August 4, 2025

আশৈশব দৃষ্টিহীন, তবু অনায়াস দক্ষতায় মোটর সারান চিন্তম

 আশৈশব দৃষ্টিহীন, তবু অনায়াস দক্ষতায় মোটর সারান চিন্তম

কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘অন্ধজনে দেহ আলো,
মৃতজনে দেহ প্রাণ— তুমি করুণামৃত সিন্ধু করো করুণাকণা দান।’ কিন্তু কে দেবে আলো, কে দেবে প্রাণ? প্রশ্নটা সহজ হলেও উত্তর অজানা। তবে কিছুমানুষ আছেন যারা অন্যের সাহায্যের তোয়াক্কা করেন না। নিজের জীবনের শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নিজের জীবনকে টেনে নিয়ে যান। তেমনই একজন মানুষ তেলাঙ্গানার হনুমানকোন্ডা জেলার
বাসিন্দা ৬২ বছরের চিন্তম রাজু। জন্মের সময় চোখের জ্যোতি নিয়েই জন্মেছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছর বয়সে উপর থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক জখম হন। প্রাণে বেঁচে গেলেও দুই
চোখে চির জীবনের জন্য নেমে আসে অন্ধকার। চিকিৎসকদের ভাষায়, চিন্তম রাজু ১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীন। তবু প্রতিবন্ধকতার কাছে মাথা নত করেননি তিনি। হনুমানকোন্ডায় লোকে তাকে ডাকে ‘ওয়ান্ডার ম্যান’ বলে। বিস্ময়ই বটে! চোখে দৃষ্টি নেই, শরীরও তেমন শক্তপোক্ত নয়। তাই নিয়েই
তিনি এলাকার নামী মোটর মিস্ত্রি। শুধু স্পর্শের অনুভবে বিকল মোটর সচল করে দেন চিন্তম। সাধারণ মোটর কোন ছাড়, কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত বড় মোটরও মেরামত করেন অনায়াস দক্ষতায়। স্থানীয় সংবাদপত্রে তিনি বলেছেন, ‘অন্ধত্বকে আমি কখনও আমার জীবনের অক্ষমতা হিসাবে
ভাবিনি। বরং প্রতিবন্ধকতাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করেছিলাম। একটা সময় দেখলাম, অন্ধত্বই আমার সয়ে গেছে।’ তার কথায়, ‘আমি দৃষ্টিশক্তি হারাই ৫ বছর বয়সে। কিন্তু তার পরেও আমার জীবনে যা পড়ে
থাকে তা হল অসীম সাহস আর অদম্য আত্মবিশ্বাস। চোখ নেই বলে কারও উপর নির্ভরশীল থাকা আমার পছন্দ নয়।’ তিনি অকৃতদার। একলা মানুষ। কারও উপর নির্ভরশীল নন, তার উপরেও কেউ নির্ভরশীল নয়। চিন্তমের অভিজ্ঞানে ‘হবে না’ বলে কোনও শব্দ নেই। নিজের দৈনন্দিন সব কাজ তিনি নিজে করেন। মোটর মেরামত তো আছেই, তার বাইরে বাড়ির যাবতীয় কাজ। ইচ্ছা হলেই নেমে যান পুকুরে। মন ভাল থাকলে থালা বাজিয়ে, গলা খুলে গান করেন। আর পাঁচটা বাড়ির মতো তার বাড়িতেও টিভি আছে। দেখার ক্ষমতা নেই, তবু টিভি ‘শোনেন’। ঘরে আছে থিয়েটারও। রেডিও তার সর্বক্ষণের সঙ্গী। নাগার্জুনে র সিনেমা তার খুব পছন্দের। পর্দার নায়ককে চোখে না
দেখলে কী হবে, নার্গাজুনের ছবির সংলাপ বলতে পারেন। তিনি জানান, বাবা-মায়ের মৃত্যু র পর গত ৩০ বছর ধরে এভাবেই কাটছে জীবন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *