ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
দায়বদ্ধতা!!

‘দায়বদ্ধতা’ বাংলা অভিধানে এই শব্দটির নানা অর্থ যেমন রয়েছে।তেমনি রয়েছে প্রকারভেদ।সাধারণত ‘দায়বদ্ধতা’ এই শব্দটির অর্থ বলতে আমরা যা বুঝি,তা হলো ‘কর্তব্য পালনের দায়িত্ব’।এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কি বা কী ধরনের কর্তব্য?সেই কর্তব্য অনেক ধরনের হতে পারে। যেমন কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন। সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন। এই সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনকেই আমরা ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা’ বলে থাকি। অর্থাৎ সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। আমাদের এই সমাজের প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। এটি একটি নৈতিক ধারণা, যা সমাজের সদস্য হিসাবে প্রত্যেকের পালন করা উচিত। ‘সামাজিক দায়বদ্ধ’ মানে সমাজের প্রতি ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণের সমষ্টিগত দায়িত্ব, যা সমাজের উন্নতি ও কল্যাণ সাধনের জন্য পালন করা হয়। এটি কোনও আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়। এটি সমাজের প্রতি আমার আপনার সকলের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্বও বটে।
এই সামাজিক দায়বদ্ধতার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে।যেমন প্রথমত, পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব। সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিত পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কাজ করা। বৃক্ষরোপণ করা, গাছ বাঁচানো, জলের অপচয় রোধ করা, প্লাস্টিক বর্জন করা ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত, মানবতার প্রতি দায়িত্ব সমাজের সকল অংশের মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া। তৃতীয়ত, আইন ও নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। চতুর্থত, শিক্ষার প্রসার ঘটানো। সমাজের সকল অংশের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া এবং শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। পঞ্চম, সমাজের গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করা। তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করে নৈতিক দায়িত্ব পালন করা। এমন আরও অনেক সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু সবথেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সামাজিক দায়বদ্ধতাগুলি এবং দায়িত্বগুলি আমরা পালন করি ক’জনে? আজকের এই স্বার্থপর সমাজের কঠিন সময়ে এই প্রশ্নই এখন সব থেকে বড় হয়ে উঠেছে। বর্তমান সমাজ এখন প্রায় ভুলেই গেছে সামাজিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকারের কথা।শুধু নেবো,দেবো না কিছুই।এই মানসিকতায় ডুবে গেছে গোটা সমাজ।তারপরও সমাজ বেঁচে আছে।বেঁচে থাকবেও।

কারণ ‘ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক’-এর মতো কিছু ক্ষণজন্মা মানুষ এই পৃথিবীতে জন্ম নেন বলেই এবং দৈনিক সংবাদ-এর মতো কিছু প্রতিষ্ঠান মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বলেই,এই সমাজ এখনও বেঁচে আছে।ঘুনে ধরা সমাজের এখনও সবকিছু পচে যায়নি।এমন ক্ষণজন্মা মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানের জন্যই হাজার প্রতিকূল পরিস্থিতি,বাধা বিপত্তির বেড়াজালে জড়িয়ে থাকা সত্বেও মানুষ স্বপ্ন দেখার সাহস পায়।স্বপ্ন দেখার সাহস জোগায়। আগামী প্রজন্মের বুকে সাহস সঞ্চারিত করে।জাগিয়ে তুলে অদম্য ইচ্ছাশক্তি। সব প্রতিকূলতা, প্রতিবদ্ধকতাকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পায়। নিজেরা অনুপ্রাণিত হয়ে,অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করার সুযোগ পায়।
এই ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা’ অত্যন্ত কঠিন একটি দায়িত্ব।এই দায়িত্ব পালন করা সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। সামর্থ থাকলেও স্বার্থপরতার মায়াজালে জড়িয়ে সমাজের প্রতি কর্তব্য পালনের কথা তাদের আর মনে থাকে না। মনে থাকলেও ইচ্ছে করে ভুলে থাকাটাকেই তারা পাথেয় করে নিয়েছে। সমাজ থেকে শুধু নেবো, দেবো না কিছুই। এই তাদের মননে, চিন্তনে। এরা সমাজের, মানুষের কোনো উপকারেই আসে না। এরা বোঝেন শুধু নিজেরটা। কিন্তু ব্যতিক্রমও আছে। প্রয়াত ‘ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক’ ওই ব্যতিক্রমী মানুষের মধ্যে অন্যতম। যিনি আজীবন সমাজের পিছিয়ে পড়া, গরিব, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর হাতে গড়া ‘দৈনিক সংবাদ’ এবং তাঁরই নামাঙ্কিত ট্রাস্টকে সেই পথে পরিচালিত হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। জীবদ্দশায় প্রয়াত ভূপেন্দ্র দত্ত ভৌমিক বহু সামাজিক কাজ করে গেছেন, যা সংখ্যায় হিসাব করা অনেকটাই কঠিন। তাঁর নামাঙ্কিত ট্রাস্টও সেই পথে পথ চলা অব্যাহত রেখেছে। বহু সামাজিক কাজের মধ্যে ‘ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক মেরিট কাম মিনস অ্যাওয়ার্ড’ তার মধ্যে একটি। ২৮ জুন ২০২৫ ইং রাজধানীর মুক্তধারা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দ্বিতীয়বারের এই আয়োজন। হল ভর্তি মানুষ আরও একবার দেখলো, প্রয়াত ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিকের অসমাপ্ত ইচ্ছাপূরণের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ট্রাস্ট এবং দৈনিক সংবাদ ‘দায়বদ্ধতার’ এই অঙ্গীকার থেকে কখনও বিচ্যুত হবে না। আগামীদিনেও এইভাবে সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলি আন্তরিকতার সাথে পালন করে যাবে।বিনিময়ে আমরা চাই শুধু চল্লিশ লক্ষ ত্রিপুরাবাসীর ভালোবাসা ও আশীর্বাদ।