September 16, 2025

হিন্দি সাহিত্যে প্রথম আন্তর্জাতিক বুকার

 হিন্দি সাহিত্যে প্রথম আন্তর্জাতিক বুকার

‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মোটামুটি সেই শেষ। তারপর ভারতীয় কোনও সাহিত্য-কীর্তি বিশ্বদরদার থেকে পুরস্কার জয় করে আনতে পারেনি। অরুন্ধুতি রায় বুকার প্রাইজ পেয়েছেন, পেয়েছেন ঝুম্পা লাহিড়ি। তবে ওই দুই বাঙালি কন্যার ইংরেজীতে লেখা সাহত্যকে পুরস্কার করেছিলেন বুকার কর্তৃপক্ষ। আর এক বঙ্গ সন্তান অমিতাভ ঘোষও আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কৃত হয়েছেন। তবে সেটিও তার ইংরেজিতে লেখা উপন্যাসের জন্য।
‘গীতাঞ্জলি’র পর এই প্রথম ভারতীয় ভাষায় লেখা সাহিত্য জয় করে আনল আন্তর্জাতিক পুরস্কার। সেটি পেয়েছেন হিন্দি সাহিত্যের স্বনামধন্য লেখিকা গীতাঞ্জলি শ্রী। কী আশ্চর্য সমাপতন! গীতাঞ্জলি প্রথম হিন্দি সাহিত্যিক, যার রচনা আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারে সম্মানিত হল। গীতাঞ্জলির সঙ্গে তার হিন্দিতে লেখা উপন্যাস যিনি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন তিনিও যুগ্মভাবে বুকার পেয়েছেন। ওই মার্কিন অনুবাদকের নাম ডেইজি রকওয়েল। গীতাঞ্জলি শ্রী’র উপন্যাসকে কেন পুরস্কৃত করা হল যুক্তি দিতে গিয়ে বুকার কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ‘লেখাটির উচ্চস্বর এবং এটি অপ্রতিরোধ্য উপন্যাস।’

আক্ষরিক অর্থেই ইতিহাস রচনা করলেন গীতাঞ্জলি শ্রী। অনুবাদক ডেইজির সঙ্গে যুগ্মভাবে ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ভারতীয় ভাষায় লেখা তিনিও প্রথম সাহিত্যিক যার রচনা আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পেল। ৬৪ বছরের গীতাঞ্জলির হাত দিয়েই হিন্দি সাহিত্য বিশ্বের দরবারে ভাস্বর হয়ে উঠল।
হিন্দিতে লেখা যে উপন্যাসটির জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন গীতাঞ্জলি সেটির নাম ‘রেত সমাধি’। ‘রেত’ শব্দটি উর্দু। যার অর্থ হল মরুভুমি। এই উপন্যাসের জন্যই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় লেখিকার হাতে তুলে দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার। মানপত্র, স্মারকের পাশাপাশি ৫০ হাজার পাউন্ড ( প্রায়ন ৪৯ লক্ষ টাকা) অর্থ পেয়েছেন তিনি। ডেইজি রকওয়েলের অনুদিত বইটির নাম ‘টুম্ব অফ স্যান্ড’। ডেইজি এবং গীতাঞ্জলি পুরস্কারের অরথ-মূল্য ভাগ করে নিয়েছেন।
উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরীতে জন্ম গীতাঞ্জলির। পরে দিল্লিতে থিতু হন তিনি। বর্তমানেও তিনি দিল্লির বাসিন্দা। গল্পের জন্যই এতদিন হিন্দি সাহিত্য জগতে চর্চিত ছিলেন তিনি। ছোট গল্পের একাধিক সঙ্কলন রয়েছে তার। উপন্যাস রয়েছে মোট তিনটি। ‘রেত সমাধি’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রটি একজন ৮০ বছর বয়স্ক স্বামীহারা বৃদ্ধার। এটি মূলত পারিবারিক কাহিনি। যিনি উত্তর ভারতের বাসিন্দা। বুকার কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে বলেছেন, গীতাঞ্জলির লেখার বুনোট এতই জমজমাট যে একবার পড়া শুরু করলে, শেষ না করে ওঠা কার্যত অসম্ভব। লন্ডনে পুরস্কার গ্রহণ করে গীতাঞ্জলি বলেন ‘আমি অভিভূত! এত বড় পুরস্কার পাব, কখনও কল্পনা করিনি। গীতাঞ্জলির ‘রেত সমাধির’ সঙ্গে আরও পাঁচটি উপন্যাস মূল পর্বে মনোনীত হয়েছিল। কিন্তু সবাইকে টপকে ভারতীয় সাহিত্যের জগতে ইতিহাস গড়ে দিল গীতাঞ্জলির বই। ‘টুম্ব অফ স্যান্ড’ গীতাঞ্জলির প্রথম উপন্যাস গ্রন্থ যা গ্রেট ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত হয়। তার ‘রেত সমাধি’ শুধু ইংরেজীতেই নয়, একাধারে অনূদিত হয়েছে ফ্রেঞ্চ, জার্মান, সার্বিয়ান ও কোরিয়ান ভাষায়। ‘ভিভাদি’ নামে একটি থিয়েটার গ্রুপের সক্রিয় সদস্যা তিনি। সেই দলে নাটকের পাশাপাশি কবি-লেখক, শিল্পী, নৃত্যশিল্পীরাও রয়েছেন। বুকার পুরস্কারের আগে গীতাঞ্জলি শ্রী কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। পুরস্কার পেয়েছিলেন ইন্দো-জাপান ফাউন্ডেশন থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *