হঠাৎ মন্ত্রীর আস্ফালন!!

রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় জোট সরকারের এক মন্ত্রী সম্প্রতি আবোলতাবোল বকতে শুরু করেছেন। ইদানিং তিনি রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমেকে নিশানা করেছেন। তার নিশানায় যে শুধু সংবাদ মাধ্যম, তা কিন্তু নয়। তার নিশানায় খোদ বিজেপি দল, অর্থাৎ তিনি যে দলের বিধায়ক। এমনকী বিরোধী দল থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছুই তাঁর নিশানায়। তিনি বিজেপি নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় জোট সরকারের ‘হঠাৎ’ মন্ত্রী কিশোর বর্মণ।তাকে হঠাৎ মন্ত্রী বলার পিছনে কারণ হলো, তার মন্ত্রীপদ পাওয়াটা অনেকটা’মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো’।বলা যায় একেবারেরই অপ্রত্যাশিত। যদিও তার এই হঠাৎ মন্ত্রিত্ব লাভের পিছনে, অন্য কাহিনি আছে।কি সেই কাহিনি?সেটা সংবাদ মাধ্যমে জানে।কিন্তু সংবাদ মাধ্যমর সৌজন্যবোধ, নৈতিকতা আছে বলেই, কারোর ব্যক্তিগত বিষয় জনসমক্ষে তুলে ধরেনি। সেই অর্থে কিশোরবাবু খুবই ভাগ্যবান বলে নিজেকে দাবি করতে পারেন।
তিনি মন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন খুব বেশিদিন হয়নি।গত জুলাই মাসের তিন তারিখ তিনি শপথ নিয়েছেন রাজভবনে। কিন্তু তার সেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান অনেকেই বয়কট করেছেন। খোদ দলের মন্ত্রী, একাধিক বিধায়ক, শরীক দলের মন্ত্রী, বিধায়করা অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন। এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশ হয়েছে। কেননা, কিশোর বাবুর হঠাৎ মন্ত্রিত্ব পাওয়ার বিষয়টি যে দলের অনেকেই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি, সেটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। অন্তত যারা রাজ্য রাজনীতির হাঁড়ির খবর রাখেন, তাদের কাছে বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট। দলীয় অনুশাসনের কারণে কেউ প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও, তাদের বুকের ভিতরে চেপে বসে থাকা যন্ত্রণাটা ভালোভাবেই অনুভব করতে পারে এই রাজ্যের সংবাদমাধ্যম। কেননা, এই রাজ্যের রাজনীতিতে, এমনকী ২০১৮ সরকার পরিবর্তনের লড়াইয়ে, কিশোরবাবুর বিন্দুমাত্রও কোনও ভূমিকা ছিলো না। বিজেপির সুখের সংসারে ২০২৩ সালের কিছু আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। তাছাড়া তিনি বিশাল বড় কোন সংগঠক বা বিশাল বড় কোনও সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী বলেও, দলের অন্দরে এমন কানাঘুসো কোনদিন শোনা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই তার আচমকা মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিয়ে দলের অন্তরেই চাপা ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল তার শপথ গ্রহণে। বিস্মিত হয়েছিলো রাজ্যবাসী।
সেই কিশোর বাবু মন্ত্রী হয়ে এখন রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমকে টার্গেট করেছেন। মন্ত্রী হয়েছেন এখনও দু’মাস অতিক্রান্ত হয়নি। আগামীকাল দু’মাস পূর্ণ হবে। এর মধ্যেই কিশোরবাবু রাজ্যের মিডিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করে দিয়েছেন। রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমকে তিনি ‘শত্রু’ হিসাবে আখ্যায়িত করছেন। সংবাদ মাধ্যম থেকে সকলকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়ে জ্ঞান বিতরণ করেছেন। সাংবাদিকদের নিমন্ত্রণ করে ডেকে নিয়ে অপমান করে দিচ্ছেন। তার এই অহংকারী ভূমিকা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যজুড়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ মন্ত্রিত্ব পেয়ে কিশোরবাবু কি হাতির পাঁচ পা-নাকি সাপের পাঁচ পা দেখে ফেলেছেন? প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ মন্ত্রিত্ব পাওয়ার কারণেই কি তার অহংকার এবং ঔদ্ধত্য এতটা উঁচুতে উঠে গেছে যে সেখান থেকে আর নামতে পারছেন না? নতুবা যে সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকরা তাকে ত্রিপুরার পরিচিত দিয়েছে, নলছড়ে তার জয়ের পথকে সুগম করে দিয়েছে, নলছড়ের অখ্যাত এক যুবককে রাজ্যরাজনীতির অঙ্গনে নেতা হিসাবে তুলে ধরেছে- সেই সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের ‘শত্রু’ মনে করেন কিশোরবাবু! আপনার এই মানসিকতা দেখে আমাদের ভীষণভাবে লজ্জা লাগছে। আপনার আমাদের লজ্জাবোধ হচ্ছে। আপনি যে মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তার জন্য আপনাকে ধিক্কার’ জানানো ছাড়া আমাদের আর কোনও বিকল্প নেই। এর জন্য আমরা দুঃখিত। তবে এটুকু অবশ্যই বলবো, ‘এক মাঘে শীত যায় না’ সমাজের এই বাস্তব সত্যটি সম্পর্কে আপনি বোধহয় নিশ্চয়ই অবগত আছেন। আরেকটি কথা, আপনার এই বক্তব্যে সংবাদমাধ্যমের কিছু যায় আসে না। সংবাদমাধ্যমে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভহিসাবে নির্ভীকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে।সবশেষে, আপনি যে আপনাকে চিনিয়েছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।