September 19, 2025

চিন্ময় প্রভুর জামিনের শুনানি বৃহস্পতিবার,সওয়ালে ২৫ আইনজীবী!!

 চিন্ময় প্রভুর জামিনের শুনানি বৃহস্পতিবার,সওয়ালে ২৫ আইনজীবী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকার জন্য বাংলাদেশে ধৃত হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের জন্য বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালতে সওয়াল করতে পারছেন না ঢাকার বিশিষ্ট আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের বেডে শুয়েই চিন্ময়কৃষ্ণের এই আইনজীবী জানান, তিনি অনুপস্থিত থাকলেও চিন্তার কোনও কারণ নেই, কাল আদালতে প্রভুর জামিনের আবেদন জানিয়ে সওয়াল করবেন পঁচিশ জন আইনজীবী।বুকে ব্যথা নিয়ে গতকাল বর্ষবিদায়ের দিন এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করানো হয় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বছর আটাত্তরের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষকে। তিনি কেবিনে রয়েছেন। এ দিন সন্ধ্যায় হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, আগের চেয়ে সুস্থ রয়েছেন রবীন্দ্রবাবু। তবে বুকে চিনচিনে ব্যথা এখনও রয়েছে। গতকাল রাতেই বাংলাদেশের প্রবীণ আইনজীবীর শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এ দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দুই প্রস্থে ডাক্তারেরা তাকে দেখেছেন। আরও কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষা করা হতে পারে তার। এসএসকেএমের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। গত মাসে রবীন্দ্রবাবু পশ্চিমবঙ্গে আসেন। কলকাতার উত্তর-শহরতলি ব্যারাকপুরে তার পুত্রের বাড়ি। সেখানেই থাকছিলেন রবীন্দ্রবাবু। সেখানেই গতকাল আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাতে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় রবীন্দ্রকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকেরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ঘটনাচক্রে তার অসুস্থতার কথা শুনেই ব্যারাকপুরে রবীন্দ্র ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোেষ। বস্তুত, কুণালের পরামর্শেই সময় নষ্ট না করে এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয় তাকে। রবীন্দ্রবাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্ব সেরে বাইরে এসে কুণাল দাবি করেন,গত শুক্রবার রবীন্দ্রবাবু তাকে ফোন করে মুখ্যমন্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন।সেই সুবাদেই তার এই সৌজন্য সাক্ষাৎ।কুণাল আরও দাবি করেন, রবীন্দ্রবাবু তাকে সখেদে বলেছেন যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিলেও, তার উত্তর মেলেনি। রবীন্দ্রবাবুর এই অনুরোধ ঘিরে গতকাল দিনভর বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের তরজা চলে। চিন্ময়কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে এতোদিন বিজেপি একা প্রচার চালালেও, রবীন্দ্রবাবুর সঙ্গে দেখা করে সেই রাজনীতির আঙিনায় পা রাখে তৃণমূলও। ঘটনা হলো, গণবিক্ষোভে শেষ হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের আবহে চট্টগ্রামে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ইসকনের প্রাক্তন সদস্য তথা সম্মিলিত
সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র প্রভু চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে তার জামিন নামঞ্জুর হয়। চিন্ময়কৃষ্ণের জামিন সংক্রান্ত আবেদন নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে সওয়াল করনে সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্রবাবু। তিনি বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের চেয়ারম্যানও বটে। চট্টগ্রামের আদালতে মোট তিনটি আবেদন জানান তিনি। যে মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মামলায় তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে লড়ার জন্য আবেদন করেন। পাশাপাশি, চিন্ময়ের জামিনের মামলাটির শুনানি এগিয়ে আনার আবেদনও করেন। কিন্তু হই হট্টগোলের জেরে মামলার শুনানিই হয়নি। অন্য আইনজীবীদের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তোলেন তিনি। চট্টগ্রাম আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে সে সময় রবীন্দ্রবাবু বলেছিলেন, ‘চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে এখানকার কোনও আইনজীবী (তথা ভয়ে) লড়তে চাইছেন না। আমি আবেদন করেছিলাম। বিচারক তা মঞ্জুর করতেও চাইছিলেন। কিন্তু সে সময়ে আদালত কক্ষে শতাধিক আইনজীবীর বিরোধিতায় চিৎকার করতে থাকেন। আবেদনটি নামঞ্জুর হয়ে যায়।’ চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে বাংলাদেশের একাংশ অশান্তি ছড়ায়। চট্টগ্রাম, রংপুরের মতো এলাকায় গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে এবং সন্ন্যাসীর মুক্তির দাবিতে পথে নামেন সংখ্যালঘুরা। বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতও, যার ফলে দুই দেশের সম্পর্কের বেশ কিছুটা অবনতি হয়। ডিসেম্বরের শুরুতে চিন্ময়কৃষ্ণের মামলাটি আদালতে উঠলেও নিজের পক্ষে কোনও আইনজীবীকে পাননি বন্দি সন্ন্যাসী। এই পরিস্থিতিতে ভারতে চিকিৎসা (অস্ত্রোপচারের পর রুটিন চেক-আপ) করাতে আসেন রবীন্দ্রবাবু। উঠেন ব্যারাকপুরে ছেলে রাহুলের বাড়িতে। সে সময় এখানকার সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন,পালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ভারতে আসেননি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পরবর্তী দুই জানুয়ারীর শুনানিতে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের হয়ে চট্টগ্রাম আদালতে সওয়াল করবেন তিনি। রবীন্দ্রবাবু বলেছিলেন ‘আমি মরতে ভয় পাই না। আমি শুধু আইনজীবী নই, এক জন মানবাধিকার কর্মীও।’
এ দিন হাসপাতালে রবীন্দ্রবাবু জানান, তার মূলত তিনটি শারীরিক সমস্যা। হৃদযন্ত্রের সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে প্রস্রাবের সমস্যা। এছাড়া, পুরানো অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত কিছু সমস্যাও রয়েছে। রবীন্দ্রবাবু জানান, আজই বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার পক্ষে দেশে ফেরা হয়তো সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি বলেন, ‘মামলা নিয়ে চিন্তায় আছি। কাল সকালের মধ্যে দেশে ফিরতে পারব কিনা, নিশ্চিত নই। তবে আমি ২০ জন আইনজীবী দিয়েছি। কাল চট্টগ্রাম আদালতে প্রভুর জামিন চেয়ে সওয়াল করবেন পঁচিশজন আইনজীবী।পরেনো জন ঢাকার,দশ জন চট্টগ্রামের।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *