August 1, 2025

স্মৃতি উসকে ধাক্কা!!

 স্মৃতি উসকে ধাক্কা!!

১৯৭৫ সালের ২৫ শে জুন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলো।প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই জরুরি অবস্থার কারণে দেশের নাগরিকদের সমস্ত ধরনের অধিকার স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। এই জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে যে প্রবল সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠেছিল, তাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইন্দিরা। তাকে কারান্তরালে যেতে হয়েছিল।
১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থা, যা ভারতের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে পরিচিত, সেই ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এখন থেকে প্রতিবছর ২৫ জুন দিনটিকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন হয়েই গত বছর মোদি সরকার ২৫ জুনকে সংবিধান হত্যা দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছিলে। এবছর জরুরি অবস্থা জারির ৫০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে।খুব স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার এই দিনটিকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রচারের আলোয় এনে সারা দেশে সংবিধান হত্যা দিবস পালন করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্র রাজ্যগুলোকে ২৫ জুন সংবিধান হত্যা দিবস পালন করতে নির্দেশিকাও পাঠিয়েছে। মোদি-অমিত শাহরা গত বছরই ঘোষণা করেছিলেন, যখন সংবিধানকে হত্যা করা হয়েছিল তখন কী হয়েছিল, সেটাই মনে করিয়ে দিতে প্রতিবছর এই কর্মসূচি পালন করা হবে। জরুরি অবস্থার সময় যারা এই যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন তাদের প্রতিও সম্মান জানানো হবে এই দিনে। দেশে জরুরি অবস্থা জারির কারণে যে লাখ লাখ মানুষকে বিনা অপরাধে জেলে পুরে দেওয়া হয়েছিল, প্রতিবাদী সমস্ত কণ্ঠকে যেভাবে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সংবাদ মাধ্যমকে যেভাবে স্তব্দ করা হয়েছিল- সেই দিনগুলো যেন আর কোনদিন ফিরেনা আসে সেকথা মনে করিয়ে দিতেই এই কর্মসূচির লক্ষ্য বলে বিজেপি জানিয়েছে। কোন সরকার বা ক্ষমতাসীন দল প্রতিপক্ষের অনৈতিক কাজকর্ম বা জনবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ করতে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করতেই পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের এই কর্মসূচির পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী সেটা নিয়েই গোটা দেশজুড়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা।জল্পনার আরও কারণ হলো, বিজেপি গত ১১ বছরের বেশি সময় ধরে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন।কিন্ত মাত্র গত বছরই বিজেপির মাথায় জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে নেপথ্য কারণটা কী?কেন
বিজেপি এতদিন ধরে জরুরি অবস্থা নিয়ে তৎপর হতে পারেনি? আসলে ইন্দিরা গান্ধী যখন ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি করেন, তখন বিজেপির জন্ম হয়নি।বিজেপির জন্মসাল হল ১৯৮০ সাল।অর্থাৎ জরুরি অবস্থা জারির প্রায় ৫ বছর পর বিজেপির প্রতিষ্ঠা। তার আগে অবশ্য জনতা দলের জন্ম হয় ১৯৭৭ সালে,যারা মূলতঃ কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতৃত্ব, ইন্দিরা-বিরোধী গোষ্ঠী, উপগোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তারাই কংগ্রেস ছেড়ে এবং অন্যান্য দল ছেড়ে জনতা দলের জন্ম দেন। সময়ের হাত ধরে এই জনতা দলই বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা হয়ে আজ নতুন নতুন নাম নিয়ে অ-কংগ্রেসি বিভিন্ন বিরোধী দলের জন্ম দিয়েছে, যারা বর্তমানে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সদস্য। ঘটনা হলো, গত লোকসভা নির্বাচনে চারশো পার স্লোগান তুলে ২৪০-এর মধ্যেই আটকে পড়েছিল পাম শিবির। পক্ষান্তরে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলো বিগত তিনটি লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় গতবারই অধিক সংখ্যক আসন নিয়ে নিজেদের শক্তি ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত লোকসভা নির্বাচন থেকেই বিরোধীরা একসুরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘গণতন্ত্র বিরোধী’ তকমা দিয়ে মোদির শাসনে সংবিধানকে অচল করে রাখার অভিযোগ তোলা হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান বিরোধীদের উত্থাপিত এই অভিযোগ অকার্যকর করে উল্টো কংগ্রেসের শাসনামলের জরুরি অবস্থার স্মৃতিকে উসকে দিয়ে শক্তিবৃদ্ধি করা বিরোধীদেরকে দুর্বল করতেই ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ এর এই রণকৌশল বেছে নিয়েছে বিজেপি। এতে করে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ঐক্যকে ভেঙে দিয়ে তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার যে কৌশল মোদি শাহরা নিয়েছেন তা আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হয় সেটা আগামী দিনেই স্পষ্ট হবে। আপাতত কেন্দ্রের ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ কর্মসূচির বিরুদ্ধে উদ্ধব ঠাকরে, শারদ পাওয়ার, মমতা ব্যানার্জিরা যে অনেকটাই এককাট্টা সেটা কিন্তু পরিষ্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *