August 2, 2025

ট্রাম্পের ঘরোয়া রাজনীতি!!

 ট্রাম্পের ঘরোয়া রাজনীতি!!

নিজের নির্বাচনি প্রচারে জোহরান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি নিউইয়র্কের মেয়র হলে অভিবাসন সংস্থার(আইসিই) কর্মকর্তাদের অভিবাসী বিতাড়ন অভিযানে বাধা দেবেন।জোহরানের এই প্রতিশ্রুতির জবাবে সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন,যদি জোহরান আইসিই কর্মকর্তাদের বিতাড়ন অভিযান পরিচালনা করতে বাধা দেন, তবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। ট্রাম্প আরও বলেছেন, ‘আমাদের দেশে একজন কমিউনিস্টের দরকার নেই। কিন্তু যদি তেমন কেউ থাকেন, দেশের পক্ষে আমি তাঁর উপর খুবই সতর্ক ভাবে নজরদারি করতে চলেছি। আমরা তাঁকে অর্থ পাঠাব, সরকার চালানোর জন্য যেসব প্রয়োজনীয় জিনিস রয়েছে, সবই পাঠাব।’ জোহরান আমেরিকায় অবৈধ ভাবে বসবাস করছেন এমন কথা বলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সবকিছু খুঁটিয়ে দেখব।’ ট্রাম্প নিউইয়র্ক নগরের বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়েছেন। অ্যাডামসও ডেমোক্রেটিক দলের সদস্য। তবে আগামী মেয়র নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি।
লক্ষ্যণীয় হলো নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া প্রসঙ্গে যে ভাবে সাড়া দিয়েছেন জোহরান। এক বিবৃতিতে জোহরান লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি আমাকে গ্রেপ্তার করার, নাগরিকত্ব বাতিল করার, আটক কেন্দ্রে বন্দি করার এবং দেশ থেকে বিতাড়িত কতরার হুমকি দিয়েছেন। এ হুমকি আমার কোনো আইন লঙ্ঘনের কারণে নয়।বরং আমি আইসিইকে আমাদের শহরে কোনো আতঙ্ক ছড়াতে দেব না বলেছি বলে দেওয়া হয়েছে।’
কেউ সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, যৌন অপরাধে অথবা নাগরিকত্ব প্রাপ্তির সময় প্রতারণা, অর্থাৎ যদি জালিয়াতি, মিথ্যা তথ্য প্রদান বা অবৈধ পথে যদি নাগরিকত্ব লাভ করে থাকেন, তবে তাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে।
বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রতি ট্রাম্পের প্রশংসাবাণী ‘অপ্রত্যাশিত’ নয় বলেও মন্তব্য করেছেন জোহরান। জোহরান বলেন, যখন এমএজিএ (মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন) স্লোগান তুলে রিপাবলিকানরা সামাজিক নিরাপত্তার জাল ধ্বংস করে দিতে, নিউইয়র্কের লক্ষ লক্ষ বাসিন্দার স্বাস্থ্য পরিষেবা বাতিল করতে এবং শ্রমজীবী পরিবারের খরচে তাদের ধনকুবের বন্ধুদের পকেট ভরতে চাইছে, ঠিক সেই মুহূর্তে এরিক অ্যাডামস প্রেসিডেন্টের সুরে বিভাজন, বিভ্রান্তি ও ঘৃণার কথা বলছেন, যা নিন্দনীয়। ভোটাররা নভেম্বরে জোরালো ভাবে এসব প্রত্যাখ্যান করবেন। ইলন মাস্ক ও তার নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কী বলেছেন, তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক ধনকুবের ইলন মাস্ক এক সময় ট্রাম্পের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। গত বছর ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারে মাস্ক বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন। কিন্তু দুজনের সেই সুদিন আর নেই। ব্যয় ও করছাড় নিয়ে ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ এখন দুজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, প্রকাশ্যই তাঁরা পরস্পরের সমালোচনা করছেন। মাস্ক অনলাইনে বারবার ওই বিলের সমালোচনা করেছেন এবং বিলটি পাস হলে প্রতিক্রিয়া জানাতে তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হুমকিও দিয়েছেন। সিনেটে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে ট্রাম্পের বিল পাস হয়। ওই বিলের কারণে ইলন মাস্ক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কারণ, ওই বিল অনুযায়ী আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত হাজার ডলারের করছাড় সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। বিধান আছে, ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে পাওয়া নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় শুধু যখন সরকার প্রমাণ করতে পারে যে নাগরিকত্বের মূল আবেদনপত্রে গুরুতর প্রতারণা হয়েছে। মাস্ক বা জোহরানের ক্ষেত্রে এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বিরল বা অসম্ভব বলে মনে করা হয়। এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি দেখানোর উদ্দেশে দায়িত্বহীন বক্তব্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সোশ্যাল পোস্টে ট্রাম্প লিখেন, ‘সরকারী ভর্তুকিহীন হয়ে ইলনকে সম্ভবত ব্যবসা গুটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যেতে হবে। তাঁকে দিয়ে আর কোনো রকেট উৎক্ষেপণ, স্যাটেলাইট বা বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন নয়। এতে আমাদের দেশের বিশাল অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হবে।’ ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘সম্ভবত আমাদের উচিত ডিওজিই-কে দিয়ে সব কিছু আরও ভালো ভাবে খতিয়ে দেখা। প্রচুর অর্থ সাশ্রয় করা যাবে! সরকারের
