November 13, 2025

হিলিয়াম-৩ এর লক্ষ্যে চাঁদের মাটি ছুঁতে বিশ্বজুড়ে ইঁদুর দৌড়!!

 হিলিয়াম-৩ এর লক্ষ্যে চাঁদের মাটি ছুঁতে বিশ্বজুড়ে ইঁদুর দৌড়!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-নাসা আবারও চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চিনও সেখানে সবার আগে পৌঁছাতে চায়। এই দৌড়ের কারণ কেবল চাঁদে উপনিবেশ স্থাপন করা নয়, বরং একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের দখল নেওয়া। চাঁদের রেগোলিথ বা চাঁদের মাটি হিলিয়াম-৩ সমৃদ্ধ। এটি হালকা, অ-তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ। যেহেতু চাঁদে কোনও প্রতিরক্ষামূলক চৌম্বক ক্ষেত্র নেই, সৌর বায়ু কোটি কোটি বছর ধরে চাঁদে সফলভাবে এই উপাদান জমা করেছে। বিজ্ঞানীরা হিলিয়াম-৩ এর একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবহার খুঁজে পেয়েছেন। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার মতে, এই উপাদানটি ফিউশন রিঅ্যাক্টর ব্যবহার করে পরিষ্কার বিদ্যুৎ তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।যার ফলে রিঅ্যাক্টরগুলি বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে মুক্ত হবে।বর্তমান পারমাণবিক বিভাজন প্রযুক্তি তেজস্ক্রিয়।তবে, হিলিয়াম-৩ তেজস্ক্রিয় হবে না এবং বিপজ্জনক বর্জ্য পণ্য তৈরি করবে না। কিন্তু পৃথিবীতে হিলিয়াম-৩- এর অভাব রয়েছে।
এটি ট্রিটিয়ামের ধীর ক্ষয়ের ফলে উৎপাদিত হয়। প্রতি বছর মাত্র কয়েক হাজার লিটার হিলিয়াম উৎপাদিত হয়। তবে, চাঁদকে এই মৌলের ভান্ডার বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা এবং চাঁদের মাটির উপরের স্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আনুমানিক কয়েক লাখ মেট্রিক টন হিলিয়াম রয়েছে বলে ধারণা। কয়েক দশক আগে অ্যাপোলো ভূতাত্ত্বিক হ্যারিসন স্মিথ প্রথম এই ধারণাটি সামনে এনেছিলেন।তাই এখন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, রাশিয়া, ভারত এবং ইউরোপ চাঁদে পা ফেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কারণ যে প্রথমে সেখানে পৌঁছাবে তারই সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে। মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এটি মঙ্গল গ্রহে একটি অভিযান শুরু করতে এবং অবশেষে লাল গ্রহে মানুষ পাঠানোর জন্যও ব্যবহার করা হবে।
যদিও এটি এখনও বাস্তবে পরিণত হয়নি, তবুও নাসা এবং চিন এই দশকের শেষের দিকে চাঁদের খনিজ নিষ্কাশনের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু পৃথিবীতে ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে। জেডএমই সায়েন্স জানিয়েছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে হেলসিঙ্কির ক্রায়োজেনিক্স ফার্ম ব্লুফর্স প্রতি বছর এক হাজার লিটার চাঁদের হিলিয়াম-৩ কেনার জন্য স্টার্টআপ ইন্টারলুনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চুক্তির মূল্য ৩০কোটি মার্কিন ডলার বলে ঘোষণা করেছেন ব্লু অরিজিন প্রজেক্টের ম্যানেজার ওয়েসিস কুরেশি। ব্লু অরিজিনের পাঠানো উপগ্রহ চাঁদের কক্ষপথ থেকে জল বরফ এবং হিলিয়াম-৩ এর মতো বিরল সম্পদের বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করবে।
কিন্তু এখন কোটি টাকার প্রশ্ন এই দৌড়ে কে জিতবে? নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শন ডাফি কয়েক সপ্তাহ আগে বলেছিলেন যে চিনের সেখানে ‘আগে পৌঁছনোর কোনও সম্ভাবনা নেই। এদিকে, বেজিং আগামী বছরেই চাঁদে মানুষ অবতরণ করতে এবং দক্ষিণ মেরু অন্বেষণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দক্ষিণ মেরুতে জলের বরফ রয়েছে বলে মনে করা হয়। সেখানে প্রথমে যেই পৌঁছাক না কেন, একমাত্র চ্যালেঞ্জ হল হিলিয়াম-৩ ফিউশন। উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেরাল্ড কুলসিনস্কি এটি অন্বেষণ করার জন্য একটি ছোটো চুল্লিও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু কেউ এখনও কয়েক মিনিটের বেশি সময় ধরে নীট শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে ফিউশন বিক্রিয়া অর্জন করতে পারেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *