August 3, 2025

চাই সমন্বিত উদ্যোগ!

 চাই সমন্বিত উদ্যোগ!

গোটা বিশ্বজুড়েই প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক ক্ষেত্রে ডিজিটাল লেনদেন যেভাবে বেড়েছে, তাতে আর্থিক ব্যবস্থায় সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়ছে। কিন্তু সম্প্রতি দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভারতে সম্ভাব্য সাইবার হামলা নিয়ে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের। চলতি বছরই সেপ্টেম্বর ৯ এবং ১০ তারিখ নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জি – ২০’র শীর্ষ সম্মেলন। তার আগে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সাইবার ও তথ্য নিরাপত্তা বিভাগ সহ দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে। আসলে ভারতে গত কয়েক বছরে কোভিড পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল লেনদেন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

কিন্তু ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে দেশে কার্যত বিপ্লব ঘটে গেলেও এদেশের ডিজিটাল নেটওয়ার্ক একশ শতাংশ এখনও সুরক্ষিত হতে পারেনি। মূলতঃ এদেশে তৃণমূল স্তরে পরিকাঠামো এবং বিশেষজ্ঞ কর্মীদের অভাবে ক্রিটিকাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করা এখনও সম্ভব হয়নি। আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই বিভিন্ন স্তরে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটছে এবং যার সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গি, অপরাধী এবং আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত কিছু সংস্থা। দিল্লীতে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্মীদের সম্মেলনে ভারতে সম্ভাব্য সাইবার হামলার আশঙ্কার পাশাপাশি যে উদ্বেগের কথা শোনা গেছে তা হলো – আগামী দিনে সাইবার দুর্নীতি, বাদবাকি সব দুর্নীতিকে ছাপিয়ে যাওয়ার কথা।

সম্মেলনে বলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা যেমন সাইবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তার চেয়েও বড় উদ্বেগের কথা হলো সাইবার হানার কারণে দেশের সুরক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিপদের মধ্যে পড়েছে। এই সংকট থেকে বেড়িয়ে আসতে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ‘এণ্ড টু এণ্ড’ নিরাপত্তার পক্ষে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের পাশাপাশি বেসরকারী সাইবার বিশেষজ্ঞদের সহায়তা ও পরামর্শ গ্রহণের কথা বৈঠকে আলোচিত হয়েছে।বাস্তব পরিস্থিতি হলো, সাইবার হামলা হতে পারে বা কখন হবে এই ধরনের আলোচনা এখন আর নেই।

বরং সাইবার হামলার কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে এটাই বর্তমান সময়ের কঠিন বাস্তব। সাইবার হামলার মাধ্যমে কেবল অর্থ চুরির ঘটনাই ঘটছে এমনা কিছু নয়। বরং তথ্য চুরি হচ্ছে, গুপ্তচর বৃত্তির মতো ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো আর্থিক ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলাকে নষ্ট করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে চলে এসেছে হ্যাকাররা। সাধারণ অবস্থাতেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি বা সাইবার চুরির ঝুঁকি থাকে। কিন্তু করোনার সময় থেকে গোটা বিশ্বে এবং ভারতে অনলাইন লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে গেছে। আগে সাধারণ মানুষ কিংবা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে লেনদেন করেনি।

পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় সেটা চালু হওয়ায় অনলাইনে আসা এই নবাগতরা হ্যাকারদের জন্য সহজ শিকার। আরেকটা উদ্বেগের হলো সাইবার হামলা প্রতিরোধে বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান কিংবা ছোট ছোট দেশ নিজ নিজ নিরাপত্তা বিধান করছে ঠিকই। কিন্তু ঝুঁকির তুলনায় সেটা যথেষ্ট হচ্ছে না। আর এতে করেই একবার অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর আবারও হামলার চেষ্টার ঘটনা ঘটছে। এই সংকট থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি জরুরি তা হলো, বিভিন্ন দেশের সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে একজোট হয়ে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

দরকার এই ঝুঁকি রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব নির্ধারণ করা। ‘গ্রুপ অব ২০’ হলো বিশ্বের প্রধান উন্নত ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম। এ বছর ভারত এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে। স্বাভাবিক কারণেই সেপ্টেম্বরে জি-২০ শীর্ষ বৈঠক আয়োজনের আগে হ্যাকাররা কি ধরনের সাইবার হানা চালাতে পারে, তার জন্য এখন থেকেই সব ধরনের পরিস্থিতি ও প্রতিরোধাত্মক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় সেটাই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের লক্ষ্য। সম্মেলনে যেই উৎকণ্ঠার পাশাপাশি স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে যে প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে তা যেন ১০০ শতাংশ ফুল প্রুফ হয় সেটা নিশ্চিত করাই এখন চ্যালেঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *