August 2, 2025

বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি,জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ রাজ্যে এইডস আক্রান্ত!!

 বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি,জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ রাজ্যে এইডস আক্রান্ত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গোটা দেশের মধ্যে এইডস (এইচআইভি) সংক্রমণের হার সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থানে পৌঁছেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্য মিজোরাম। ভারতের ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী মিজোরামে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার ২.৭৩ শতাংশ। এই হার জাতীয় গড় ০.২০ শতাংশের তুলনায় প্রায় ১৪ গুণ বেশি।
এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নাগাল্যাণ্ড। সেখানে এইচআইভি সংক্রমণের হার ১.৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ নাগাল্যাণ্ডেও জাতীয় গড়ের তুলনায় সংক্রমণের হার প্রায় সাত গুণ বেশি।
উল্লেখযোগ্যভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্য – মণিপুর (০.৮৭%), মেঘালয় (০.৪৩%), ত্রিপুরা (০.৩৭%) এবং অরুণাচল প্রদেশ (০.২৫%) জাতীয় গড় ০.২০ শতাংশের চেয়েও উপরে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এই প্রবণতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ড্রাগের অপব্যবহার, অসুরক্ষিত যৌন আচরণ, যৌন পেশায় নিযুক্তদের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সীমাবদ্ধতা এই সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ NACO জানিয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যগুলিতে সংক্রমণ রোধে আগে থেকেই নানা প্রকল্প ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তবে নতুন তথ্য বলছে সেই সমস্ত উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বা কার্যকরভাবে পৌঁছচ্ছে না ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে।
বিশেষ করে মিজোরাম ও নাগাল্যাণ্ডে তরুণ সমাজের মধ্যে মাদক সেবনের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। তরল ও ইঞ্জেকশন ড্রাগ ব্যবহারের ফলে রক্তের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ানোর প্রবণতা
দেখা যাচ্ছে।মিজোরামে প্রতি ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে প্রায় তিনজন এইচআইভি আক্রান্ত-এমন চিত্র
দেশে আর কোথাও নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে খবর।এই রাজ্যগুলিতে এইচআইভি পরীক্ষার হারও তুলনামূলকভাবে বেশি। কিন্তু এর বিপরীতে প্রতিরোধ ও সচেতনতা কার্যক্রমে ঘাটতি রয়ে গেছে।
ত্রিপুরার স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, রাজ্যে সংক্রমণের হার ০.৩৭ শতাংশ হলেও তা জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই প্রবণতা রোধে সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। NACO-এর বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে মোট ৩৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই ছয়টি রাজ্যে সংক্রমণের হার জাতীয় গড়ের চেয়েও বেশি। জাতীয় পর্যায়ে যেখানে এইচআইভি সংক্রমণ কমে আসছে বলে আশা করা হচ্ছিল সেখানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উল্টো চিত্র স্পষ্ট।বিশেষজ্ঞরা বলছেন,শুধু স্বাস্থ্য পরিষেবা বাড়ালেই হবে না, এই অঞ্চলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ যুব সমাজের মধ্যে জীবনদর্শন শিক্ষা কাজের সুযোগ এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে কেন্দ্র করে একটি সমন্বিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নারী ও কিশোরীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ অনেক সময় নারীরা তাদের সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন হন না বা জানার সুযোগ পান না।এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে
কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম-এর অধীনে যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলিকে আরও গতিশীল করে তুলতে হবে। সরকারী এবং বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই রোগী শনাক্তকরণ, কাউন্সেলিং, চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহে সমন্বয় জরুরি হয়ে পড়েছে। মিজোরাম ও নাগাল্যাণ্ডে ইতিমধ্যে বিভিন্ন এনজিও এবং ধর্মীয় সংগঠনও এইচআইভি প্রতিরোধে কাজ করছে। কিন্তু সময় কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কাঙিক্ষত সাফল্য আসবে না ববলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এইচআইভি আক্রান্তদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আনা জরুরি। কারণ এখনও অনেক জায়গায় এই রোগে আক্রান্তরা সামাজিকভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যগুলিকে নির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য করে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষভাবে মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে বাড়তি নজর দেওয়া হবে।
মোট কথা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এইচআইভি সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা শুধুমাত্র একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নয় বরং সামাজিক এবং নীতিগত সমস্যা হিসেবেও দেখা উচিত।
জনসচেতনতা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সেবাপ্রদান – এই চারটি স্তম্ভকে ঘিরে গড়ে তুলতে হবে একটি টেকসই ও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এইচআইভি/এইডস প্রাদুর্ভাব রোধে সরকার ও সমাজ উভয় পক্ষের সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া ভবিষ্যতের চিত্র যে আরও ভয়াবহ হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *