ত্রিপুরার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক দাবি বাংলাদেশ হাইকমিশনারের!!
জণ্ডিস রোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে: স্বাস্থ্য অধিকর্তা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজধানী শহরের একাংশে জণ্ডিস রোগে বহু মানুষ আক্রান্তের ঘটনায় তার মোকাবিলায় মঙ্গলবার দিনভর স্বাস্থ্য দপ্তরের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করে এলাকার মানুষ। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেন ঘরে কেউ অসুস্থ আছেন কি না বা জণ্ডিস রোগে কেউ আক্রান্ত আছেন কি না।
তার পাশাপাশি বিশেষ স্বাস্থ্য শিবির করেও জণ্ডিস রোগের শনাক্তকরণে রক্ত পরীক্ষা করার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। অসুস্থদের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। আগরতলা পুর নিগমের ২০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার গান্ধীঘাট, নেতাজী চৌমুহনী, মাস্টার পাড়া, কানাই সাহা পাড়া সহ সংলগ্ন এলাকায় বহু মানুষ জণ্ডিসে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা প্রফেসর ডা. তপন মজুমদার জানান, যাদের রক্ত পরীক্ষা করার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এক-দুইদিনের মধ্যে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
তখন দেখা যাবে ঠিক কতজন জণ্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন। তার আগে যাদের জণ্ডিস শনাক্তকরণ করা হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে অসুস্থদের শিবিরের মাধ্যমে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। স্বাস্থ্য অধিকর্তা আরও বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা অসুস্থদের চিহ্নিত করছেন। নামের তালিকা তৈরি করছেন। চিন্তিত ও উদ্বেগের কোন কারণ নেই বলেও জানান।
এদিকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক রঞ্জন বিশ্বাসও সেই এলাকায় গিয়ে জণ্ডিস রোগ নিয়ে খোঁজখবর নেন। এদিকে এলাকার মানুষ জানিয়েছেন গত তিন সপ্তাহ ধরে জণ্ডিসে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন।শিশু, বৃদ্ধ, মহিলা সব অংশের মানুষ জণ্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের কেউ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন আবার কেউ ব্যক্তিগতভাবে প্রাইভেট চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসক দেখান।
এদিকে ডিডব্লিউএস দপ্তরের ডিভিশন ওয়ানের এগজিকিউটিভইঞ্জিনীয়ার গোপী মজুমদার মঙ্গলবার রাতে জানান, সোমবার যে জলের নমুনা নিয়ে দপ্তরের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় তার রিপোর্টে এলাকায় পাইপলাইনে সরবরাহ করা পানীয় জলে কোন দূষণ ও ত্রুটি পাওয়া যায়নি।
তবে আরও উচ্চ পর্যায়ে পরীক্ষা করার জন্য সেই জলের নমুনা আবার আগরতলা সরকারী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজির ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এক-দুদিনের মধ্যে পরীক্ষার রিপোর্ট
পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান। তখন রিপোর্ট দেখে জল নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ডিডব্লিউএস ডিভিশন ওয়ানের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ার শ্রীমজুমদার জানান। তাকে প্রশ্ন করা হয় এলাকার মানুষ দাবি করছেন বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য আপাতত জলের ট্যাঙ্কারে জল সরবরাহ করার জন্য। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি জানান পুর নিগমের কাছে জলের ট্যাঙ্কার আছে। পুর নিগমের সঙ্গে ট্যাঙ্কারে বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করার জন্য তিনি কথা বলবেন বলে জানান।
এদিকে রাজ্য সরকারের এক প্রেস রিলিজে জানানো হয় যে ‘শহরের একাংশে আচমকা জণ্ডিসে আক্রান্ত বহু মানুষ’ এই শিরোনামে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় গত ২৩ জুন প্রকাশিত সংবাদ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের নজরে এসেছে।এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে দপ্তরের পক্ষ থেকে স্পষ্টীকরণ দিয়ে জানানো হয়েছে, পশ্চিম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্যালয়ের হেপাটাইটিস সারভিলেন্স রিপোর্ট অনুযায়ী গত ১৬ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত মোট ১৪ জন হেপাটাইটিস পজিটিভ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি, কিছু রোগী জিবিপি এবং আইজিএম হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং কয়েকজন ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। সব মিলিয়ে আনুমানিক ৬০ জন হেপাটাইটিস পজিটিভ রোগী রয়েছেন। আক্রান্ত রোগীদের প্রধান উপসর্গ ছিল ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, হলদে প্রস্রাব এবং হলদে চোখ। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসটিই সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। মধ্য প্রতাপগড় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারের অধীনে কালীবাড়ি রোডের মাস্টার পাড়া, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড এবং হাওড়া নতুন পল্লী এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা প্রত্যেকেই চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যেই জলের উৎস পরীক্ষা করার জন্য পজিটিভ রোগীর বাড়ি থেকে তিনটি জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মিলন সংঘের কমন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি, হাওড়া নদীর অপরিশোধিত জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য এজিএমসির ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে দপ্তর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।