ব্যয় কমাতে এবার ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ বা ডিওজিই গঠন করেন। ইলন মাস্ক ছিলেন ডিওজিইর প্রধান, গত ৩০ মে তিনি ডিওজিইর দায়িত্ব ছাড়েন। সাংবাদিকেরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি মাস্ককে বিতাড়ন করতে চলেছেন কি না। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। হতে পারে, আমাদের ইলনের উপরই ডিওজিইকে কাজে লাগাতে হবে।’
প্রসঙ্গত, নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে, ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিরা তাদের নাগরিকত্ব হারাতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটিকেই ডি-ন্যাচারালাইজেশন বা নাগরিকত্ব প্রত্যাহার বলা হয়।
ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট কিছু অপরাধ করলে, যেমন সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, যৌন অপরাধ অথবা নাগরিকত্ব প্রাপ্তির সময় প্রতারণা অর্থাৎ তাঁরা যদি জালিয়াতি, মিথ্যা তথ্য প্রদান বা অবৈধ পথে নাগরিকত্ব লাভ করে থাকেন, তবে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে।
গত ১১ জুন দেশটির বিচারবিভাগ একটি স্মারকলিপি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, তারা নাগরিকত্ব প্রত্যাহারকে অগ্রাধিকার দেবে। সেই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে যারা ‘অবৈধ ভাবে নাগরিকত্ব (ন্যাচারালাইজেশন) অর্জন করেছেন বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন কিংবা ইচ্ছাকৃত ভ্রান্ত তথ্য উপস্থাপনার মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। ন্যাচারালাইজড নাগরিক তাঁর নাগরিকত্ব হারাতে পারেন, যদি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী কাজ করেন, অথবা অন্য দেশের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন বা কোনো সরকারী পদে প্রার্থী হন।
মাস্ক বা জোহরানের নাগরিকত্ব কি কেড়ে নেওয়া যেতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটা সম্ভবত সম্ভব হবে না। লাস ভেগাসের নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের
আইন বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল কেগান বলেন, ‘ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে পাওয়া নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় শুধু সেই ক্ষেত্রে, যেখানে সরকার প্রমাণ করতে পারে যে নাগরিকত্বের মূল আবেদনপত্রে গুরুতর প্রতারণা করা হয়েছে। মাস্ক বা জোহরানের ক্ষেত্রে এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বিরল বা অসম্ভব বলে মনে হয়। এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি দেখানোর উদ্দেশে দায়িত্বহীন বক্তব্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
নানা সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চাইছেন ঘরোয়া রাজনীতিতে কোণঠাসা হতে চলা ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প আমেরিকায় সুদিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জিতেছেন। প্রথম – পদক্ষেপেই ইলন মাস্ককে ব্যয় সঙ্কোচন সংক্রান্ত একটি মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়ে বসেন।পাশাপাশি শুরু করেন বিশ্বজুড়ে এক শুল্কযুদ্ধ।যা আমেরিকার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সাবধান করে চলেছেন সেই দেশের অর্থনীতিবিদেরা। কিন্তু ট্রাম্প যেন একরোখা, একবগ্গা। তার এই অভিযান ভালো ভাবে নিচ্ছেন না দেশবাসী। এরপরই এলো প্যালেস্তাইনি নীতি এবং ট্রাম্পের ইরানে হামলার ঘটনা। নেতানিয়াহুর সঙ্গে প্রয়োজনাতিরিক্ত মাখামাখির প্রতিবাদে সেই দেশের মানুষ পথে নামেন। ক্যালিফোর্নিয়া সহ বিভিন্ন শহরে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। সেই সময়েই নিউ ইয়র্কে উত্থান ঘটলো মামদানি জোহরানের। আর প্রায় একই সময়ে মন্ত্রকের দায়িত্ব ছাড়লেন এবং ট্রাম্পের সমালোচনা করলেন ইলন মাস্ক। ঘটনাগুলি আমেরিকার রাজনীতিতে ট্রাম্প জমানাকে নাস্তানাবুদ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *