August 2, 2025

ডেথ্ লাইনার!

 ডেথ্ লাইনার!

১২জুন, ২০২৫ ইং, এই দিনটি ভারতের ইতিহাসে একটি অভিশপ্ত কালো দিন হিসাবে স্থান করে নিলো।এদিনটিতে ভারতের বুকে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান দুর্ঘটনা ঘটে গেলো।গুজরাটের আমেদাবাদ থেকে লণ্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার ‘এ আই ১৭১ বিমান’ ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সদস্য, মোট ২৪২ জন নিয়ে টেক অফের ত্রিশ সেকেণ্ডের মধ্যে বিপর্যয় ঘটে। বিমানটি আমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি জনবহুল এলাকায় সিভিল হাসপাতালের হোস্টেলের উপর আছড়ে পড়ে এবং সাথে সাথেই বিস্ফোরণ ঘটে।এমন ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা এবং এর পরবর্তী ঘটনাবলি সম্পর্কে ইতিমধ্যে সকলের কম বেশি জানা হয়ে গেছে। বিমানের সকল যাত্রী এবং ক্রু মেম্বার সহ মোট ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে গেছেন এক যাত্রী।শুধু ভারত কেন, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে এমন ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে,এটিও একটি ইতিহাস।বলা যায় বিরলের মধ্যে বিরলতম।যে যাত্রায় ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। সেখানে একজন বেঁচে যাওয়া ‘অলৌকিক’ বলেই অনেকে বিষয়টি মনে করছেন।
এই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় শুধু বিমানে থাকা ২৪১ জনেরই মৃত্যু হয়নি। বিমানটি যে সিভিল হাসপাতালের হোস্টেলের বিল্ডিং-এ আছড়ে পড়ে বিস্ফোরণ হয়েছে,সেই সিভিল হাসপাতালের ৭ জন চিকিৎসকেরও মৃত্যু হয়েছে এই দুর্ঘটনায়।এখনও আহত বেশ কয়েকজন। তাদের চিকিৎসা চলছে। এদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক বলে সংবাদ সূত্রে খবর।আমেরিকার কোম্পানি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিম লাইনার বিমানটিতে প্রচুর পরিমাণ জ্বালানি মজুত ছিল। জ্বালানি মজুত থাকাটাই স্বাভাবিক। ফলে বিস্ফোরণের মাত্রা ছিলো বিকট এবং ভয়ঙ্কর। বিমানটি ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রথম আকাশে উড়েছিলো। ১২ বছরের পুরনো বিমান বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭, এই প্রথম দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
আর এই ভয়ানক দুর্ঘটনার পরই বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন যেমন উঠতে শুরু করেছে, তেমনি বিমান বিশেষজ্ঞ মহলেও গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সাধারণ বিমান টেক-অফ করার ২০০ ফুটের মাথায় পাইলট ল্যান্ডিং গিয়ার (পিছনের চাকা) তুলে নেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার লন্ডনগামী এ আই ১৭১ বিমানটি যখন ৬২৫ ফুট উপরে, তখনও তার ল্যান্ডিং গিয়ার খোলা ছিল।এই অস্বাভাবিক ঘটনাই এখন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রিমলাইনারের ককপিটে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো অভিজ্ঞ পাইলটদের অভিমত, ল্যান্ডিং গিয়ার তুলে না নেওয়ার পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকতে পারে।দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমনের পাইলট হয়ত বুঝেই গিয়েছিলেন যে তাঁকে জরুরি অবতরণ করতে হতে পারে।তাই, পরে ইঞ্জিনের সমস্যায় ল্যান্ডিং গিয়ার না খুললে তা আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।তাই হয়তো ল্যান্ডিং গিয়ার খোয়াই ছিল।আবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ল্যান্ডিং গিয়ার ভিতরে ঢোকেনি-এমন তত্ত্বও উঠে আসছে।উঠে আসছে বিমানের ডানায় থাকা ফ্ল্যাপের কথাও।টেক অফ এবং ল্যান্ডিংয়ের সময় ওঠানামা করা এই ফ্ল্যাপ ঠিকমতো কাজ না করলেও গুরুতর সমস্যা হতে পারে।পাইলটরা আরও জানাচ্ছেন, টেক অফের ঠিক আগের মুহূর্তেও যদি সামান্য কোনো ত্রুটি দেখা দিত, তাহলে পাইলট টেক অফ বাতিল করতেন এবং বিমানকে রানওয়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে থামাতেন। কিন্তু ড্রিমলাইনারের পাইলট সেটাও করেননি।তার মানে টেক অফের শুরুতেও কোনোও ত্রুটি ধরা পড়েনি। রানওয়ে থেকে ৬২৫ ফুট উপরে উঠতে বড়জোর ২০ সেকেন্ড সময় লাগে। তাই যা ঘটার, সম্ভবত ওই ২০ সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটে গিয়েছে।এমন আরও একাধিক তত্ত্ব, একাধিক কারন, একাধিক সম্ভাবনা, একাধিক ধারণা নিয়ে এখন গোটা দেশজুড়ে আলোচনা, পর্যালোচনার এককথায় ঝড় উঠেছে। তবে ড্রিমলাইনারের অভিজ্ঞ পাইলটদের বক্তব্য, এটি ‘সেফেস্ট এয়ারক্র্যাফ্ট’ এবং একটি আধুনিক বিমান। প্রতিটি উড়ানের আগে প্রতিটি যন্ত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং সামান্যতম কম্প্রোমাইজও করা হয় না। ভেঙে পড়া বিমানের কমাণ্ডার সুমিত সাবারওয়ালের শুধু ড্রিমলাইনারেই আট হাজারের বেশি ঘন্টা উড়ার অভিজ্ঞতা ছিল। পাইলটদের বক্তব্য, যে বিমানকে অজেয় বলা হয়, কী করে এভাবে ভেঙে পড়লো? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বিমানের ব্ল‍্যাক বক্সের বিশ্লেষণ এবং বিস্তারিত তদন্তের দিকেই এখন সবার নজর। তবে একটা কথা বলতেই হবে, ড্রিমলাইনার এখন ডেথলাইনারে পরিণত হয়েছে। এই ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় তো লাগবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *