August 2, 2025

চাইনিজ কালচার !

 চাইনিজ কালচার !

কথায় আছে ‘সুখে থাকতে ভূতে কিলায়’। এটি একটি অতি প্রচলিত প্রবাদ বাক্য। এই প্রবাদের মূল অর্থ হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে দুঃখ ডেকে আনা। বিপদ হবে জেনেও বিপদকে ডেকে আনা। নিজে থেকেই সমস্যা তৈরি করা। আরও নানাভাবে এই প্রবাদ বাক্যটির ব্যাখ্যা করা যায়।ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিনের অবস্থা অনেকটা ওই বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্যটির মতোই।কিছু কিছু মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মতো কিছু কিছু দেশের বিদেশ নীতিতেও ওই বহুল প্রচলিত প্রবাদের অন্তর্নিহিত অর্থের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেমনটা চিনের রয়েছে।এই ক্ষেত্রে আরও একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্যের উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন সারমেয়র লেজ কখনও সোজা হয় না।’ চিনের এই বৈদেশিক ফর্মুলা এবং নীতি নতুন নয়। বরং এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য বলা যায়। সেই নীতিকে সামনে রেখে ফের একবার নিজেদের চরিত্রের
জানান দিলো চিন। গত ২ এপ্রিল ভারতের অরুণাচল প্রদেশের
এগারোটি জায়গার নাম পরিবর্তন করে একটি বিবৃতি জারি করেছে চিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।এই একই ফর্মুলায় চিন অতীতেও বেশ কয়েকবার সক্রিয়তা দেখিয়েছে।নিজেদের দেশের মানচিত্রে নাম বদলের অজুহাতে ভারতের ভূখণ্ডকে নিজেদের দেশভুক্ত বলে দাবি করা। ২০১৭ সালে অরুণাচলের ৬টি স্থানের নাম বদলে দিয়েছিল। ২০২১ সালে ১৫টি স্থানের নাম বদল ঘটিয়েছিল চিন সরকার। এবার অরুণাচলের ১১টি স্থানের নাম বদল করে নিজেদের বলে দাবি করেছে চিন। প্রকৃতপক্ষে এই সবগুলি জায়গায়ই অরুণাচল প্রদেশের ভারত ভূখণ্ড এবং ভারতের দখলেই আছে।চিনের এই কাণ্ডকীর্তি দেখে ভারতের বিদেশমন্ত্রক সাথে সাথেই এর
তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। চিনকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করে বলা হয়েছে, নামকরণ করলেই সবকিছু পাল্টে যাবে না। ভারতের সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ চিরকাল ছিল, আছে এবং থাকবে। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, চিনের এই বিবৃতি জারি করার আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যেই এই ইস্যুতে ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে চিনকে কড়া বার্তা দিলো আমেরিকা। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মার্কিন বিদেশমন্ত্রক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জাঁ-পিয়ের সাংবাদিক সম্মেলন করে চিনের নিন্দা করেন। তিনি চিনের মন্ত্রিসভা স্টেট কাউন্সিল ও সিভিল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রকের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় কড়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন আগেই অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সেখানে বিভিন্ন এলাকার এক তরফা চিনা নামকরণ কখনই বরদাস্ত করবে না আমেরিকা।’উল্লেখ্য, অরুণাচলের অধিকার নিয়ে ভারত আর চিনের বিবাদ নতুন নয়। ১৯৫০ সালে তিবৃত চিনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরই চিন অরুণাচল প্রদেশকে তিব্বতের দক্ষিণ অংশ হিসাবে দাবি করতে শুরু করে। অরুণাচলের নামও দেয় ঝাঙ্গনান। ১৯৫৪ সালে ভারত ও চিনের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া পঞ্চশীল চুক্তিকে অগ্রাহ্য করে ১৯৬২-র যুদ্ধে অরুণাচল প্রদেশ বা তৎকালীন নেফার (নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স) বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল লালফৌজ। সেই ইতিহাস সকলের জানা। তারপরেও বিবাদ থামেনি। মাঝেমাঝেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে সীমান্ত। দফায় দফায় সংঘাতেও জড়িয়েছে দুই দেশের সেনাবাহিনী। কিন্তু চিন থামছে কই? খুব ভালো করেই চিন জানে, ভারত এখন কোথায় দাঁড়িয়ে। তাই বার বারই চরিত্রের জানান দিচ্ছে। সাধে কি আর বলে কয়লা শতবার ধুলেও ময়লা যায় না”। এটাই হয়তো ‘চাইনিজ কালচার’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *