ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
পুনর্মিলন!!

রিইউনিয়ন বা পুনর্মিলন শব্দটির সঙ্গে আজকাল সবাই আমরা পরিচিত।এর মানে হলো, কোন নির্দিষ্ট সময় পর পুরনো বন্ধুদের, কিংবা পরিবারের সদস্যদের বা কোন দলের সদস্যদের পুনরায় একসাথে মিলিত হওয়া বা একত্রিত হওয়াকে বোঝায়। ইদানীং স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের বার্ষিক পুনর্মিলনের কথা প্রায়শই আমরা শুনে থাকি। আবার এমনও হয়। একটা পরিবার যারা দীর্ঘদিন ধরে কোন কারণে বিচ্ছিন্ন ছিল, তাদের একত্রিত হওয়ার ইচ্ছা থেকেও পুনর্মিলন হতে হবে। দীর্ঘ বিরতির পর পুরনো বন্ধুদের পুনরায় দেখা-সাক্ষাৎ হওয়াটাও পুনর্মিলনের পর্যায়ে পড়ে। এককথায় পুনর্মিলন বা রিইউনিয়ন হলো পুরনো সম্পর্কগুলো আবার নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়া, স্থাপন করা এবং একত্রিত হওয়া। প্রায় ১৯ বছর পর মারাঠা রাজনীতিতেও আজ এক পুনর্মিলনের ঘটনা ঘটেছে। এখানেও সেই পারিবারিক পুনর্মিলনের বিষয় থাকলেও এর চেয়ে অনেকগুণ বেশি যেটা ঘটে গেছে তা হল রাজনৈতিক নতুন সমীকরণ। উদ্ধবের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে ২০০৬ সালে বালাসাহেবের জীবদ্দশাতেই ঠাকরে পরিবারে ভাঙন ধরেছিল। শিবসেনা ছেড়ে বেরিয়ে সেদিন নতুন দল মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনা গঠন করেছিলেন রাজ ঠাকরে। আর বাল ঠাকরের অবর্তমানে শিবসেনার প্রধান হয়েছিলেন উদ্ধব। খুড়তুতো দুই ভাইয়ের এই বিরোধে বাল ঠাকরের পরিবারই শুধু ভেঙে যায়নি, বরং দীর্ঘদিনের মারাঠা রাজনীতির একচ্ছত্র আধিপত্য থেকেও দুই ভাই কার্যত নিজেরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছিলেন। একটা সময় উগ্র মারাঠা জাত্যাভিমান ও প্রখর হিন্দুত্বের ধ্বজা নিয়ে এগিয়ে চলা শিবসেনায় বাল ঠাকরের রাজনৈতিক উত্তরসূরী মনে করা হতো রাজ ঠাকরেকে। কিন্তু সময়ের হাত ধরে আচমকাই অবিভক্ত শিবসেনায় উত্থান হতে থাকে মুখচোরা ও শান্ত-লাজুক স্বভাবের উদ্ধবের। আর এতে করেই বালঠাকরের মতোই উগ্র মারাঠা অস্মিতার কারণে দলে কোন্ঠাসা হয়ে পরেন রাজ। শেষ অব্দি ২০০৫ সালে বালাসাহেবের জীবদ্দশাতেই দল ছাড়েন রাজ এবং পরের বছর নিজের নতুন দল গঠন করেন। এর পরই মহারাষ্ট্রের রাজনীতি বদলাতে থাকে সমীকরণ। ২০২২ সালে উদ্ধবের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দল ছাড়েন একনাথ শিণ্ডে। শিবসেনা ভেঙে সাংসদ-বিধায়কদের নিজের দিকে টানেন এবং নির্বাচন কমিশন থেকে আসল শিবসেনার স্বীকৃতি আদায় করেন।এখানেই থেমে থাকেনি মহারাষ্ট্রের মহারাজনীতি।গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে বড়সড় ভরাডুবি হয় শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠী এবং রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনা দলের।কোনও রকমে মুম্বাই এলাকায় ২২ টি আসন দখল করে নিজের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রেখেছেন উদ্ধব।আর রাজ ঠাকরে তো নিজের ছেলেকেও ভোটে জেতাতে পারেননি। ফলে ঠাকরে পরিবারে দেখা দেয় গভীর রাজনৈতিক অস্তিত্বের সংকট। কিন্তু আচমকাই দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ ও দূরত্ব ঘোচাতে শুরু করতে বড় ভূমিকা নেয়। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাড়নবিশের ‘ত্রিভাষা সূত্র’। হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগে একসুরে কথা বলতে থাকেন দুই ভাই রাজ ও উদ্ধব। চাপে পড়ে আপাততঃ হিন্দি বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত স্থগিত করলেও মারাঠি অস্মিতাকে অস্ত্র করেই নিজেদের দূরত্ব ঘুচিয়ে আরও কাছাকাছি আসার সিদ্ধান্ত নেন দুই ভাই। শনিবার প্রায় কুড়ি বছর বাদে দুই ভাই এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে বার্তা দিলেন তা মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতেই শুধু নতুন সমীকরণের বার্তা বয়ে আনেনি, বরং বিজেপির জন্য মহারাষ্ট্রে বড় সড় সতর্কবার্তাও বয়ে এনেছে বলা যায়। ঠাকরে পরিবারের এই পুনর্মিলন শাসক বিজেপি সরকারের একরোখা নীতির কারণে সৃষ্টি হলেও আসলে ঠাকরে পরিবারের দুই ভাইয়ের ঐক্য মারাঠি গর্বের জন্য যতটা কম, আসন্ন বৃহমুম্বাই পৌর কর্পোরেশনের নির্বাচনে তাদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা নিশ্চিত করায় জন্য তার চেয়েও বেশি জরুরি হয়ে পড়েছিল। দুই ভাই যখন রাজনীতির এই জটিল সংকটের ঘূর্ণাবর্তের মুখে দাঁড়িয়ে আছেন, তাদের এই পুনর্মিলন এবং এক মঞ্চে উপস্থিতি যথেষ্ট আগ্রহের জন্ম দিতে বাধ্য। এই পুনর্মিলনকে নেহাতই একটি পরিবারের ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগার ঘটনা হিসাবে না দেখে মহারাষ্ট্রের কঠিন রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের এই নতুন অবস্থান সন্দেহাতীত ভাবেই বৃহত্তর রাজনৈতিক পুনর্মিলনের পথকে প্রশস্ত করবে তা বলাই বাহুল্য।