November 14, 2025

১৫-অর্থ কমিশন শেষলগ্নে সতর্ক পথে কাজ দপ্তরগুলোতে!!

 ১৫-অর্থ কমিশন শেষলগ্নে সতর্ক পথে কাজ দপ্তরগুলোতে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদ শেষের পথে। আগামী ৩১ মার্চ ২০২৬ তার মধ্যেই কেন্দ্রীয় কর-বন্টন ও বিভিন্ন খাতভিত্তিক অনুদানের পুরনো কাঠামো কার্যত শেষ হবে। এতে ত্রিপুরার বিভিন্ন দপ্তরে আর্থিক প্রবাহে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা এখন পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠছে বলে সূত্রের খবর। রাজ্যের পূর্ত, গ্রামোন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুলিশ, পানীয় জল, জলসম্পদ প্রায় সব দপ্তরেই অর্থের টানাটানি স্পষ্ট। তবে চ্যালেঞ্জের মধ্যেই আগামী অর্থবর্ষে ষোড়শ অর্থ কমিশন কার্যকর হলে নতুন করে অর্থের প্রবাহ বাড়বে বলে আশা দেখছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা।
রাজ্যের উন্নয়নমূলক কাজে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে পূর্ত দপ্তরে (রোডস অ্যান্ড ব্রিজেস)।জানা গেছে, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছানোয় নতুন প্রকল্প অনুমোদন ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।চলমান প্রকল্পগুলিও ব্যয়ের দিক থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনীয়ার রাজীব মজুমদার সম্প্রতি রাজ্যের প্রতিটি জেলায় পর্যালোচনা বৈঠক করছেন। তিনি সড়ক উন্নয়ন, ব্রিজ সংস্কার, নতুন নির্মাণকাজের অগ্রগতি এবং প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের চাহিদা এগজিকিউটিভইঞ্জিনীয়ার ও সুপারিন্টেন্ড ইঞ্জিনীয়ারদের কাছ থেকে সরাসরি জেনে নিয়েছেন। সূত্রের খবর, এখনও অনেক রাস্তা, সেতু, ড্রেন, সরকারী পাকা বাড়ি প্রকল্পে আর্থিক ঘাটতির জন্য ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
এদিকে, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের পরিস্থিতিও তেমন স্বস্তিদায়ক নয়। পঞ্চায়েতস্তরে পানীয় জল সরবরাহ, স্যানিটেশন, রাস্তা সংস্কার এবং এমজিএন রেগা সব ক্ষেত্রেই অর্থ কমিশনের অনুদানের উপর নির্ভরতা বেশি।স্থানীয় প্রশাসনিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চায়েতমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের বিল পরিশোধে বিলম্ব স্পষ্ট হচ্ছে। গ্রামীণ মানুষের জন্য পিএম আবাস যোজনায় নতুন করে গৃহ নির্মাণে বরাদ্দ থমকে রয়েছে। দপ্তরের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, বর্তমানে শুধু জরুরি প্রকল্পগুলিকেই অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থ ছাড়া হচ্ছে। নতুন কাজ শুরু করতে হলে ষোড়শ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
শিক্ষা দপ্তরেও আর্থিক চাপ রয়েছে। নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, পুরনো ভবনের মেরামত, স্মার্ট ক্লাসরুম, সম্প্রসারণ এসবের অনেকগুলিই অর্থ কমিশনের অনুদানের উপর নির্ভরশীল। দপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, পরিকাঠামোগত উন্নয়নের গতি আপাতত মন্থর। তবে শিক্ষাসেবায় স্কুল গ্র্যান্ট, মিড ডে মিল অথবা শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থামেনি।

স্বাস্থ্য দপ্তরে পরিস্থিতি আরও সূক্ষ্ম। জেলার হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়লেও নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ সবকিছুই অর্থের জন্য আগামী অর্থ কমিশনের অপেক্ষায়। স্বাস্থ্যসেবার জরুরি খরচ কেন্দ্রীয় বিভিন্ন স্কিম থেকে মিললেও হাসপাতাল পরিরকাঠামো উন্নয়নে তহবিলের টান স্পষ্ট। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ফান্ড লেভেল খুব নিচে। অত্যাবশ্যকীয় কাজ ছাড়া নতুন কিছু পুরোদমে শুরু হবে আগামী এপ্রিলের পর।পুলিশ দপ্তরে যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ, থানার ভবন সংস্কার, সিসিটিভি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ইত্যাদি আপাতত না করলে না হয়। ফলে কিছু প্রস্তাবিত প্রকল্প এখনই শুরু হচ্ছে না। তবে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আপৎকালীন খাতে অর্থ ছাড়া অব্যাহত রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।পানীয় জল দপ্তর ও জল সম্পদ দপ্তর দুটিতেই একই চিত্র। নতুন বরাদ্দ এলেই কাজ জোরদার করা হবে। এখন ফান্ড সীমিত হওয়ায় অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজগুলি করা হচ্ছে।প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ শেষ পর্যায়ে থাকার কারণে আর্থিক প্রবাহে ভাটা দেখা গেলেও পরিস্থিতি স্থায়ী নয়। কেন্দ্রীয়ভাবে ষোড়শ অর্থ কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার কথা আগামী এপ্রিল থেকে। নতুন কমিশনের প্রস্তাবে রাজ্যভিত্তিক কর বন্টনের হার, স্বাস্থ্যশিক্ষা উন্নয়ন অনুদান, দুর্যোগ তহবিল এবং স্থানীয় দপ্তরগুলির জন্য আনটায়েড গ্র্যান্ট সবই নতুন করে নির্ধারিত হবে। রাজ্য প্রশাসনের আশা, এই নতুন কাঠামো কার্যকর হলে ত্রিপুরায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে অর্থের প্রবাহ আবার গতি পাবে।যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সূত্রের মতে, টাকার প্রবাহ স্লো হলেও অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ হচ্ছে। উন্নয়ন থেমে নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *