হিন্দুরাষ্ট্রের পথে এককদম! ‘
পাঁচশ বছর ধরে চলতে থাকা যজ্ঞের আজ সমাপ্তি হলো। মঙ্গলবার অযোধ্যায় রামমন্দিরের ধজ্জারোহন করে এভাবেই মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অযোধ্যার ঐতিহাসিক রামমন্দিরের সর্বোচ্চ চূড়ায় এদিন সগর্বে উড়ল ধর্মধ্বজা। ধ্বজা উত্তোলনের মুহূর্তে দৃশ্যত আবেগপ্লুত দেখালো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। ধ্বজা উত্তোলন করে আবেগপ্লুত প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘শতাব্দী প্রাচীন ক্ষত আজ জুড়ে গেল। বহু শতকের যন্ত্রণার অবসান হলো’।
এদিন বেলা ১১ টা ৫০ মিনিট নাগাদ শুরু হয় ধ্বজারোহণের অনুষ্ঠান।নীচ থেকে ধীরে ধীরে উঠে যায় ন্যায়ের প্রতীক এই ধ্বজা। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া জুড়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি হাতজোড় করে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। তখন প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত, রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত প্রমুখ। ধ্বজা উত্তোলন শেষে মোদি, যোগী, ভাগবত প্রত্যেকেই ফুল অর্পণ করেন। পরবর্তী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘পাঁচশ বছর ধরে জ্বলতে থাকা যজ্ঞের আজ সমাপ্তি হলো। আজ সমগ্র ভারত ও বিশ্ব রামনামে ভাসছে। প্রতিটি ভক্তের মনে আজ সীমাহীন আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, অযোধ্যা এবার আধ্যাত্মবাদ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগলযাত্রার সাক্ষী থাকবে। তার কথায়, ‘ধর্মধ্বজা’ বারবার মনে করিয়ে দেবে-প্রাণ যায়, বচন না যায়, আর সমাজ গরিবের পাশে দাঁড়াবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর ২২ জানুয়ারী অযোধ্যায় রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হলেও তখনও মন্দির সম্পূর্ণ হয়নি। প্রায় দুই বছর ধরে নিরন্তর কাজ চলেছে। এখন পুরো নির্মাণ শেষ হওয়ার পর ধর্মধ্বজা উত্তোলন করা হয়েছে। পুরোহিতরা এই ধ্বজারোহণকে দ্বিতীয় প্রাণপ্রতিষ্ঠা বলেও উল্লেখ করেছেন। ধ্বজা উত্তোলনের পর মন্দিরের ৪৪ টি দরজা ধর্মীয় আচারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
রাম ও সীতার বিবাহের প্রতীক তিথি, বিবাহ পঞ্চমীর বিশেষ মুহূর্তে রাম জন্মভূমি তথা রামমন্দিরের ১৯১ ফুট উঁচু শিখরে উড়ল গেরুয়া ধ্বজা। সরাসরি গণমাধ্যমে সাক্ষী থাকলেন দেশের কোটি কোটি কোটি মানুষ। ২০২৪ লোকসভা ভোটের ঠিক আগে অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। পঞ্চপ্রদীপে রামলালার আরতি এবং প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শঙ্খ-ঘন্টাধ্বনিতে মুখরিত হয়েছিল গোটা অযোধ্যা।এবার ২০২৫ সালে ২৫ নভেম্বর রামমন্দিরের ধ্বজা উত্তোলন করলেন। এর আগে অযোধ্যায় একটি রোডশো করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এরপর প্রার্থনা করেন সপ্তমন্দির এবং শেষাবতার মন্দিরে। পুজো দেন মা অন্নপূর্ণা মন্দিরেও। এই ধ্বজা উত্তোলনের মাধ্যমে শেষ হলো রামমন্দিরের অভিষেক অনুষ্ঠানের। জানা গেছে, আগামীকাল সরযু নদীর তীরে বিশেষ আরতি হবে ধ্বজা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে।
এদিকে, মঙ্গলবার অযোধ্যায় ঐতিহাসিক রামমন্দিরের শিখরে গেরুয়া ধ্বজা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে, জাতীয় রাজনীতিও ফের সরগরম হয়ে উঠেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অনেকেই বলতে শুরু করেছেন যে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতকে ক্রমশ হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এটা ঠিক যে, অযোধ্যার রামমন্দিরের মতো ধর্মীয় স্থান নির্মাণ এবং অন্যান্য ধর্মীয়াও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আজ অযোধ্যার রাম মন্দিরে ‘ধর্মধ্বজা’ উত্তোলনকে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনে আরও এককদম এগিয়ে যাওয়া বলে মনে করা হচ্ছে।