৬০ জন সহযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন কিষেণজির ভাই বেণুগোপাল!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মহারাষ্ট্রের গড়ছিরৌলিতে সোমবার গভীর রাতে ঘটে গেল এক ঐতিহাসিক ঘটনা। নিহত মাওবাদী নেতা কিষেণজির ভাই, মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে সোনু, ৬০ জন মাওবাদী সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-এর পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি।
এর আগেই, গত সেপ্টেম্বর মাসে বেণুগোপাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আত্মসমর্পণের। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, “দলকে টিকিয়ে রাখতে এখন সশস্ত্র সংগ্রাম থামানোর সময় এসেছে।” সেই সময় থেকেই জল্পনা চলছিল— কবে অস্ত্র নামাবেন এই বর্ষীয়ান নেতা। অবশেষে সেই জল্পনাই সত্যি হলো।
বেণুগোপালের জীবনের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৮০-এর দশকে, পিপলস ওয়ার গ্রুপে যোগদানের মধ্য দিয়ে। ২০১০ সালে তিনি সিপিআই (মাওবাদী)-এর মুখপাত্র হন। লালগড় আন্দোলনের সময় কিষেণজির মৃত্যুর পর অভিযান পরিচালনার দায়িত্বও তিনিই নেন। দলের ভাবাদর্শ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখযোগ্যভাবে, চলতি বছরের শুরুতেই তাঁর স্ত্রী বিমলা চন্দ সিদাম ওরফে তারাক্কাও আত্মসমর্পণ করেন। বিমলা ছিলেন পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মির (পিএলজিএ) কমান্ডার এবং দণ্ডকারণ্য জ়োনাল কমিটির নেত্রী। স্ত্রীর আত্মসমর্পণের প্রায় ১০ মাস পর বেণুগোপালও অস্ত্র নামালেন।
বেণুগোপালের আত্মসমর্পণের বার্তা প্রকাশ্যে আসতেই মাওবাদী সংগঠনের ভিতরে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। কেউ তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বললেও, দেশের নানা প্রান্তে, বিশেষ করে ছত্তীসগঢ় ও মহারাষ্ট্রে, অনেক ক্যাডার তাঁর অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। ফলে এই পদক্ষেপ মাওবাদী সংগঠনের ভিতরে গভীর আদর্শিক বিভাজন তৈরি করেছে।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন যে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে দেশকে ‘মাওবাদী মুক্ত’ করা হবে। সেই লক্ষ্যে ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে যৌথ বাহিনীর তীব্র অভিযান। ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছেন মাওবাদীদের সাধারণ সম্পাদক বাসবরাজ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিবেক-সহ একাধিক শীর্ষ নেতা।
যদিও এখনও ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুর অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে কিছু মাওবাদী দল। সোমবারই বিজাপুরে মাওবাদীদের হাতে খুন হয়েছেন বিজেপি কর্মী সত্যম পুনম। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া হাতে লেখা পোস্টারে লেখা ছিল— পুলিশের হয়ে চরবৃত্তি করার ‘শাস্তি’ হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
বেণুগোপালের আত্মসমর্পণ নিঃসন্দেহে ভারতের মাওবাদী আন্দোলনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় হয়ে থাকবে— যা একদিকে সরকারের অভিযানকে শক্তিশালী করল, অন্যদিকে মাওবাদী সংগঠনের ভিতরে অনিশ্চয়তা ও দিশাহীনতার ইঙ্গিতও স্পষ্ট করে দিল।