September 17, 2025

চক্রব্যূহ, পদ্মব্যূহ ও রাহুল!!

 চক্রব্যূহ, পদ্মব্যূহ ও রাহুল!!

৪ঠা জুনের পর থেকে এ যেন এক অন্য রাহুল।যে রাহুল গান্ধীকে দশ ‘বছর ধরে মিডিয়ার এক বৃহৎ অংশ শাসকের খপ্পরে পড়ে ‘পাপ্পু’ বানিয়ে রেখেছিলো, সেই রাহুল গান্ধী কিনা এখন শাসক বিজেপির প্রধান মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।সংসদের প্রথম অধিবেশনে সদস্যদের শপথ গ্রহণ শেষে বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হয়ে তার প্রথম ভাষণেই বাজিমাত করেছিলেন রাহুল গান্ধী। রাহুলকে থামাতে ৭ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উঠে দাঁড়াতে হয়েছিল।প্রধানমন্ত্রী সমেত, বিজেপির ‘মেকি হিন্দুত্ব’ নিয়ে সরব হয়েই প্রথম ইনিংসে শুরু করেছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা।সোমবার বাজেটের উপর আলোচনায় রাহুলের দ্বিতীয় সংস্করণ দেখলো দেশ।যদিও সোমবার যখন রাহুল গান্ধী বাজেটের উপর বক্তৃতা করছিলেন সেসময় সভায় ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছিলেন না গৃহমন্ত্রী অমিত শাহও।ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন প্রমুখ।সোমবার তার বাজেট ভাষণে এক অদ্ভুত জিনিস আবিষ্কার করেছেন রাহুল গান্ধী।রাহুল উদ্ধৃতি দিয়েছেন মহাভারতের।অভিমন্যু যেভাবে চক্রব্যূহতে ফেঁসেছিলেন এবং সেখান থেকে আর বের হতে পারেননি তেমনি বিজেপি আমলে দেশে এমন চক্রব্যূহ রচনা করা হচ্ছে তাতে দেশের বেকার, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সবাই ফেঁসে আছেন।বাজেট ভাষণে চক্রব্যূহর প্রসঙ্গে টেনে আনেন রাহুল।রাহুল বলেছেন, দেশে বাজেটে এমন ট্যাক্স ব্যবস্থা চাপানো হয়েছে সেখানে মধ্যবিত্তের বুকে একটি ছুরি মারা হয়েছে,অন্যদিকে পিঠেও ছুরি মারা হয়েছে। আর মধ্যবিত্তের উপর চক্রব্যূহ রচনাকারী হলেন ছয় ব্যক্তি। এরা কারা?এরা হলেন মোদি, অমিত শাহ, অজিত দোভাল, মোহন ভাগবত,আদানি, আম্বানি।
যথারীতি আদানি আম্বানির কথা বলতেই স্পীকার তাকে বাধা দেন।এরপর রাহুল বলেন,আনি তো ওদের নাম যেনতেন প্রকারেণ বলবই। তাহলে ৩,৪বলি,বা পরে রাহুল বলতে থাকেন ‘এ-১, এ-২ এই বিশেষণে।
এবারের বাজেটের উপর আলোচনায় রাহুলের বিশ্লেষণ এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। এ নিয়ে ট্রেজারি,বিরোধী বেঞ্চে হৈচৈ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রাহুলের ক্ষুরধার ভাষণের জুতসই জবাব ট্রেজারি বেঞ্চের কেউই দিতে পারেননি।বাজেট নিয়ে আলোচনার সময় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন একসময় হাসছিলেন।রাহুল বলেন,এটা কি হাসির কথা।তেমনি অগ্নিবীর নিয়েও খোঁচা দেন রাহুল গান্ধী।জবাব দিতে উঠে দাঁড়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেননি।
