১ম মামলায় শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড দিলো ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই প্রথম শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক মামলায় ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিলো ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ করা হয়েছে যে, এ মামলার বিরুদ্ধে আইনজীবীর যুক্তিতর্ক উপেক্ষা করা হয়েছে। রায়ের পর রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে আমার দ্বিমত রয়েছে। এ সাজার রায়ে আমি সন্তুষ্ট নই। সাজার রায় দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এগারো মাস আগে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের পর এই প্রথম কেনো মামলায় শেখ হাসিনার সাজা হল। একই মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন) নেতা শাকিল আকন্দ
বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমকে দেওয়া হয়েছে দুই মাসের কারাদণ্ড। সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের কথিত টেলিফোন আলাপের একটি অডিও
টেপ ভাইরাল হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার এই মামলা হয়। ওই অডিও টেপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।’ পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথোপকথনের ফরেন্সিক পরীক্ষা করে ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা জানায়। এই প্রেক্ষাপটে গত ৩০ এপ্রিল শেখ হাসিনা ও শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর। সেদিন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে ১৫ মের মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারা জবাব দাখিল না করায় ২৫ মে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত হননি কিংবা কোনও আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেননি। এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারে। আইন অনুযায়ী, এ ধরনের মামলায় কোনো পক্ষের জন্য সরকারী খরচে আইনজীবী নিয়োগের বিধান না থাকলেও ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে’ শেখ হাসিনার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয় আদালত। এ মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য গত ১৯ জুন এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) দায়িত্ব দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে বুধবার শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত রায় দিলো। রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে আমরা প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আরগুমেন্ট করি এবং অ্যামিকাস কিউরিও আরগুমেন্ট করেন। আমরা আরগুমেন্টে বলেছি, শেখ হাসিনার যে তর্কিত কনভারসেশন, তা পুলিশের সিআইডিকে দিয়ে ফরেনসিক করিয়েছি। তাতে জানা গেছে, এই কনভারসেশন এআই জেনারেটেড নয়, অর্থাৎ এটা শেখ হাসিনা এবং শাকিল আকন্দ বুলবুলের। তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সকলের আরগুমেন্ট শুনে এবং সিআইডির যে ফরেনসিক রিপোর্ট সেটি বিচার বিশ্লেষণ করে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তর্কিত এ কনভারসেশনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদী, সাক্ষী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ যারা এ বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে হত্যা করা এবং তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়াসহ তাদের ‘থ্রেট’ করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এবং ১১-এর ৪ ধারা অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়াকে প্রেজুডিস করার অপরাধ
করেছেন। এ অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনা এবং শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দণ্ডিত করেছেন। যেদিন তারা আত্মসমর্পণ করবেন অথবা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হবেন সেদিন থেকে সাজা কার্যকর হবে।’
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার এ পর্যন্ত তিনটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে চরিশের জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতা বিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। জুলাই-আগষ্টের দমন-পীড়নে ভূমিকার জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকল কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।