বর্ষায় বিদ্যুৎ দপ্তরের ব্যাপক প্রস্তুতি,পরিষেবা সচল রাখতে কর্মীদের বাতিল,বৈঠক বিদ্যুৎমন্ত্রীর!!

 বর্ষায় বিদ্যুৎ দপ্তরের ব্যাপক প্রস্তুতি,পরিষেবা সচল রাখতে কর্মীদের বাতিল,বৈঠক বিদ্যুৎমন্ত্রীর!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- ত্রিপুরায় বর্ষা মানেই বিপযয়ের আশঙ্কা। টানা বৃষ্টিপাত প্রবল ঝড় ও দমকা প্রায়শই বিদ্যুৎ পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটে। এই বাস্তবতাকে মাথায় রেখে রাজ্য সরকার আগেভাবেই প্রস্তুতি মরিয়া। এরই অঙ্গ হিসেবে রাজধানী আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে অনুষ্ঠিত হলো এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বৈঠকের প্রধান বিষয় ছিলো রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের বর্ষাকালীন প্রস্তুতি। এই পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা বৈঠকে পৌরোহিত্য করেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব অভিষেক সিং।তিনি বৈঠকে উপস্থিত সকল পারিক ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে নানা দিকনির্দেশনা দেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব উদয়ন সিনহা, ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু, অর্থ অধিকর্তা সর্বজিৎ সিং ডোগরা এবং রাজ্যের বিভিন্ন বিভাগ ও সার্কেলের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা। বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ স্পষ্ট ভাষায় জানান, বর্ষার দুই মাস (জুন-জুলাই) – রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা যাতে বিনা বাধায় অব্যাহত থাকে, তা নিশ্চিত করতেই এই সময় দপ্তরের সকল কর্মী ও আধিকারিকের ছুটি বাতিল হিসেবে ধরা হবে। শুধুমাত্র গুরুতর স্বাস্থ্যগত কারণ ছাড়া অন্য কোন ছুটি বিবেচনায় আনা হবে না। তিনি বলেন, রাজ্যবাসীর কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সরকারের অগ্রাধিকার। তাই আমাদের সবাইকে এই দায়িত্বে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি তিনি ইঙ্গিত দেন, বর্ষা পরবর্তী সময়ে কর্মীদের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধার কথাও ভাবা হচ্ছে। বৈঠকে বিদ্যুৎ সচিব অভিষেক সিং বিভাগীয় সমস্যা, সম্ভাব্য বিপর্যয় ও এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন। মন্ত্রী ও সচিব উভয়েই জঙ্গল কাটিং এবং সাবস্টেশন ও পরিবাহী লাইনের পর্যবেক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। মন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর দেখা যায় ঝড়ের সময় গাছ বা বাঁশের ডাল বিদ্যুৎ লাইনের উপর পড়ে পরিষেবা ব্যাহত – করে। অথচ অনেকেই নিজেদের গাছ কাটতে বাধা দেন, যা ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। তিনি সাধারণ মানুষের উদ্দেশে আহ্বান জানান, দয়া করে বাধা না দিয়ে সহযোগিতা করুন। আপনাদের সাহায্য ছাড়া বিদ্যুৎ নিগম একা কিছুই করতে পারবে না। বৈঠকে নিগমের জেনারেল ম্যানেজার স্বপন দেববর্মা পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিষেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। প্রতিটি বিভাগ থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও সিনিয়র ম্যানেজাররা তাদের অঞ্চলের প্রাক-বর্ষা প্রস্তুতি, ট্রান্সফরমার বদল, লাইনের মেরামতি ও সাবস্টেশন রক্ষণাবেক্ষণের বিস্তারিত তুলে ধরেন। উল্লেখযোগ্যভাবে বেশিরভাগ বিভাগের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোন এলাকায় কাজ বাকি থাকলে তা দ্রুত শেষ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পরিষেবা যাতে নির্বিঘ্নে পরিচালিত হয়, সেই লক্ষ্যে অতিরিক্ত জনবল যানবাহন ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্ট অধিকারিকদের স্বাধীনতা দিয়েছেন ব্যবস্থাপনা অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু। তিনি অনান, ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম এই বর্ষা মরশুমে সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে রয়েছে। ট্রান্সমিশন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন দেববর্মা জানান, বিদ্যুৎ পরিবাহী উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লাইন ও সাবস্টেশনের মেরামতি কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে কিছু সংবেদনশীল এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে যেখানে গত বছর দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তিনি বলেন, সাবস্টেশনের কাজের সময় বিদ্যুৎ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকতে পারে, তবে তা রাজ্যবাসীর বৃহত্তর স্বার্থে।
বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, এই কাজ একা নিগম কিংবা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। নাগরিকদের সহযোগিতা ছাড়া সফলতা সম্ভব নয়। গাছ কাটা, লাইনের কাজ কিংবা সাবস্টেশনের উন্নয়নে কেউ যেন বাধা না দেন, এই আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল সময়মতো পরিশোধ ও হুক লাইন বন্ধ করার জন্য সাধারণ মানুষের কাছেও আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের বন্যা হোক বা দুর্গাপুজোর সময়- আমাদের বিদ্যুৎকর্মীরা যেভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাতে আমি গর্বিত। এবার বর্ষাতেও সেই ধারা বজায় রাখতে হবে। আধিকারিকদের উদ্দেশে তার বার্তা ছিল স্পষ্ট ‘আপনারা শুধু সরকারী চাকরি করছেন না, জনসেবার কাজে নিয়োজিত। সেই মনের অবস্থান নিয়েই কাজ করার কথা বলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.