রাহুলের প্রতিটি বল ট্রেজারি বেঞ্চ নয়,যেন খেলছিলেন স্পীকার স্বয়ং।যদিও স্পীকার বারবার তাকে তার পদের কথা, মান মর্যাদার কথা মনে করিয়ে দিয়ে নানা কায়দায় রাহুলকে দমানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাহুল গান্ধী দমে যাননি।
সবচেয়ে মজার কথা হল, অভিমন্যু যেমন চক্রব্যূহ ভেদ করতে পারেননি, মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল তাকে, রাহুল বলেছেন, ইন্ডিয়া জোট বিজেপির এই চক্রব্যূহ ভেদ করবে।যতই চক্রব্যূহ রচনা করা হবে চক্রব্যূহ ততই ভেদ করবে ইন্ডিয়া।
শুধু তাই নয়, সংসদ চত্বরে মিডিয়াকে যেভাবে পিঞ্জরাতে বন্ধ করা হয়েছে এরও উল্লেখ করেছেন রাহুল গান্ধী। সংসদে মিডিয়ায় গতিবিধি সোমবার থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।মিডিয়ার জন্য একটি কাঁচের ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে।এর বাইরে মিডিয়ার লোকজন সংসদ চত্বরে ঘোরাফেরা করতে পারবেন না।রাহুল সোমবার বাজেটের উপর বক্তৃতার একেবারে শেষলগ্নে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন,’বেচারা মিডিয়া’। স্পীকার আপত্তি জানিয়ে বলেন এরা বেচারা নন।রাহুল কথা ফিরিয়ে নিয়ে বলেন তাহলে তারা ‘নন্ বেচারা’।
পরে সংসদ চত্বরে মিডিয়ার ক্যাম্পেও যান রাহুল গান্ধী। রাহুল সেখানে গিয়ে বলেন, এতদিন আমাদের ‘পিঞ্জরা’য় বন্ধ করা হতো।এবার আপনাদের ‘পিঞ্জরা’য় বন্ধ করা হয়েছে।
সোমবার রাহুলের বাজেট ভাষণ ঘিরে ব্যাপক চর্চা হয়েছে দেশজুড়ে।
বিশেষ করে রাহুল বাজেট ভাষণে যেভাবে চক্রব্যূহ এবং পরে পদ্মব্যূহের কথার উল্লেখ করেছেন তা এক কথায় নজিরবিহীন।এর মাধ্যমে রাহুল গান্ধী মোদি-শাহকে যেমনি বিঁধেছেন তেমনি বিধেছেন আরএসএসকে। বিঁধেছেন মোদির আমলাতন্ত্রকে, বিঁধেছেন দেশের ২ বিলিয়নিয়ার ২’এ’ কে।শুধু তাই নয়,কটাক্ষ করেছেন বাজেট তৈরির সময় হালুয়া খাওয়ার সংস্কৃতিতেও। এর ছবি দেখিয়ে ওবিসি, এসসি,এসটিদের প্রতি বঞ্চনার ছবি আনার চেষ্টা করেছেন রাহুল গান্ধী।
অর্থাৎ বাজেটকে উপলক্ষ্য করে রাহুল গান্ধী তার চিরাচরিত ভঙ্গিতে মোদি শাহ থেকে শুরু করে আদানি আম্বানিকে বিঁধেছেন।একে মোকাবিলা করতে এবারও ব্যর্থ হয়েছে ট্রেজারি বেঞ্চ। রাহুল যত আক্রমণাত্মক হচ্ছেন ততই ম্রিয়মাণ দেখাচ্ছে শাসক শিবিরকে। রাহুলকে যতটা আগ্রাসী দেখাচ্ছে ততই রক্ষণাত্মক বিজেপি শিবির।উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে বিজেপির পরিত্রাতা হচ্ছে না শরিকরা।
রাহুলের এই নয়া চেহারা নিয়ে এখন তথাকথিত ‘গোদি মিডিয়া’ও এখন বেজায় আগ্রহী।দশ বছর পর দেশ বিরোধী দলনেতা পেয়ে গণতন্ত্র যেন এখন হাসছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *