তব। কাজেই নির্বাচন কমিশনকে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পিটিশনে দাবি করা হয়েছে।
কংগ্রেসের তরফে এও বলা হচ্ছে যে, এ হল গরিব, দুর্বল, বঞ্চিত, দলিত, পীড়িত, পিছিয়ে থাকাদের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিতে শাসকদলের এক চক্রান্ত। কিন্তু এ নিয়ে আন্দোলন শুরু হতেই কিছুটা পিছু হটে নির্বাচন কমিশন। কমিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এতে জনগণের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত করার চেষ্টা চালায়। আসলে এর পেছনে কি অন্য কোনো বড় খেলা লুকিয়ে নেই তো? নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে এ ধরনের বিশেষ পরিমার্জন প্রায় ২২ বছর পর করা হচ্ছে।
প্রশ্ন হল কমিশন এতদিন কোথায় ছিল? ভোটের দিনক্ষণ এগিয়ে আসতে কমিশনের তা মনে পড়ল কেন? না কমিশনকে কেউ কি তা মনে করিয়ে দিল? কার দিকে আঙুল উঠছে? কেন্দ্রের শাসক/রাজ্যের শাসক এই অভিযোগ থেকে কি বাঁচতে পারবে? আপাতত সুপ্রিম কোর্ট কী রায় শোনায় তার দিকেই তাকিয়ে সব মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *