হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার আতঙ্কে জুবুথুবু কাঞ্চনপুর মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা!!
হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার আতঙ্কে জুবুথুবু কাঞ্চনপুর মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিশ্বজিৎ সাহা, কাঞ্চনপুন:-“হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার” অর্থাৎ হিমালয়ান প্রজাতির কালো ভালুকের বিচরনে কাঞ্চনপুর মহকুমার প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়ে সম্প্রতি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে অরণ্যে খাদ্যাভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।
অরণ্য ধ্বংস ও নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভেঙে পড়েছে। ফলে মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভালুকেরা ক্রমশ মানুষের বসতি পাড়ার দিকে চলে আসছে। মহকুমার হেলেনপুর, খেদাছড়া, কালাপানি, থুমছাপাড়া, বৃক্ষতল, লুংগির, থারমা পাড়া, দামদই, সিমলুং, রাইমনি পাড়া, ব্রজকুমার পাড়া ও মধুচন্দ্র পাড়ার মতো এলাকাগুলি এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ক্ষুধার্ত ভালুকেরা ছড়ার জল খেতে আসছে।

বাঁশঝাড়ে করুল খুঁজতে গিয়েই হঠাৎ গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পড়ছে। মানুষের উপস্থিতি টের পেতেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। চলতি বছরেই ইতিমধ্যে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুধু এই মাসেই খেদাছড়া গ্রামে ভালুকের আক্রমণে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় পুরো এলাকা শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে। গ্রামবাসীদের ভয় আরও বেড়ে যায়। জুমিয়ারা জুমে একা কাজ করতে পারছে না।মহিলারা ছড়া থেকে জল আনতে যাচ্ছে দল বেঁধে।রাতে গ্রাম জুড়ে নেমে আসছে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। মানুষ দল বেঁধে চলাফেরা করছে।স্থানীয় জুমিয়ারা অভিযোগ করেছে, ফসল কেটে আনার সময় হঠাৎ ভালুক আক্রমণ করছে। বাঁশঝাড় থেকে করুল তুলতে গিয়েও প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অনেকে ইতিমধ্যেই আহত হয়েছে। গৃহপালিত পশুর উপরও আক্রমণ হচ্ছে নিয়মিত। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি বিপর্যস্ত।উল্লেখ্য হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার প্রজাতির এই ভালুক প্রায়ই দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনপুরের বনাঞ্চলে।
গ্রামের পাশে অরণ্যে যেমন তারা ঘোরাফেরা করছে, তেমনি বসতি পাড়ার ভেতরেও প্রবেশ করছে।
কিন্তু কত সংখ্যক ভালুক আছে তার সঠিক তথ্য বন দপ্তরের কাছে নেই।

দপ্তরের কর্মকর্তারা অনুমান নির্ভর বক্তব্য রাখলেও প্রকৃত তথ্য জানা যাচ্ছে না।ফলে কার্যকর কোনো পরিকল্পনা নেওয়া যাচ্ছে না।গ্রামবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। কোনো প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ নেই। ফলে সাধারণ মানুষ নিজেদের ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, এই বিপদের মূল কারণ অরণ্য ধ্বংস। বন্যপ্রাণীর জন্য বিকল্প খাদ্য সংস্থান তৈরি হয়নি। অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। ফলে গ্রামে ঢুকে পড়ছে ক্ষুধার্ত বন্যপ্রাণীরা। মানুষ আজ সেই অব্যবস্থাপনার খেসারত দিচ্ছেন। এখন সময় হয়েছে প্রশাসন ও বনদপ্তরের জবাবদিহি নিশ্চিত করার।
প্রথমে জরুরি ভিত্তিতে ভালুক গণনা শুরু করা উচিত। গ্রামাঞ্চলে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা জরুরি।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে প্রাণহানি অব্যাহত থাকবে। কাঞ্চনপুর মহকুমার বাস্তবতা হলো— ভালুক আতঙ্ক ও প্রশাসনের অবহেলার দুঃসহ বোঝা। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি মানুষের জীবন প্রতিদিন নতুন করে হুমকির মুখে পড়ছে। যতদিন না কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় ততদিন হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের ভয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনে এক দুঃস্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে।