ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
কর্ণাটক ক্রাইসিস!!

দেশের বিরোধী কংগ্রেস যে কয়টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজ্য হলো কর্ণাটক। কর্ণাটকে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে ২ বছর সবে হয়েছে। মাঝেমধ্যেই সেই রাজ্য থেকে কংগ্রেসের ঘরে অশান্তির খবর আসে। এবারও সেই কর্ণাটক থেকেই কংগ্রেসের ঘরে অশান্তির খবর এসেছে। মূলত ক্ষমতার দড়ি টানাটানি থেকেই এই অশান্তি। ২০২৩ সালের মে মাসে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেস যখন এই রাজ্যে ক্ষমতার স্বাদ পায় তখন থেকেই প্রকাশ্যে না হলেও কংগ্রেসের দুই নেতা এবং তার অনুগামীদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে একটা রেষারেষি জারি রয়েছে। ফলে ক্ষমতায় আসার প্রায় এক পক্ষকাল পরে কর্ণাটকে কংগ্রেস সরকার শপথ নিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সিদ্দারামাইয়া। তার ডেপুটি হন ডি কে শিবকুমার। ডি কে শিবকুমার কর্ণাটকের রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী। অন্যদিকে সিদ্দারামাইয়া দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সৈনিক কংগ্রেসের। প্রবীণ নেতা। এই দুই নেতার মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে মূলত কাজিয়া। তবে তা কখনই প্রকাশ্যে আসেনি। সিদ্দারামাইয়ার অনুগামী এবং শিবকুমারের অনুগামীদের মধ্যে বিবৃতির লড়াইকে ঘিরেই যাবতীয় ক্রাইসিসের সূত্রপাত হয় ক’দিন পরপর। পরে হাইকমান্ডের দূত এসে আলোচনা চালিয়ে ক্রাইসিস মিটিয়ে যান। এই করে করে ২ বছর চলছে। মূলত শিবকুমারের অনুগামীরা চাইছেন তাকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসানো হোক। কিন্তু শিবকুমার নিজে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর কথা একবারের জন্যও বলেননি। অতি সম্প্রতি কর্ণাটক ক্রাইসিসের মূলে রয়েছে শিবকুমার ঘনিষ্ট এক নেতার প্রকাশ্য বিবৃতি। শিবকুমার ঘনিষ্ঠ এক নেতা প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে বলেন যে, শিবকুমারকে অন্তত তিন মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। আর তার এই প্রকাশ্য বিবৃতিদানে কংগ্রেসে ব্যাপক অশান্তি তৈরি হয়। ফের সিদ্দারামাইয়া এবং শিবকুমারের অনুগামীদের মধ্যো একটি কাজিয়া চলে। ফের মুখ্যমন্ত্রীর গদি নিয়ে দড়ি টানাটানির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। দলের মধ্যে এই কাজিয়া চললে দিল্লী থেকে হাইকমান্ডের দূত পাঠাতে হয়। রণদীপ সুরজেওয়ালাকে কংগ্রেস হাইকমান্ড দূত হিসাবে পাঠিয়ে শিবকুমার এবং সিদ্দারামাইয়ার সাথে আলোচনা করতে বলে। কী সমস্যা, এ নিয়ে উভয় নেতার সাথে আলোচনা হয়। শিবকুমার যেমন একদিকে কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী তেমনি তিনি দলের প্রদেশ সভাপতিও। তাই তিনি এ যাত্রায় প্রকাশ্য কিছু বলেননি মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে। তার হয়ে দলের এক বিধায়ক মুখ খোলেন। তবে হাইকমান্ডের সাথে আলোচনার পর অবশ্য শিবকুমার নিজে উদ্যোগী হয়ে বলেন যে, দলে কোন মতেই বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। এ যাত্রায় তিনি ওই বিধায়ককে শোকজও করেন। নিয়ম রক্ষার্থে বললেন যে, সিদ্দারামাইয়ার হাত শক্ত করতে চান তিনি। তবে অন্দর কি বাত সবাই বুঝতে পারছেন ঠিকই। শিবকুমারই যে কদিন পরপর তার অনুগামীদের দিয়ে এই সমস্ত কাণ্ডকারখানা ঘটাচ্ছেন তা বুঝতে আর কারো বাকি নেই। হাইকমান্ডও বুঝতে
পারছেন। আদতে কংগ্রেস নিজেদের মধ্যে কাজিয়া করে এর আগে পাঞ্জাব হারিয়েছে, রাজস্থান হারিয়েছে। পাঞ্জাবে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং এবং নভজ্যোত সিং সিধুর মধ্যে কাজিয়ায় কংগ্রেসকে মূল্য
চোকাতে হয়েছে সে রাজ্যে। কাজিয়ায় ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংকে দল ছাড়তে হয়েছে। অন্যদিকে, নভজ্যোত সিং সিধু ধুমকেতুর মতো রাজনীতিতে এসেছিলেন, ফের হারিয়ে গেছেন। এখন অন্য দুনিয়ায়
বাস করছেন সিধু। মাঝখান থেকে কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়েছে পাঞ্জাবের মতো রাজ্য, যে রাজ্য কিনা একসময় কংগ্রেসের গড় ছিল। একই অবস্থা রাজস্থানেরও। রাজস্থানেও গত প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে হয়ে যাওয়া বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সে রাজ্য হারিয়েছিল খুব অল্প ভোট শতাংশের ব্যবধানে। সে রাজ্যেও কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল সে সময় মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবং শচীন পাইলটের মধ্যে গোটা পাঁচ বছর ধরে দ্বৈরথ চলে। হাইকমান্ড তাতে আমল দেয়নি। ফলে কংগ্রেসকে হারাতে হয়েছে রাজস্থানের মতো রাজ্য। এবার কর্ণাটকে ২ বছর ধরে প্রকাশ্যে না হলেও অন্দরে অন্দর সিদ্দারামাইয়া এবং শিবকুমারের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব লেগে রয়েছে। কর্ণাটকে সরকারের আরও তিন বছর সময়কাল রয়েছে। হাইকমান্ড
যদি এখন থেকেই শক্ত হাতে কর্ণাটকে কংগ্রেসের এই কাজিয়া না মেটাতে উদ্যোগী হয় তাহলে রাজস্থান, পাঞ্জাবের মতো হয়তোচ ২০২৮ সালে কর্ণাটকে রাজ্যপাট হারাতে হতে পারে কংগ্রেসকে। সুতরাং কংগ্রেসকে এখন থেকেই কর্ণাটক ক্রাইসিসকে শক্ত হাতে মোকাবিল করতে হবে। যদি কংগ্রেস তা মোকাবিলা করতে পারে তা কংগ্রেসে জন্যই ভালো। অন্যথায় কংগ্রেসকে এর ফল ভুগতে হতে পারে।